যাত্রী রেখে ট্রেন চলে যাওয়ার অভিযোগ॥ স্টেশন মাস্টার অবরুদ্ধ

নাটোর অফিস ॥
খুলনাতে এক আত্মীয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য পরিবারের ১৪ সদস্যের সাথে নাটোর স্টেশন প্লাটফরমে সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আসাদুজ্জামান। বুধবার রাতে তারা সকলেই এসেছেন রাজশাহী থেকে। সবাই খুলনায় যাবেন বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সবার জন্য টিকিট কেটে নাটোর রেল স্টেশনের ২ নং প্লাট ফরমে কনকনে শীতের মধ্যে জুবুথুবু হয়ে বসে সময় কাটাচ্ছিলেন সবাই। আরো অনেক যাত্রিও প্লাটফরমে সীমান্ত ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময় কুয়াশা আচ্ছন্ন ছিল। ট্রেনের নির্ধারিত সময় ছিল রাত্রি ১১ টা ৩০ মিনিটে। প্রায় ২৯ মিনিট দেরীতেই অথাৎ ১১টা ৫৯ মিনিটের দিকে ট্রেনটি নাটোর স্টেশনে আসে। কিন্তু ট্রেনটি প্লাটফরমে প্রবেশের পর পরই সামান্য সময় প্রায় ১ মিনিট কাল থেমেই টানতে শুরু করে। এসময় হুড়োহুড়ি করে করে ট্রেনে উঠতে গিয়ে অনেকেই হোঁচট খেয়ে প্লাটফরমের ওপর পরে যান। অনেক যাত্রি তাাদের নির্ধারিত বগি (কম্পার্টমেন্ট) খুজতে গিয়ে ট্রেনে উঠতে পারেননি। ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ের আগেই স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ায় প্রায় অর্ধশত যাত্রি ট্রেনে উঠতে পারেননি। এত ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন ট্রেনে উঠতে না পারা যাত্রিরা। এসময় বিক্ষুব্ধ যাত্রিরা নাটোর স্টেশন মাষ্টারকে অবরুদ্ধ করে। পরে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
যাত্রিদের অভিযোগ চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি নাটোর স্টেশনের ২ নং প্লাটফরমে প্রবেশ করার পর পরই ছেড়ে দেয়। ১ মিনিটের মত সময় নিয়ে ট্রেনটি প্লাটফরম থেকে ছেড়ে যায়। এতে করে প্রায় অর্ধশত যাত্রি ট্রেনে উঠতে পারেননি। অনেকে তাড়াহুড়া করতে নামতে গিয়ে প্লাটফরমের ওপর পড়ে আহত হয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলয়ে স্টেশনের এক কর্মচারী জানান, কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল প্লাফরম এলাকা। ট্রেনটিতে ভির ছিল খুব। খুলনায় পরীক্ষা দিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ভির ছিল । নাটোর স্টেশনে যাত্রিও ছিল কয়েকগুন। কুয়াশার কারনে অনেকেই তাদের নির্ধারিত কর্ম্পমেন্ট খুজতে গিয়ে সময় অতিবাহিত করায় ট্রেন ছেড়ে দেয়ায় তারা উঠতে পারেনি।
যাত্রি আসাদুজ্জামান বলেন, স্বল্প সময় দাঁড়ানোর কারনে তিনি ও পরিবারের ১৪ সদস্য ট্রেনে উঠতে পারেননি। ২ নং প্লাটফর্মে সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢুকতেই আবার ছেড়ে চলে যায়। বিষয়টি স্টেশন মাস্টারকে এসে জানালে তিনি কোন ব্যবস্থা না করে উল্টা-পাল্টা কথা বলেন।
সোহরাব হোসেন নামে অপর এক যাত্রী বলেন, সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রায় এক ঘন্টা দেরীতে নাটোর স্টেশনে আসে । নাটোর স্টেশনে ১১ টা ৫৯ মিনিটের দিকে ঢুকে ১ মিনিটেরও কম সময় দাঁড়িয়েই চলে যায়। এতে আমি সহ অনেক যাত্রী উঠতে ব্যর্থ হই। দুইজন যাত্রী ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে নামতে গিয়ে আহত হন। অনেক যাত্রী নামতেই পারেননি।
অপর আরো যাত্রি বলেন, ট্রেনের তো স্টেশনে নির্ধারিত সময় থেমে থাকার কথা। কিন্তু না দাঁড়িয়ে কেন চলে গেল? অনেক যাত্রি খুলনাতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। তাদের অনেকেই যেতে পারেননি। তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে এবং এর দায়টা কার? স্টেশন মাস্টারকে এ ব্যাপারে জানানোর পরও তিনি কোন জবাব দেননি।
নাটোর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শামীম হোসেন বলেন, সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত থেমে ছিল এবং যাত্রি নিয়ে চলে যায়। এই রুটে বিকল্প কোন গাড়ি নেই, যে তাদেরকে তুলে দেবো। কন্ট্রোল রুম কে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গাড়ি ছেডড়ে আসলে আমি লাইন ক্লিয়ার দিয়ে দেই। প্যাসেঞ্জার ক্লিয়ারেন্স গার্ডের দেখার বিষয় । সেটা হয়ত গার্ড দেখেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *