কেন্দ্রীয় নির্দেশ মানছেননা বিএনপি নেতা

নাটোর অফিস ॥
নাটোরের বিএনপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রিয় নির্দেশনা না মানার অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে সিংড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দাউদার মাহমুদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। দাউদার মাহমুদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলে অনেকেই তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ সহ মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এনিয়ে দলের মধ্যে স্থানীয়ভাবে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে বলেও তারা দাবি করেছেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বিএনপির কেন্দ্রিয় সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিশেষ বার্তা দেয় কেন্দ্রিয় বিএনপি। যেখানে মোটরসাইকেল বহর বা অন্য কোনো যানবাহনে ‘শোডাউন’ পরিহার করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এই নির্দেশনার পরও থামছেনা উপজেলা বিএনপির শীর্ষ ওই নেতার মোটরসাইকেল শোডাউন বলে অভিযোগ করেছেন দলের স্থানীয় নেতা কর্মীরা। জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কয়েকজন এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকারও করেছেন। জেলার শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বলেছেন তারা দাউদার মাহমুদকে সর্তক করার পরও তিনি নির্দেশ অমান্য করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয় ভাবা হচ্ছে।
এদিকে ইতোমধ্যে সিংড়ায় উপজেলা বিএনপির তিনটি গ্রুপ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাদের একটির নেতৃত্ব আছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সিংড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদ, সিংড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনু ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মদলের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট ইউসুফ আলী।
দাউদার মাহমুদের প্রতিপক্ষ নেতা-কমীদের অভিযোগ আওয়ামীলীগের সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বন্ধু হিসেবে পরিচিত দাউদার মাহমুদ। আওয়ামী লীগের আমলে সিংড়ায় নির্বিঘেœ চলাচল ও ঘরোয়া রাজনীতি করেছেন তিনি। সিংড়া বিএনপির উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মী তার অনুসারী।
আনোয়ার হোসেন আনু দমদমা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ। এলাকায় পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত তিন। বিএনপির পুরাতন ও প্রবীন নেতাদের অনেকেই তাঁর সাথে রয়েছেন।
অপরদিকে গ্রামীনফোনের বঞ্চিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষে মামলা লড়াই করা এডভোকেট ইউসুফ আলী। আর্থিকভাবে অনান্য নেতাদের থেকে তুলনামূলক স্বচ্ছল হওয়ায় উপজেলা বিএনপির তরুণদের একটা বড় অংশ তার অনুসারি। বিগত কয়েকবছর আলাদাভাবে তিনি দলীয় কর্মসূচীতে অংশ নেন। তবে এসকল নেতাদের কর্মীরা বর্তমানে দলের নির্দেশ অমান্য করে মোটর শোডাউন করে যাচ্ছেন। তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগও আছে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশনা অমান্য করে মোটরসাইকেল শোডাউন করায় সিংড়া বিএনপির একাধিক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দলীয় নির্দেশনা অমান্য করায় দাউদার মাহমুদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দাবি করেছেন তারা। গত বুধবার কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে দাউদার মাহমুদের নেতৃত্বে মোটরসাইকেল শোডাউন হয়েছে। দাউদার মাহমুদের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে এ শোডাউন শুরু হয়। পরবর্তীতে সেটি ডাহিয়া ইউনিয়নের বিয়াশ বাজারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শোডাউন নিয়ে সভাস্থলে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন। ওই সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিংড়া পৌর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট আলী আজগর খান, সদস্য সচিব তায়েজুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক বোরহান উদ্দিন বাবু, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব মাস্টার, সদস্য সচিব আব্দুল মালেক প্রমুখ।
এদিকে ওই শোডাউনকে কেন্দ্র করে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। সিংড়া থেকে বিয়াশ বাজার পর্যন্ত শোডাউনের ফলে চলনবিলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া সরু সাব মারসিবল রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসময় সাধারন মানুষকে ভোগান্তি সহ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এলাকার মানুষ এমন কর্মসূচির জন্য নিন্দা জানান।
সিংড়া পৌর বিএনপির সিনিযর যুগ্ম আহ্বায়ক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে বুধবার মটরসাইকেল বহর নিয়ে জনসভা করার কারনে এলাকার মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া ভোগান্তির কারন হয়ে দাঁড়ায়। দলীয়ভাবে এর ব্যবস্থা করা হোক এটাই আমরা চাই।
উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আনোয়ারুল ইসলাম আনু বলেন, যারা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অবগত করেছি। অবশ্যই কেন্দ্র থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এপ্রসঙ্গে দাউদার মাহমুদ বলেন, কোন ধরনের মোটর সাইকেল শোডাউন করা হয়নি। তিনি শোডাউনের বিষয়ে কিছুই জানেনা। তবে এই প্রতিবেদককে স্মরন করিয়ে দেন সিংড়া উপজেলা চলনবিল অধ্যুষিত। এখানে বর্তমানে মোটর সাইকেল একটি পরিবহন ব্যবস্থা। গ্রাম গঞ্জে যেতে হলে মোটর সাইকেলে যেতে হয়। যারা গত ১৫ বছর কোন ধরনের নির্যাতন বা লাঞ্ছনার শিকার হতে হননি সেসব মৌসুমী রাজনীতিবিদরা সুবিধা নেয়ার জন্য বিএনপির তোকমা লাগিয়ে সুবিধা নিতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার শুরু করেছেন। এলাকার মানুষ আমার সাথে রয়েছে। তাই তারা আমাকে হেয় করতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন। একাধিক গ্রুপ সম্পর্কে তিনি বলেন, উপজেলা কমিটি পুনাঙ্গ না হওয়ায় কেউ কেউ নেতৃত্বের জন্য নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন। কমিটি গঠন হলে এঅবস্থা থাকবেনা।
এবিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন ও সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ বলেন, দাউদার মাহমুদকে এবিষয়ে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। যদি তিনি না শোনেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রে জানানো হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *