নাটোর অফিস॥
নাটোর শহরের নব বিধান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকবিমান গোবিন্দ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষকের এমপিও না করে উল্টো অসত্য অভিযোগ করা, অবসরে যাওয়া শিক্ষক কর্মচারীদের হয়ারানী,অবৈধভাবে অর্থআত্মসাত ও প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের নামে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভুগি শিক্ষক কর্মচারীরা। এ বিষয়ে তারা জেলা প্রশাসক ও নাটোর সদর আসনের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের কাছে অভিযোগ করেও এখন পর্যন্ত কোন প্রতিকার পাননি বলে জানান। বৃহস্পতিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব শিক্ষক-কর্মচারীরা অভিযোগ করে বলেন, ২০১৫সালে সহকারি শিক্ষক সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে নিয়োগ পান শহরের নীচাবাজারের বাসিন্দা মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামী ব্যবসায়ী জাহিদ হাসান মিন্টুর সাথে প্রধান শিক্ষকের সখ্যতা তৈরি হওয়ায় কয়েক দফায় তিনি ১৩ লাখ টাকা ধার নেন। এই টাকা ফেরত চাওয়ায় তিনি আজ পর্যন্ত তার এমপিও ভুক্তির ব্যবস্থা করে দেননি। সম্প্রতি এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল প্রধান শিক্ষককে ধার নেয়া টাকা ফেরত দিয়ে এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা করতে বলায় দায়সারাভাবে এমপিওর জন্য পাঠানো ফাইল রাজশাহী বিভাগীয় কর্মকর্তা বাতিল করেন। পরে বিভাগীয় অফিসে তিনি দেখা করলে তাকে বলা হয়েছে এই পদে পূর্বে কর্মরত ইদ্রিস আলীর নাম কর্তন করে ফাইল সংশোধন করে প্রধানশিক্ষককে পাঠাতে বলা হয়েছে। তারপরও প্রধান শিক্ষক ফাইল সংশোধন করেননি। উলটোএখন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী হাজিরা খাতায় তার নামের তালিকা দেয়া হয়েছে সুইপারের ওপরে। গত ৯বছর তাকে মাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষা ও নির্বাচনের সকল দায়িত্ব দিলেও ধার দেয়া টাকা ফেরত চাওয়ায় এখন তাকে সকল কাজ থেকে বিরত রেখে অসম্মানিত করা হচ্ছে। উলটো তার কাগজ পত্র ঠিক নেই বলে প্রধান শিক্ষক প্রচার করছেন। অপরদিকে অবসরে যাওয়া সহকারি শিক্ষক উমা রাণী পালিত ও হাসিনা ইয়াসমিন, অফিস সহায়ক জান মোহাম্মদ ও নৈশ্য প্রহরী নুরুল ইসলাম বলেন, সারাজীবন চাকুরী করে প্রায় দেড় বছর আগে তারা অবসরে গেছেন। এর আগে ২০১৭সালের ২৫জুলাই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের জন্য একজন শিক্ষিকার উচ্চ পদস্থ আত্বীয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ হয়েছে দাবী করে জরুরী সভায় সকল শিক্ষকদের নিকট থেকে ১ লাখ ৩৭হাজার ও কর্মচারীদের নিকট থেকে ৬৫হাজার করে টাকা নেন। সরকারি করণের বিষয়টি সত্য নয় বিষয়টি তারাএকসময় বুঝতে পেরে টাকা ফেরত চাইলে প্রধান শিক্ষক অস্বীকার করেন। পরে ভুক্তভুগিরা এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল ও নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলির কাছে আবেদ নকরেন। এই আবেদন করার পর প্রধান শিক্ষক নিজের দোষ ঢাকতে উলটো তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের আরো বেশি টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবী করেন। ১০বছর চাকুরিকরে এমপিও ভুক্ত হওয়ার মাত্র চারবছর পর মারা যাওয়া কর্মচারীএমরান হোসেনের স্ত্রী ছামিনা আক্তার বলেন, সরকারি করণের নামে তার স্বামীর নিকট থেকে নেয়া এক লাখ ২০হাজার টাকা অথবা স্বামীর পদে তাকে চাকুরী দেয়ার দাবী জানালে প্রধান শিক্ষক তার সাথে দূর্ব্যবহার করে তাকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এ সকল বিষয় গুলো জেনে গত ৮জুন এমপি শিমুল তিনদিনের মধ্যে বিদ্যালয় সরকারি করণের নামে নেয়া সকল টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন। প্রধান শিক্ষক টাকা ফেরত না দিয়ে ভুক্তভুগি এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে আবারো মিথ্যা অভিযোগ করেন। কম্পিউটার বিষয়ের সহকারি শিক্ষক হাসিনা ইয়াসমিন বলেন, চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারায় মিথ্যা ষড়যন্ত্র করে দুই দফায় তাকে চাকুরীচ্যুত করেন প্রধান শিক্ষক। তার বিরুদ্ধেও জাল কম্পিউটার সনদ দেয়ার মিথ্যা অভিযোগ করে ষড়যন্ত্র করেন প্রধান শিক্ষক এমপিও শীট থেকে নাম কর্তন করেন বলে তিনি অভিযোগকরেছেন।
নব বিধান উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিমান গোবিন্দ সরকার এ সব বিষয়ে আগেই সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারিকরণের কথা বলে তিনি কোন টাকা পয়সা নেননি। সনদ জাল হওয়ায় কম্পিউটার বিষয়ের সহকারি শিক্ষক হাসিনা ইয়াসমিনের চাকুরী চলে গেছে এবং একই কারণে জান্নাতুল ফেরদৌসের এমপিও ভুক্ত হয়নি।
তবে প্রধান শিক্ষকের সকল কথা অসত্য বলে দাবী করেছেন এসব শিক্ষক কর্মচারীরা।