নাটোর অফিস ॥
আগামি ১ জানুয়ারী থেকে গরীবের আন্ত:নগর ট্রেন খ্যাত উত্তরা এ´প্রেক্স ট্রেন চালু করার দাবী জানিয়েছেন নাটোরের সর্বস্তরের মানুষ। অন্যথায় সকল পেশাজীবি, আলেম-ওলামাসহ এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামি সকল আন্ত:নগর এক্সপ্রেক্স ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়ার হুঁশিয়ারী করেছেন। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে নাটোরের নলডাঙ্গারহাট রেলওয়ে ষ্টেশন প্লাটফর্মে “নলডাঙ্গা উন্নয়ন ফোরামের” ব্যানারে এলাকাবাসীর আয়োজনে মানববন্ধন ও সমাবেশে সরকারের কাছে এমন হুশিয়ারী সহ আল্টিমেটাম দেন বক্তারা। এছাড়া উত্তরা এ´প্রেক্স ট্রেন চালু না হওয়া পর্যন্ত এই দাবীতে নলডাঙ্গা উপজেলার ৪টি স্টেশনসহ সকল রেলওয়ে ষ্টেশনে পর্যায়ক্রমে মানববন্ধন কর্মসুচী পালন করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। ইতিপুর্বে ট্রেনটি চিলাগাটি থেকে রাজশাহীর মধ্যে চলাচল করতো।
মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের জেলা কমিটির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক, নলডাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি নাছির উদ্দিন খাঁন, নিরাপদ সড়ক চাই নলডাঙ্গা শাখার সভাপতি লতিফুর রহমান, নলডাঙ্গা উন্নয়ন ফোরামের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক সেনা সদস্য মুনছুুুর রহমান প্রমুখ। বক্তারা বলেন, উত্তরাঞ্চল থেকে বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে চলাচলের সহজ মাধ্যম হচ্ছে উত্তরা এক্সপ্রেক্স ট্রেন। এই ট্রেনে গরীব-দুঃখী, মেহনতি মানুষ, স্বল্প আয়ের মানুষ,কলেজ-বিশ্ববিদালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ খুব সহজে এবং স্বল্প খরচে মালামালসহ চিলাহাটি থেকে রাজশাহী পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতেন। অথচ এই ট্রেনটি অযৌক্তিক কারণে চলাচল বন্ধ হওয়ায় মানুষের ভোগান্তিসহ অনেক রেলওয়ে ষ্টেশন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ষ্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তারা বেকার সময় কাটাচ্ছেন এবং ষ্টেশন কেন্দ্রিক শত শত কুলি-শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে পড়ছেন। এছাড়া উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ ব্যবসা বানিজ্য অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে পুনরায় উত্তর্এাক্সপ্রেক্স ট্রেনটি চালু করা প্রয়োজন। বক্তার বলেন, অর্ন্তবর্তীকালিন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও রেল উপদেষ্টার কাছে আমাদে দাবী আগামি ১ জানুয়ারী থেকে পুনরায় উত্তরা এক্সপ্রেক্স ট্রেনটি চালু করতে হবে। অন্যথায় উত্তারাঞ্চলের মানুষ বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উত্তরা এক্সপ্রেক্স ট্রেনটি এক সময় জনসাধারনের চলাচলের সহজ মাধ্যম ছিল এবং সরকারের লাভজনক পরিবহন খাত হিসাবে পরিচিত ছিল। উত্তরাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চল এবং রাজশাহী থেকে উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের কাঁচা মাল, শাক-সবজি, চাল, চিনি,গুড়সহ নিত্যপণ্য সহজেই আনা নেয়া করা সম্ভব হতো এবং পরিবহন খরচও কম হতো। তাদের অভিযোগ, কিছু রেলওয়ের দু:স্কৃতিকারী ও অসৎ কর্মকর্তা এবং বিশেষ সিন্ডিকেটের কারনে ট্রেনটি অলাভজনক খাতে পরিনত হয়। ফলে ট্রেনটির চলাচল বন্ধ করে দেয় সরকার। ফলে রাজশাহী থেকে উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ ষ্টেশন অকেজো হয়ে পড়েছে। ষ্টেশন ভবনসহ যন্ত্রাংশ মচওে পড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন রেলের জমিগুলো বেদখল হয়ে যাচ্ছে এবং সেসব স্থানে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। তাদের দাবী সুষ্ঠ পরিকল্পনা, সততা, সঠিক ব্যবস্থাপনায় উত্তরা এক্সপ্রেক্স ট্রেনটি চালু করা গেলে পুনরায় এই ট্রেনটি স্বগৌরবে ফিরে আসবে। সরকারের রাজস্ব আয়, কর্মসংস্থান বহাল থাকাসহ জনসাধারনের ভোগান্তি লাঘব হবে। এছাড়া সরকারী সম্পত্তিও রক্ষা পাবে। বিষয়টি বর্তমান সরকারের বিবেচনায় নেয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল জোনের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার উত্তরা এক্সপ্রেক্স ট্রেন চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ট্রেনটি নিরাপত্তা ও জনবলের অভাবে সরকারের সিদ্ধান্তে বন্ধ রাখা হয়েছে। পুনরায় ট্রেনটি চালু করার জন্য একাধিকবার মিটিং করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।