নাটোর অফিস॥
বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশন, নাটোর জেলার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, নাটোর মহোদয়ের নিকট “এপ্লিকেশন টু দ্য চিফ অ্যাডভাইজার” স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।বেসরকারি কলেজ সমূহে নিয়োগপ্রাপ্ত অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের দ্রদুত এমপিও ভুক্ত করতে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করে এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
নাটোর জেলা শাখার সভাপতি জনাব মোঃ রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ সবুজ সরকার এর স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে উপ¯ি’ত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং রাজশাহী বিভাগের সমন্বয়ক জনাব মোঃ হেলাল উদ্দিন, জেসমিন আক্তার, অসীম কুমার, আজিজুল হক, জীবন রহমান মানিক, মো: শাহজালাল , নিলুফা ইয়াসমিন সহ নাটোর জেলার নেতৃবৃন্দ উপ¯ি’ত ছিলেন। নেতৃবৃন্দরা বলেন
রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে গত ৩২ বছর ধরে আমাদের ৪৯৫টি বেসরকারি এমপিওভুক্ত কলেজে প্রায় ৩৫০০ জন নন-এমপিও অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষককে কোন বেতন-ভাতা না দিয়ে এমপিওবিহীন করে চরম বৈষম্য সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। এর ফলে উ”চ দ্রব্যমূল্যের বাজারে দীর্ঘদিন ধরে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছি।
তারা বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যলয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে সারাদেশের বেসরকারি কলেজ সমূহে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী কৃতিত্বের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছে। বিগত সরকারগুলো অনার্স-মাষ্টার্স শিক্ষকদের জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত না করায় একদিকে যেমন এ সকল শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারছে না, অন্যদিকে প্যাটার্ন বহির্ভূত শিক্ষক হিসেবে কলেজ থেকে পূর্ণস্কেলে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও ইতঃপূর্বে কলেজ ভেদে ২০০০-১০,০০০ টাকার বেশি কখনই দেওয়া হয়নি। এছাড়া করোনা প্রাদূর্ভাবের সময় থেকে অধিকাংশ কলেজগুলোতে বেতন বন্ধ ছিল। ফলে, উ”চশিক্ষায় নিয়োজিত এ সকল শিক্ষক পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় সদ্য জাতীয়করণকৃত ৩০২টি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকগণ ক্যাডার/ ননক্যাডারভুক্ত হয়েছেন, ডিগ্রিস্তরের ৩য় শিক্ষকগণ জনবল কাঠামোয় না থাকার পরও এমপিওভুক্ত হয়েছেন। ১৯৯৩ সালে বিজিবি কলেজ, ঘাটাইল, টাঙ্গাইলের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের ৮জন শিক্ষককে বিশেষ প্রজ্ঞাপনে এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। অন্যদিকে ফাজিল ও কামিল (মাস্টার্স সমমান) শ্রেণির শিক্ষকগণও জনবলকাঠামোভুক্ত হয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। অথচ বেসরকারি কলেজ সমূহে অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকগণ এনটিআরসিএ সনদধারী হয়েও জনবল ও এমপিওনীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না, যা চরম বৈষম্য ও সংবিধানের মৌলিক অধিকার পরিপš’ী।
শিক্ষক নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, এটা সর্বজনস্বীকৃত সত্য যে, বর্তমান বৈষম্য বিরোধী শিক্ষাবান্ধব ড. ইউনুস সরকার শিক্ষা সেক্টরে অনেক বৈষম্য দূর করছেন কিন্ত অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, উ”চশিক্ষায় নিয়োজিত সারাদেশে ৪৯৫টি বেসরকারি কলেজে মাত্র ৩,৫০০জন শিক্ষক এখনো এমপিওভুক্তির বাইরে রয়েছেন। অথচ, বিধি মোতাবেক ব্যব¯’া গ্রহণের জন্য বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক নির্দেশনা, নবম ও দশম সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ¯’ায়ী কমিটির সুপারিশ এবং জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর অধ্যায়-০৮-এ বর্ণিত উ”চশিক্ষার কৌশল বাস্তবায়নের জন্য এ সকল শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা অত্যন্ত যৌক্তিক ছিল। তাই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন কল্পে বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ও নিয়মিত কর্মরত ৩,৫০০জন শিক্ষককে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ আদেশের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত করতে প্রতি মাসে ৯কোটি এবং বছরে ১০৮ কোটি টাকার বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ করলেই আমাদের এমপিওভুক্তির ন্যায়সঙ্গত দাবির বাস্তবায়ন হয়।
শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, এমপিওভুক্তির দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সময়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করে মানববন্ধন, অব¯’ান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করার পরেও অদ্যবধি সরকারি বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছি। এ ধারাবাহিকতায় গত ১৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ থেকে ১৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ঢাকায় শিক্ষা ভবনের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন, অব¯’ান কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করে ১৭ অক্টোবর ২০২৪ বিকাল ৪:৩০ মিনিটে আমরা ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা করি। এতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদেরকে অগ্রসর হতে বাধা দেয়। ফলে আমরা রাস্তায় বসে পড়ি। এরই মধ্যে আসরের নামাজের আজান হলে আমরা সেখানেই নামাজ আদায় করি এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টার অসু¯’তার কথা জানতে পেরে তাদের সু¯’তার জন্য দোয়া করি। এমন সময় পেছনের দিক থেকে অর্থাৎ খাদ্য অধিদপ্তরের দিক থেকে পুলিশ বাহিনী আমাদের উপর লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের অনেক শিক্ষক আহত, রক্তাক্ত হয় এবং সমাবেশ পন্ড হয়। যার ভিডিও ও ¯ি’র চিত্র বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও টেলিভিশন মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। এ ঘটনার জন্য আমরা শিক্ষক সমাজ লজ্জিত।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আপনাদের দেয়া স্মারকলিপি আমি যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পৌঁছে দেয়ার ব্যব¯’া গ্রহণ করব।’