নাটোর অফিস॥
নাটোরে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোড শেডিং এ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রখর তাপদহের সাথে পাল্লা দিয়ে করা হচ্ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫ ঘন্টা লোডশেডিং এর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলার গ্রামাঞ্চলের মানুষদের। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না পাওয়ায় ১ ঘন্টা অথবা দু’ঘন্টা পর পর লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ নাটোর জেলার লালপুরে দিনে-রাতে সর্ব্বোচ্চ ১৪ থেকে ১৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। লালপুরের অটোভ্যান চালক সাইদুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন ধরে যে হারে লোডশেডিং হচ্ছে ভ্যানের ব্যাটারি ঠিকমতে চার্জ দিতে পারছি না। ভ্যান চালিয়ে সংসার চলে। ভাড়া খাটতে পারছি না। এখন সংসার চালানোই দায়। রাতে তিন-চার বার কোন কোন দিন ৫ বারও লোডশেডিং হয়।
ওয়ালিয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আব্দুল হামিদ বলেন, লোডশেডিংএ অতিষ্ট। দিনে রাতে ১২থেকে ১৪ বার লোডশেডিং হয়। গত কদিন ধরে দিনে রাতে তিন থেকে চার বার লোডশেডিং হয়েছে। গরমে নিজেই ঘুমাতে পারিনা তার উপরে ছোট ছোট নাতি-নাতনী গরমে সারা রাত কাঁদা-কাটি করে। অসহনীয় দুর্ভোগে দিন কাটছে।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর লালপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম রেজাউল করিম বলেন, চাহিদার তুলনায় প্রতিদিন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি থাকছে। দিনে চাহিদা ১৮ মেগাওয়াট, পাওয়া যাচ্ছে ৯-১০ মেগাওয়াট। একইভাবে রাতে ২৬ মেগাওয়াটের স্থলে মিলছে ১২ থেকে ১৪ মেগাওয়াট। এজন্য এক ঘন্টা পর পর লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
গুরুদাসপুর ,বড়াইগ্রাম ও বাগাতিপাড়ায় ১০ থেকে ১২ ঘন্টা শেডিংয়ের করা হচ্ছে। গুাংদাসপুর ৩৩ কেভি ফিডারের বর্তমান চাহিদা ২৩ মেগাওয়াাট। বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ২৪ ঘন্টায় ১০ ঘন্টা করে লোডশেডিং করা হচ্ছে।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, প্রতিদিনে ৮৩ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ৩৫ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এছাড়া রাতে ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কম পাওয়া যাচ্ছে। এতে করে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। যখন যেমন সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে তখন সেভাবেই বিতরন করা হচ্ছে। তবে গুরুত্বপুর্ন কিছু এলাকায় লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় করা হচ্ছে।
এদিকে চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলায় প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘন্টালোড শেডিং করা হচ্ছে। নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সিংড়ার জোনাল অফিসের ভারপ্রাপ্ত এজিএম আতাউর রহমান জানান, সিংড়া উপজেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৩৫ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ১৮ মেগাওয়াট। সরবরাহ কম থাকায় এখন প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা লোড শেডিং করতে হচ্ছে।
অপরদিকে নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলায় প্রায় ১১ ঘন্টা লোড শেডিংয়ের করা হচ্ছে। গ্রাহকদের অভিযোগ কখনও ১ ঘন্টা কখনও ২ ঘন্টা লোড শেডিং করা হয়। দিন ও রাতে অন্তত ৫ বার লোড শেডিং করা হচ্ছে। এভাবে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘন্টা লোড শেডিংয়ের শিকার হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মোঃ ফকরুল আলম জানান, নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর দিন রাতের বর্তমান চাহিদা ১০০ থেকে ১২৩ মেগাওয়াট। সেখানে দিনে পাওয়া যায় ৫০ থেকে ৬০ মেগাওয়াট। আর রাতে ১০০ মেগাওয়াট পাওয়া যায়। চাহিদার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম সরবরাহ পাওয়ার কারনে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা লোড শেডিং করতে হচ্ছে।
এদিকে নাটোর জেলা শহরে প্রতিদিন ১ থেকে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোড শেডিং করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিপণণ কেন্দ্র নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) নাটোর অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী বিলাস কুমার আগরওয়ালা জানান, নাটোর শহরের ৩৫ হাজার গ্রাহকের জন্য চাহিদা রয়েছে ১২ মেগাওয়াট। বর্তমানে ৯ থেকে ১০ মেগাওয়াট। ১০টি ফিডারের মাধ্যমে সরবরাহ পাওয়া বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাঝে বিতরন করা হয়। সহনীয় মাত্রায় লোড শেডিং করা হচ্ছে।