নাইমুর রহমান, নাটোর-১আসন ঘুুুরে
লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত নাটোর-১ আসনের মোট ভোটার ৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৯ জন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাত্র ৩ দিনের প্রচারণার সুযোগ পাচ্ছেন এ আসনে বিএনপির প্রার্থী অধ্যক্ষ কামরুন্নাহার শিরীন। হিসেব অনুযায়ী, দিনপ্রতি ১ লাখ ভোটারের নিকট ভোট প্রার্থনার কঠিন চ্যালেঞ্জে এখন আসনটির প্রথম নারী প্রার্থীর।
নাটোর-১ আসনটিতে যখন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিরামহীন প্রচারণায় শেষ দিনগুলো পার করেছেন, তখনও আইনি জটিলতায় আদালতের বারান্দায় প্রার্থীতার লড়াই চলেছে শিরীনের। আর দলীয় প্রতীক ধানের শীষ বরাদ্দের পর প্রচারণার বাকী ৩ দিনের প্রথম দিনে মাত্র ২ ঘন্টা গণসংযোগ করতে পেরেছেন বিএনপি প্রার্থী কামরুন্নাহার শিরীন।
জানা যায়, গত ৮ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের কয়েক ঘন্টা পূর্বে নাটোর-১ আসন থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কামরুন্নাহার শিরিনকে বাদ দিয়ে ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত কৃষক-শ্রমিক জনতালীগের প্রার্থী মুনজুরুল ইসলাম বিমলকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরে দলের সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে কামরুন্নাহার শিরিন হাইকোর্টে রিট করেন। কামরুন্নাহার শিরিনকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। গত ২৪ শে ডিসেম্বর হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী মুঞ্জুরুল ইসলামের আবেদনের শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট চেম্বার বিচারপতি রিটটি খারিজ করে দিলে ভোটের মাত্র ৫ দিন আগে ধানের শীষের চুড়ান্ত প্রার্থী হন কামরুন্নাহার শিরীন। এ সংক্রান্ত আদেশটি নাটোর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রেরণে আরো দুই দিন সময় লাগায় প্রচারণার জন্য মাত্র ৩ দিন সময় পান শিরীন।
বিএনপির অভেদ্য দূর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনটিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় এতোটাই পিছিয়ে বিএনপি যে, ঠিকমতো একটি এলাকার ১০ জন ভোটারের হাতেও ধানের শীষ প্রতীকের মিনি পোস্টার তুলে দিতে পারেননি বিএনপি প্রার্থী।
বুধবার (২৬ শে ডিসেম্বর) শেষ বিকেলে নিজ এলাকা লালপুরের গৌরিপুরে ভ্যানে চড়ে গণসংযোগে অংশ নেন তিনি। এসময় তার সমর্থকরা সুযোগমত রাস্তার দুপাশে দাঁড়ানো লোকজনদের হাতে মিনি পোস্টার তুলে দেন। তবে প্রতিপক্ষের হামলার আশংকায় অল্প সময়ের মধ্যেই গুটিয়ে নেন নেতাকর্মীদের।
পরে নিজ বাসভবনে কয়েক’শ দলীয় নেতাকর্মীরা অবস্থান নিলে তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন কামরুন্নাহার শিরীন। এসময় ভোটের মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের ৩০ শে ডিসেম্বর সকালে ১১টার মধ্যে ভোট দিতে আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, গত কয়েক দশকে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় বিএনপি এমন নাজুক অবস্থায় পড়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা। তাদের মতে, এ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটল স্থানীয়ভাবে ‘হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালা’ হিসেবে আখ্যায়িত ছিলেন জীবদ্দশায়। কথিত আছে, তিনি মাঠে নামলে স্বতস্ফুর্তভাবে একাত্ততা ঘোষণা করতেন দলীয় কর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষ। এ নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র জমাদানের দিন লালপুরবাসী বিএনপি নেতাকর্মীদের স্বতস্ফুর্তভাবে বেরিয়ে আসতে দেখেছে। আবার শিরীনের প্রার্থীতা বাতিল করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী মুঞ্জুরুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়ার প্রতিবাদেও সহস্রাধিক নেতাকর্মী রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে। অথচ আইনী লড়াই শেষে শেষ মুহূর্তে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েও তিন দিনের প্রচারণার ঘেরাটোপে আটকে যাওয়া কামরুন্নার শিরীনের প্রতি সহানুভূতি ছাড়া প্রতিপক্ষের ভয়ে পাশে থাকার সুযোগ পাচ্ছে না অনেক শুভাকাঙ্খীও। তবুও শেষ মুহূর্তে বাধাহীন প্রচারণার সুযোগ পেলে অনেকটাই এগিয়ে যেতেন শিরীন, মন্তব্য তাদের।
প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে ডিসেম্বরজুড়ে আইনী লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন কামরুজ্জামান শিরীনের কন্যা ফারজানা শারমিন পুতুল। তিনি বলেন, ‘ভোটযুদ্ধের আগে আমাদের মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীক নিয়ে যুদ্ধ করতে হয়েছে। একজন প্রার্থীর প্রচারণার সময়টুকু কেটেছে আদালতের বারান্দায়। তবুও আমরা আশাবাদী, লালপুর-বাগাতিপাড়ার মানুষ তাদের সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবে না।’
লালপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নাসির উদ্দীন বলেন, ‘প্রচারণার জন্য মাত্র ৩দিন পেয়েছি আমরা। প্রথম দিনের শুরুতেই প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন দ্বারা আমাদের কর্মীরা লাঞ্ছিত হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটকেন্দ্রে না যেতে হুমকিও দেয়া হচ্ছে। তবুও আমরা নির্বাচন থেকে সরে যাবো না। প্রয়াত বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান পটলের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলেই ৩ দিনের প্রচারেও বাধা দেয়া হচ্ছে।’
বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রার্থী জটিলতায় বাগাতিপাড়ায় ধানের শীষের প্রচারণা শুরু হয়নি। এখন চুড়ান্ত প্রার্থী থাকলেও প্রচারে বাধা দেয়া হচ্ছে। বাকী দুই দিন যদি নিরুপদ্রব প্রচারণার সুযোগ দেয়া হয় তবে ভোট বিপ্লব হবে ধানের শীষের পক্ষে।’
বিএনপি প্রার্থী কামরুন্নাহার শিরীন বলেন, আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট চাওয়ার সুযোগ পাইনি। এক দিনের মাত্র দুই ঘন্টার প্রচারণায় আমরা মানুষের মাঝে মিশে যেতে পেরেছি। আমরা আশাবাদী, শুধু নেতাকর্মীরাই নয়, সাধারণ মানুষও ভোট দেবে ধানের শীষে।’ ভয়ভীতির উর্ধ্বে উঠে ৩০ তারিখ সকলকে ভোটাধিকার প্রয়োগর আহ্বান জানান শিরীন।