নাটোর অফিস।।
পদ্মানদী বিধৌত নাটোরের লালপুর উপজেলায় এই পথম বাণিজ্যিক ভাবে গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে বস্তা পদ্ধতিতে মসলা জাতীয় ফসল আদার চাষ শুরু হয়েছে। খরচ কম হওয়ায় অনাবাদি পতিত জমি ও বসত বাড়ির আঙ্গিনায় স্বল্প পরিচর্যাতে বস্তায় আদা চাষ করে ফলন বেশি হওয়ায় এই পদ্ধতিতে আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছে লালপুরের কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় লালুপরে আদার বাম্পা ফলন হয়েছে। বস্তা পদ্ধতিতে উৎপাদিত আদা প্রায় ২৫ লাখ টাকা বিক্রয়ের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে উপজেলার দুড়দুয়িরা ইউনিয়নের আট্রিকা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আম ও মেহগুনি বাগানের মধ্যে সারি সারি বস্তায় সবুজ আদার গাছে ভরে আছে। প্রথম বস্তা পদ্ধতিতে আদার চাষ করেছেন এই গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম। সাইফুল ইসলাম বলেন, বাগানে ছায়ার কারনে অন্য কোন ফসল হয় না। এবার কৃষি অফিসের পরামর্শে ১ হাজার ৪৫০টি বস্তায় আদার চাষ শুর করেন তিনি। বস্তা প্রতি মাটি, জৈব ও রাসায়নিক সার ও আদার বীজসহ প্রায় ৬৫-৭০ টাকা খরচ হয়েছে। মোট খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। মইশাল, বারি-২, বারি-৩ এই তিটি জাতের আদার চাষ করেছেন তিনি।
সাইফুল ইসলাম আরো বলেন, আদার বীজ রোপনের পরে তেমন কোন পরিচর্যা করতে হয় নি। বস্তায় আদা চাষের ফলে বৃষ্টি হলেও যেমন আদা নষ্ট হয় না, তেমনি আগাছাও জন্মে না। শুধু দুবার কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছে। তার আদা বেশ ভালো হয়েছে। দুই এক মাস পরেই আদা গুলি বস্তা থেকে উঠতে শুরু করবে। বস্তা প্রতি দের থেকে দুই কেজি আদার ফলন হবে বলে আশষা করছেন তিনি। আদার বাজার দর ভালো থাকলে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার আদা বিক্রয়ের আশ তার। এত খরচ বাদ দিয়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা তার লাভ হবে বলে জানান তিনি।’
তিনি আরো বলেন, স্বল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় আগামীতে তিনি আরো বেশি আদার চাষ করবেন বলে জানান। এছাড়াও এলাকার অনেক তরুণ উদ্যোক্তারা বাড়ির আঙ্গিনায় ও পতিত জমিতে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষের জন্য তার কাছে প্রতিদিনই পরামর্শ নেওয়ার পাশাপশি আদার বীজের অর্ডার দিয়ে যাচ্ছে।
বালিতিতা ইনলামপুর গ্রামের খাইরুল ইসলাম বাড়ির আঙ্গিনায় ৭৫০টি বস্তায় আদার চাষ করেছেন। এই জায়গাটি তার পতিত জায়গা। এখানে আগে কোন ফসলের চাষ হয়নি। এবার কৃষি অফিসের পরামশেক্রমে প্রথম আদার চাষ শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, বস্তা প্রতি ৬৫-৭০ টাক খরচ করে আদার চাষ শুরু করছেন। আদার আশানুরুপ ফলন হয়েছে। প্রতি বস্তাতে আদা পরির্পূণ হয়ে গেছে। তেমন কোন পরিচর্যার করতে হয় শুধু স্প্রে করতে হয়েছে। বস্তা প্রতি দুই কেজি পর্যন্ত আদার ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। আগামীতে তিনি আরো আদার চাষ করবেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। বাজার দর ভালো থাকলে খরচ বাদ দিয়ে ৫০-৬০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে জানান তিনি।
লালপুর উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, উপজেলায় এবছর ৮৬ জন কৃষক ১২ হাজার ৭০০ টি বস্তায় আদার চাষ করেছেন। যা থেকে প্রায় ১২ হাজার ৭০০ কেজি আদা উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। যার মূল প্রায় ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আগামীতে আদার চাষ ও উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে জানান কৃষি বিভাগ। লালপুরে মইশাল, বারি-২, বারি ৩ ও থাই এই চারটি জাতের আদার চাষ হচ্ছে ।
রনি আহমেদসহ একাধিক তরুণ উদ্যোক্তা বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে কৃষি ভিভাগ থেকে উন্নতজাতের আদার বীজ প্রণোদনা পেলে আদার চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে জানান এই উদ্যোক্তারা।
লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার প্রীতম কুমার হোড় জানান, এই প্রথম লালপুরে বাণিজ্যিক ভাবে বস্তা পদ্ধতিতে আদার চাষ হয়েছে। বস্তায় আদা চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এই প্রদ্ধতিতে পতিত জমিতে আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আমার কৃষকদের আদা চাষে উদ্বুগ্ধ করছি। কৃষকদের আদার বীজ সরবারহ কারার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। আদার চাষ বৃদ্ধি পেলে আগামীতে লালপুরে আদার চাহিদা পুরন করে দেশের অন্য জেলায় রপ্তানি করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্ম কর্ত।