লালপুরে পদ্মায় পানি বেড়ে তলিয়েছে ফসলের ক্ষেত

নাটোর অফিস॥
নাটোরের লালপুরে পদ্মায় পানি বাড়ছে হু হু করে। পানি বাড়ায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে পদ্মা-তীরবর্তী ৩টি ইউনিয়নে। আকস্মিক পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের সাড়ে তিন হাজার কৃষককের চাষকৃত শীতকালীন আগাম সবজি ক্ষেত ও আখসহ প্রায় ৪৭৫ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চর এলাকার কৃষকরা। দেখা দিয়েছে গবাদী পশুর খাদ্য সংকটও। গত ২৪ ঘন্টায় নদীতে পানি বেড়েছে ৬ সেন্টিমিটার।
নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রফিকুল আলম চৌধুরী জানান, গত তিন দিন যাবত পদ্মায় পানি বাড়ছে। তবে পদ্মানদীর লালপুর অংশে পানি এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় পদ্মানদীর ঈশ্বরদী হার্ডিং ব্রিজ পয়েন্টে পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩৮ মিটার। গত ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পদ্মায় পানির বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ মিটার। বর্তমানে পানি বিপৎসীমার মাত্র ১ দশমিক ২৫ মিটার নিচ নিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৯ তারিখ পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সরজমিনে পদ্মার চরাঞ্চল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত তিন দিনে পদ্মা পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেগে উঠা বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নওশারা সুলতানপুর, চাকলা বিনোদপুর, দিয়াড়শংকরপুর, আরাজি বাকনাই, রসুলপুর ও মোহরকয়া আংশিকসহ প্রায় ১টি চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে মোট ৬৫ হেক্টর জমিতে আগম চাষ করা মূলা, পুইশাক, লালশাক, বেগুন, লাউ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। চরের প্রায় ৪১০ হেক্টক আখ ক্ষেতে পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়াও পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় পদ্মা চরের বেশ কিছু বাড়ি ঘরেও পানি প্রবেশ করেছে।
এসময় কথা হয় বিলমাড়িয়া এলাকার মূলা চাষী আব্দুল কাহার আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পদ্মা নদীতে হঠাৎ পানি বাড়ায় চরে তার চাষ করা ৩ বিঘা জমির মূলা পানিতে তালিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে মুলা গুলি বাজারে উঠতো। এতে তার প্রায় লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে। ’
একই এলাকার বেগুন চাষী মাইনুল মোল্লা বলেন, তিনি চারাঞ্চলে ২ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছিলেন। বেগুন গাছ গুলিতে ফুল কুড়ি আসতে শুরু করেছিলো। পদ্মায় আকস্মিক পানি বাড়ায় বেগুন ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক টাকা তার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিলমাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিক আলী মিষ্টু বলেন, ‘এখানকার ৫-৭ টি চরে আবাদ করেই এই এলাকার মানুষেরা তাদের জীবনজীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আকস্মিক পদ্মায় পানি বৃদ্ধিতে জমি গুলি তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন।’
উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এবার পদ্মা নদীর জেগে উঠা চরে ৪১০ হেক্টর আখ, ৪৫ হেক্টর শাকসবজি, ১০ হেক্টর কলা, ও ১০ হেক্টর মাসকালাই তলিয়ে গেছে।
লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার প্রীতম কুমার হোড় জানান, নদীতে আকস্মিক পানি বাড়ায় চর এলাকার চাষকৃত আগাম শীতকালীন ৬৫ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও ৪১০ হেক্টর জমির আখ ক্ষেতে পানি প্রবেশ করেছে। এতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সরকারী সহযোগিতার জন্য তাদের তালিকা তৈরী করে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষর কাছে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়াও পানি নেমে যাওয়ার পরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে বলা যাবে বলে তিনি জানান।’
লালপুর উপজেলা ইউএনও মেহেদী হাসান জানান, পদ্মায় আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে চর এলাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগ চর এলাকায় পরিদর্শন করে ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান নিরুপন করতে কাজ করছে। রিপোর্ট পেলে তিগ্রস্থ কৃষকদের সরকারি সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে। এছাড়াও সার্বিক খোঁজখবর রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *