নাটোর অফিস ॥
নাটোরে গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে তালের শাঁসের কদর বেড়েছে। মধু মাসখ্যাত বাংলার জৈষ্ঠমাসে এই তাল শাঁস বাজারে আসে। এই মধু মাসে রসালো পাকা আম, জাম, কাঁঠাল ও লিচু অন্যান্য ফলের সমাগম হয়। তবে এসব ফলে ফরমালিন ও কীটনাশকের ছিটানো হলেও তাল শাঁসে ফরমালিনের কোন বিষ থাকেনা। একারনে মানুষের কদর বাড়ছে তাল শাঁসে। অপরিপক্ক এই তালের শাঁসকে স্থানীয় ভাষায় তালকুড় বলা হয়। তালের শাঁসের পুষ্টি গুণও রয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা।
ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ঐ আমাদের গাঁ, ঐ খানেতে বাস করে কানা বগির ছা-’ খান মঈনুদ্দীনের কানা বগির ছা” ছড়াতে গাঁয়ের তাল গাছে এখন বকের ছানা থাক বা না থাক, তাল গাছগুলো কিন্তু কচি তালে ভরে গেছে। তাই গাছে কচি তাল ভরে উঠতে দেখে গাছি বা ব্যবসায়ীরা এসব কচি তাল কিনে হাট- বাজারে তালশাঁস বিক্রি করেন।
একমাত্র ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। বৈশাখ-জৈষ্ঠ এই দুই মাস গ্রীষ্মকাল। এই গ্রীষ্মকালের পুরো বৈশাখ ও জৈষ্ঠের শুরুর দিকে যেমন কাঁচা আম পাওয়া যায় তেমন জৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে পাওয়া যায় রসালো পাকা আম, জাম, কাঁঠাল ও লিচু। একারণে এই মাসকে মধু মাস বলা হয়। এই মধু মাসে মৌসুমী ফল আম, জাম, কাঁঠাল ও লিচুর পাশাপাশি পাওয়া যায় তালের নরম শাঁস। রসে ভরা এসব ফল সুন্দর ও তাজা রাখতে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফলে ফরমালিন বা রাসায়নিক কীটনাশক মিছিয়ে দেয়। ফলে এসব ফল বিষ যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপুর্ন হয়ে পড়ে। এসব কারনে মানুষ ঝুঁকে পড়ছেন পুষ্টি গুণ সম্পুন্ন গ্রীষ্মকালীন ফল তালের শাঁসে(তাল কুড়)। তাই কদরও বেড়েছে এই ফলের।
তাল কুড় বিক্রেতা মোঃ খোকন আলী জানান,গ্রীষ্ণ মৌসুমে তিনি প্রতিদিন সদর উপজেলার ঠাকুর লক্ষিকুল গ্রাম থেকে তাল বিক্রি করতে শহরে আসেন। প্রতিদিন ৩ থেকে ৪শ তাল নিয়ে আসেন। তিনি প্রতি বছরই এ সময়ে তালের শাঁস বিক্রি করেন। গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল কিনে নিয়ে আসেন। গাছে উঠতে কষ্ট হলেও ওই গাছ থেকে তাল তাদেরই পাড়তে হয়। হাট-বাজারে নিয়ে তারা তাল কেটে বের হওয়া নরম শাঁস বিক্রি করেন। বৈশাখ থেকে জৈষ্ঠ্য মাসে গাছে তালকুর থাকে।
সদর উপজেলার পাইকেরদোল এলাকার মাহতাব বলেন, তিনি মৌসুমের আগে তাল গাছ কিনে থাকেন। একেকটি গাছ তিনশ থেকে চারশ টাকায় কেনেন। প্রতিদিন ওই সব গাছ থেকে তাল নামিয়ে এনে বাজারে তালের শাঁস বা তালকুড় বিক্রি করেন। ২শ থেকে ৩শ পিস তালের শাঁস বিক্রি করেন । একটি তালে সর্ব্বোচ্চ তিনটি করে তাল শাঁস থাকে। প্রতিটি ৫ টাকা করে বিক্রি করেন। বিষমুক্ত ও পুষ্টিগুন হওয়ায় এই তাল কুড়ের চাহিদা বেড়েছে। মৌসুমে তালের শাঁস (তাল কুড়) বিক্রি করে সংসার সংসার চালান। বেশ ভালই চলে তাদের সংসার।
বিক্রেতাদের অনেকেই বিভিন্ন হাটবাজারে, সিএনজি, অটো ভ্যান স্ট্যান্ড এবং অলি গলিতে তালের শাস (তালকুড়) বিক্রি করেন। ফেরি করেও বিক্রি করেন কেউ কেউ।
শহরের বড়গাছা এলাকার বাসিন্দা মাসুদুর রহমান মাসুদ এবং আবু মুসা নামে দুই ক্রেতা বলেন, বর্তমানে বাজারে অধিকাংশ ফল ফলাদি ও শাক সবজি সহ মাছ মাংস সব কিছুই কোন না কোন ভাবে ফরমালিন বা কীটনাশক ছিটিয়ে বাজারজাত করা হয়। যা মানুষের শরীরের জন্য বিষ। কিন্তু তালর শাঁস বা তাল কুড়ে ভেজাল কিছুই থাকে না । শতভাগ নেচারাল ফল এবং পুষ্টি গুণও রয়েছে এতে। একারনে এখন অনেকেই এই তালকুড় খেতে অভ্যস্থ হয়ে পড়ছেন। অনেকেই তালকুড় কাটার সাথে সাথে বিক্রেতার সামনেই খান। অনেকেই পার্সেল করে বাড়ি নিয়ে যায়। এই ফল এখন সব বয়সী মানুষের কাছে প্রিয় খাদ্য। ফলটা লোভনীয় হওয়ায় বাজারে এখন এই তালকুড়ের চাহিদা বেড়েছে। পরিবারের জন্য পার্সেল করে বাসায় নিয়ে যায়।
নাটোর সদর হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত আরএমও ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, তাল শরীরের জন্য খুব উপকারী একটি ফল। তালের শাসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দূর করে। তালে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কচি তালের শাস রক্তশূন্যতা দূর করে এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি ও মুখের রুচি বৃদ্ধি করে। এছাড়া তালে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি সহ নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে।