ভাতুরিয়া গ্রামের গাঁওয়ালী শিরনি উৎসব

নাটোর অফিস ॥
নাটোরের ভাতুরিয়া গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী গাঁওয়ালী শিরনি উৎসব। সোমবার সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের ভাতুরিয়া গ্রামে দিনব্যাপী প্রায় দুশ বছরের ঐতিহ্যবাহি এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দের সহযোগীতায় এই শিরনি উৎসবে অংশ নেন ২৬ সমাজের ৪৬০টি পরিবারের প্রায় ১৭শ মানুষ। উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিএনপির কেন্দ্রিয় সদস্য সাবে মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। দুলু বলেন, গত সরকারের আমলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যগুলো হারিয়ে যেতে বসেছিলো। আমরা সেই ঐতিহ্য কে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।নিজেদের মধ্যে দলাদলির কারনে বেশ কয়েক বছর এই ভাতুরিয়া গ্রামের এই গাঁওয়ালী শিরনী উৎসব বন্ধছিল। সমাজে সবাই সমান ভাবে বাচতে পারবে। যার যার ধর্ম সে সে সঠিক ভাবে পালন করতে পারবে। এসময় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু,সাবেক সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ,সাবেক যুগ্ন আহবায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন,সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
এদিকে এই গাঁওয়ালী শিরনি অনুষ্ঠানকে ঘিরে দূর-দূরান্ত থেকে জামাই-মেয়ে-নাতি-নাতনীসহ স্বজনরা গ্রামে আসেন। গাঁওয়ালী শিরনিকে কেন্দ্র করে ভোজনের আয়োজন করা হয়। সোমবার ফজরের নামাজের পর থেকে দিনভর চলে এই আয়োজন।
গ্রামবাসীরা জানান, পরিবারের সদস্য ও আগত আত্মীয়দের সংখ্যা ভেদে ৮ থেকে ১০টি পর্যন্ত ভোজের ভাগ দেন পরিবার প্রধান। কেউ চাল কেউবা টাকা দিয়ে ঐতিহ্যবাহি গ্রামীণ এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকেন। সমাজের সব টাকা ও চাল উত্তোলন শেষে একই দিনে আয়োজন করা হয়েছে গাঁওয়ালী শিরনি উৎসব।
আব্দুস সালাম জানান, প্রতিটি সমাজে একই দিনে এই শিরনি জন্য ভাগপ্রতি ২শ থেকে ৫শ গ্রাম চাল দিয়ে উৎসবে অংশ নেন গ্রামের মানুষ।
দিঘাপতিয়া পিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম আনোয়ার জানান, প্রবীণদের থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়,প্রায় দুশ বছর আগ থেকে অদ্যবধি গ্রামবাসী প্রতিবছর দুইবার এই উৎসব পালন করেন। প্রতি শীতকালে ঝাল এবং আষাঢ় মাসে মিষ্টি শিরনি বানিয়ে উৎসবের আয়োজন করা হয়।
জাহাঙ্গীর ও ইমতিয়াজ জানান, এই উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ভাতৃত্বের বন্ধন। উৎসবে আগত আত্মীয় আর বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করা হয়। উৎসবকে কেন্দ্র করে বসেছে নানা খাবার সহ খেলনা সামগ্রীর দোকান। গাঁওয়ালী এই শিরনি উৎসবে ঈদের মত আনন্দ হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) নাদিম মাহমুদ জানান, কথিত আছে, প্রায় ২শ বছর আগে এই গ্রামে ডায়রিয়া-কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। অনেক মানুষ মারা যান। এরপর আতাব্দি ফকির নামে এক আলেম এই শিরনি করার পরামর্শ দেন। সেই উৎসবে গ্রামবাসীরা ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে ওঠেন। কিছুদিন পর একইভাবে গবাদী পশুও আক্রান্ত হলে একই ভাবে খিরশিরনী উৎসব পালন করা হয়। এরপর ওই প্রাদুর্ভাব থেকেও রক্ষা পায় গ্রাম।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও দিঘাপতিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভাতুরিয়া গ্রামের দেখাদেখি এখন আশেপাশের গ্রামগুলোতেও অনুরুপ গাঁওয়ালী শিরনির আয়োজন করা হয়। এই উৎসবে অংশ নিয়ে আজ গ্রামবাসীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। তার আগমনে এই শিরনি উৎসব আলাদা মাত্রা পায়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *