সিংড়ার হুমায়ন রাশিয়ায় ড্রোন হামলায় নিহত

 

নাটোর অফিস॥

সংসারে সচ্ছলতা আর সন্তানদের ভবিষ্যতের আশায় রাশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন নাটোরের সিংড়ার হুমায়ুন কবির ও তার দুলাভাই রহমত আলী। কিন্তু সেখানে চাকরির নামে অংশ নিতে হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে। এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন হুমায়ুন কবির। আর দুলাভাই রহমত আলীও ফিরতে চান দেশে। এদিকে একমাত্র ছেলের মৃত্যু আর জামাইকে ফিরে পেতে অসহায় এক মায়ের করুন আকুতি। ছেলে আর জামাইয়ের ছবি হাতে করে কেঁদেই চলেছেন কারীমুন বেগম । এরই মধ্যে শুকিয়ে গেছে চোখের পানি। তার এ চাঁপা কান্নার শেষ কোথায় তা কেউ জানেনা।

পরিবার সুত্রে জানা গেছে, আড়াই লাখ টাকা বেতন পাবেন প্রতিমাসে দালালদের এমন প্রলোভনে সংসারের স্বচ্ছলতার আশায় জমি জমা স্ত্রীর গহনা বিক্রি এবং উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে গত বছরের ২৮ অক্টোবর ড্রিম হোম ট্রাভেল এন্ড টুরস লিমিটেড নামের ঢাকার একটি কোম্পানির মাধ্যমে তারা পাড়ি জমিয়েছিলেন রাশিয়ায়। সেখানে যাবার পর তাদেরকে জোর করে বাধ্য করা হয় রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে চলা যুদ্ধে অংশ নিতে। তিন মাসের মাথায় স্বপ্ন ভঙ্গের খবর আসে নির্মমভাবে। ২৬ জানুয়ারি ড্রোন হামলায় মৃত্যু হয় হুমায়ুন কবিরের।

স্বামীকে হারিয়ে এক বছরের মেয়ে প্রীতিকে নিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে হুমায়ুনের স্ত্রী তারা বেগম। তিনি বলেন, ‘স্বামীকে হারিয়ে আমরা একবার নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার স্বামী স্বর্ণ বিক্রি করে, টাকা পয়সা গুছিয়ে বিদেশ গেল অনেক স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু কোন স্বপ্ন পূরণ হলোনা। সাথে আমার ননদের জামাইও গিয়েছে , বাঁচার জন্য বারবার ফোন করে আকুতি করছেন। কিন্তু আমরা দালালদের বললে তারা শুধু আশ্বাসে দিচ্ছেন, কোন ব্যবস্থা করছেন না। আমি সরকারের কাছে দাবি করছি আমার স্বামীর লাশ দ্রুত ফিরিয়ে আনা এবং ননদের জামাইকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হোক।

রহমত আলীর স্ত্রী বলেন, হাসান নামে এক দালালের মাধ্যমে সাইপ্রাস যাওয়ার কথা হয় আমার স্বামী এবং ভাইয়ের। কিন্তু তিনি সাইপ্রাসের ভিসা না দিয়ে বলেছেন রাশিয়া নিয়ে যাবেন। এর জন্য সৌদি আরবে গিয়ে দুই মাস থাকতে হবে, ওমরা করতে হবে। সেখান থেকে তাদের রাশিয়ার ভিসা দিবেন। আড়াই লক্ষ টাকার বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া পৌঁছানোর পর সেখানকার দালাল তাদেরকে বিক্রি করে দেয়। এরপর সেখানে ট্রেনিং করিয়ে জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে যুদ্ধে আমার একমাত্র ভাই মারা গেছে। আমার স্বামীর হাতের উপরেই মারা গেছে। আমার স্বামী ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করে বলে আমাকে বাঁচাও। আমরা এখন কি করব? কার কাছে বলবো কিছু বুঝতে পারছি না।

২৬ জানুয়ারি রাতে ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে পাঁচ দিন ধরে শুধু বিলাপ করে যাচ্ছেন হুমায়ুন কবিরের মা কারিমুন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে তো মারাই গেছে, এখন জামাইটা যেন ফিরে আসে। ছেলেদের লাশটা যেন দেশে ফিরে আসে সরকারের কাছে সেই দাবি জানাই। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এর ক্ষতিপূরণ চাই।

হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের সহ-সভাপতি শাকিল আহম্মেদ তপু‌ বলেন, ঘটনাটি জানার পর থেকেই আমরা পরিবারটির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি এবং তাদের পাশে রয়েছি। দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ এবং হুমায়ুন কবিরের মরদেহ এবং রহমত আলীকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি করছি।

এবিষয়ে কথা বলতে স্থানীয় দালালদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের মোবাইল নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। আর ঢাকার ড্রিম হোম ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস লিমিটেড কোম্পানিতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এক গণমাধ্যম কর্মীর কাছ থেকে আমি জেনেছি। তবে ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ এখন পর্যন্ত আমাকে মৌখিক বা লিখিতভাবে জানায়নি। তারা বিষয়টি জানালে আসল ঘটনাটা বুঝতে পারব।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *