নাটোর অফিস।।
নাটোরের লালপুরে পদ্মার চরে দু’দফা বন্যায় নষ্ট হয়েছে চরের জমিতে রোপণকৃত আাগাম শীতকালীন সবজি, মাসকালাই ও আখ। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর জেগে উঠেছে পলিমাটি মিশ্রিত উর্বর আবাদি জমি। চরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছে। তারা চরের ওই সব জমিতে নতুন করে শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে রাতদিন মাঠে কাজ করছেন তারা। সেখানে চাষ হচ্ছে পেঁয়াজ-রসুন, গম, ভুট্টা, মসুর, মটরশুঁটি, রসুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, টমেটো ও শিমসহ নানা ধরনের শাকসবজি। এতে বেড়েছে কর্মসংস্থান। এসব ফসল ঘরে উঠলে হবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন।
জানাগেছে, পদ্মা নদীর চরের প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর বিস্তীর্ণ জমিতে নানা ফসল আবাদ করেন স্থানীয় কৃষকরা। প্রতি মৌসুমে চাষীরা পদ্মার চরে আগাম শীতকালীন ফসল আবাদ করে বাড়তি আয় করে থাকেন। এবার ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট দু’দফা বন্যার পানিতে পদ্মা চরে লাগানো আগাম শীতকালীন সবজিসহ মাসকালাই ও আখের জমি পানিতে তলিয়ে যায়। এতে চরের ৫০৬ হেক্টর জমির আাগাম শীতকালীন সবজি, মাসকালাই ও আখ নষ্ট হয়। এতে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়ে চরের কৃষকরা।
সরেজমিনে চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, ইতিমধ্যে পানি কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা পঁচে যাওয়া ফসল জমি থেকে উঠিয়ে ফেলে দিয়ে জমি আবাদ উপযোগী করে নতুন করে সবজি চাষ শুরু করেছেন। কয়েকদিনের মধ্যে পুরো চর সবুজ ফসলে ভরে উঠবে। তারা এখন আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। কাক ডাকা ভোর থেকে জমি চাষ, বীজ বপন, সেচ ও ফসল পরিচর্যায় মহা ব্যস্ত সময় পর করছেন চরের কৃষকরা। যেন দম ফেলার ফুরসত টুকু নেই তাদের ।
বিলমাড়িয়া চরের কৃষক কাহার সিদ্দিকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন দু’দফা বন্যায় চরে চাষ করা তার আগাম সবজি মূলা, লালশাক ও ফুলকপি নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তার ভাষ্য, পানি নেমে যাওয়ার পরে আবারো চার বিঘা জমিতে ফুলকপি ও দুই বিঘা গাজরের চাষ করেছেন তিনি। আর কিছুদিনে মধ্যে এইসব সবজি বাজারে উঠতে শুরু করবে। প্রতি বিঘা ফুলকপি চাষের জন্য তার ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর গাজর চাষে খরচ হচ্ছে বিঘা প্রতি ৫০-৫৫ হাজার টাকা। তিনি আরো বলেন, বাজারদর ভালো থাকলে বিঘা প্রতি দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ফুলকপি বিক্রয়ের আশা করছে তিনি। এতে বন্যার ক্ষতি কিছু টা পুষিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কৃষক।
চরের কৃষক মাহাবুবুর রহমান জুয়েলের ভাষ্য, বন্যায় আগাম চাষ করা বেগুন, গাজর, মূল ও ফুলকপি নষ্টে হয়ে গেছে। এতে প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে তার। পানি নেমে যাওয়ার পরে নতুন করে চরে পেয়াজ, গাজর, ও ফুলকপির চাষ করেছেন তিনি। এবার দু’বিঘা জমিতে আগাম পেয়াজ চাষ করেছেন। আর কিছু দিনের মধ্যেই জমি থেকে পেয়াজ তোলা শুরু হবে। এবার প্রতি বিঘা পেয়াজে খরচ হচ্ছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আশা করা যাচ্ছে প্রতি বিঘায় ৫০-৬০ মন পেয়াজ হবে। বাজার দর ভালো থাকলে বিঘা প্রতি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার পেয়াজ বিক্রয় হবে। তবে এবার সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় সবজি চাষে খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চরের মূলা চাসী ফারুক আলী জানান, চরে তার ৬ বিঘা জমিতে আগাম মূলা ছিলো। বন্যার আগে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দামও বলেছিলো। কিন্তু বন্যার পানি উঠায় আর বিক্রয় করা যায় নি। এখন আবার শ্রমিক নিয়ে নষ্ট মূলা জমি থেকে পরিষ্কার করে সবজি চাষের জন্য প্রস্তুুত করা হচ্ছে। বন্যায় তার ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। পদ্মা চরের ক্ষতিগ্রস্থ ও সুবিধা বঞ্ছিত কৃষকরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারী প্রণোদনার দাবি করেছেন।
লালপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ বলেছে, এবার বন্যায় চরাঞ্চলের ৫০৬ হেক্টর জমির সবজিসহ বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় ২ কেটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। নতুন করে আবারো চরাঞ্চলের ১২৪ হেক্টর জমিতে কৃষকরা সবজি চাষ শুরু করেছে। যা থেকে প্রায় ২ হাজার ৫৬০ মেট্রিকটন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। চরের উৎপাদিত সবজি লালপুরের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রয় করা হয়।
লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা নতুন করে চরে সবজি চাষ শুরু করেছেন। লালপুরের সবজির চাহিদা বেশিরভাগই আস চর থেকে। এবার চরাঞ্চলের ১২৪ হেক্টর জমিতে কৃষকরা সবজি চাষ শুরু করেছে। যা থেকে প্রায় ২ হাজার ৫৬০ মেট্রিকটন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে চরের চাষীদের সহযোগীতার পাশাপাশি সার্বক্ষনিক তদারকি করা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।