সহকারি গ্রন্থাগারিক পদে চাকুরি করছেন দু’জন,বৈধতা পেতে আলেয়ার আকুতি

নাটোর অফিস॥
২০০৫ সালে নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের নাজিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সহকারি গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ পান আলেয়া খাতুন। অথচ একই পদে আলেয়া খাতুনের নিয়োগ বহাল রেখে পরিচালনা পর্ষদ ২০১৯ সালে নিয়োগ দেন তাসলিমা নামের এক নারীকে। অবৈধ নিয়োগ ব্যাপারে সে-সময়ে কথা বলেও পাত্তা পাননি আলেয়া খাতুন। মঙ্গলবার (৩সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নিয়োগের বৈধতা তুলে ধরে গুরুদাসপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী আলেয়া খাতুন।
সংবাদ সম্মেলনে আক্ষেপ করে আলেয়া খাতুন বলেন, সহকারি গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। একদিন বেতন হবে সে আশায়। এভাবে কেটে যায় বিনা বেতনে ১৪বছর। অথচ একই পদে অবৈধভাবে অন্য একজনকে নিয়োগ দেন তৎকালিন সময়ের আওয়ামীলীগ পন্থি পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। সৃষ্টি হয় জটিলতা। ফলে বৈধ নিয়োগ হওয়া সত্বেও আটকে যায় এমপিওকরণ। অস্তিত্ব সংকটে পড়া বৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত আলেয়া খাতুন চান সুবিচার।
তথ্যমতে জানা যায়, ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়টি। ২০০৫ সালে স্কুলের পাশাপাশি চালু করা হয় কলেজ শাখা। এমপিওভুক্ত না হলেও অনুমতি পান পাঠদানে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ওই বছরের ১৩ মার্চ বিভিন্ন পদে অন্তত ৩৬জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। সেসময়ে ১৯৯৫ সালের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী সহকারি গ্রন্থাগারিক পদে স্থানীয় আলেয়া খাতুন নামের এক নারীকে নিয়োগ দেন তৎকালিন পরিচালনা পর্ষদ। ১৪ বছর পর একই পদে ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর তাসলিমা খাতুন নামের আরেক নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর থেকে একই পদে দুই ব্যক্তিই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন।
নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতির দায়িত্বে আসেন। সেসময় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তার মামা রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের প্রভাষক জয়নাল আবেদীনকে নাজিম স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসান। একই পদে নিয়োগ দেন তাসলিমা খাতুনকে। শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেন তিনি।
ভুক্তভোগি আলেয়া খাতুন বলেন, সেসময়ে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমার প্রতি অবিচার করেছেন। তিনি অবৈধ নিয়োগটি বাতিলের দাবি জানান। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করেন তিনি। তবে তাসলিমা খাতুন বলেন, তখনকার পরিচলনা পর্ষদ তাকে সহকারি গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। পদটি নিয়ে তিনি উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আক্তার বলেন, সরকারি নিয়োগ বিধি মোতাবেক স্কুল অ্যান্ড কলেজে সহকারি গ্রন্থাগারিকের পদ রয়েছে ১টি। ওই পদে দুইজনকে নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তা দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে উর্ধতনকর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
নাজিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জালাল উদ্দিন বলেন, আলেয়া বেগম ২০০৫ সালে নিয়োগের পর থেকে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই পদে ২০১৯ সালে নিয়োগ পাওয়া তাসলিমা খাতুনও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা বিব্রত।
তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন বলেন, সহকারি গ্রন্থাগারিকের পদ ফাঁকা থাকায় সেখানে তাসলিমা নামের এক নারীকে নিয়োগ দিয়েছিলেন তিনি। একই পদে আগে দেওয়া নিয়োগের কথা তিনি জানতেন না।
পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০০৫সালে সহকারি গ্রন্থাগারিক পদে আলেয়ার নিয়োগপদে ক্রটি ছিল। তাই শূন্য পদে ২০১৯ সালে বিধি মোতাবেক তাসলিমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
নাজিম উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন, একই পদে দুই ব্যক্তির চাকুরি করার সুযোগ নেই। নিবীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *