ঘুর্ণিঝড় রিমেলের প্রভাবঃ লালপুরে ১ হাজার ৮৫২ হেক্টর ফসলের ব্যপক ক্ষতি

 

নাটোর অফিস॥
ঘুর্ণিঝড় রিমেরেল প্রভাব পড়েছে উত্তরাঞ্চলের পদ্মানদী বিধৌত নাটোরের লালপুর উপজেলায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষিতে। আর কিছু দিন পরেই বাজারে উঠতো পাকা আম। কিন্তু ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডবে পড়েগেছে মন কে মন বাগানের আধা পাকা আম, লন্ড-ভন্ড হয়ে গেছে পদ্মার চরাঞ্চলের চালকুমড়ার ক্ষেত। ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডবে উঠতি ফসল ভুট্টা ও তিলের গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। ভেঙ্গ গেছে বিঘার পর বিঘা কলাগাছ। ঝড়ে উপজেলা জুড়ে উঠতি ফসল হিসেবে ১ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমিতে খরিপ-১ ভুট্টা, তিল, চালকুমড়া, কলা ও আমে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ১৪ হাজার কৃষক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ফসলের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ প্রাথমিক ভাবে নিরুপন করা হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা উপরে। এসব তথ্য জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। এদিকে উপজেলা জুড়ে একটানা প্রায় ২৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। ফলে মোবাইল সংযোগ বন্ধ হয়ে যায় এতে বিড়ম্বনায় পড়ে উপজেলা বাসি।
কৃষি বিভাগ আরও জানায়, ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভুট্টা, কলা, আম ও চালকুমড়ার ক্ষতি বেশি হয়েছে।
আম ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম বলেন, তিনি লাভের আশায় ঋণ নিয়ে ৬ বিঘা হাড়িভাঙ্গা আমের বাগান কিনেছিলেন ৩ লাখ টাকায়। ঈদের পরেই গাছ থেকে আম ভাঙ্গা হবে। এবার তার বাগানে ২৫০ মন আমের লক্ষমাত্রা ছিলো। গত কালের ঘুর্ণিঝড়ে অর্ধেক আম পড়ে গেছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার কোনো অবস্থা তার নেই। ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন আর কীভাবে সংসার চালাবেন, এসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।
ওয়ালিয়া গ্রামের কলা চাষী হাবিবুর রহমান জানান, তিনি ২ বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছিলেন। কালা গাছ গুলিতে কাঁদি এসেছিলো। আর কিছু দিন পরেই কলা বিক্রয় করা যেত। ঘুর্ণিঝড়ে তার সব কলার গাছ ভেঙ্গে গেছে। এতে তিনি প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার কোনো অবস্থা তার নেই।
কদিমচিলান গ্রামের ভুট্টা চাষী কালাম আলী বলেন, লিজ নিয়ে এক বিঘা ভুট্টা লাগিয়েছিলেন। এজন্য এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন তিনি। ভেবেছিনে ভুট্টা তুলে রোপা আমন ধানের চাষ করবেন। কিন্তু ঘুর্ণিঝড়ের তান্ডবে জমির সব ভুট্টার গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এখন আগামীতে কীভাবে এনজিওর ঋণ শোধ করবেন আর কিভাবে সংসার চালাবেন আর কীভাবে রোপা আমন ধান চাষাবাদ করবেন, তা ভেবে হতাশ হয়ে পড়েছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, উপজেলার বালিতিতা, মোমিনপুর, বিশ্বম্ভরপুর, তিলকপুর, চামটিয়া, পুরাতন ঈশ্বরদী, কদিমচিলান, চাঁদপুর, গোধড়া, বামনগ্রাম, নওসারাসুলতানপুর, চাকলাবিনোদপুর, দিয়াড়শংকরপুর, মোহরকায়া ও জোতদৈবকী এলাকায় কলা-১৫ হেক্টর, চালকুমড়া-৯ হেক্টর, তিল-১৬ হেক্টর, আম-১৮০৫ হেক্টর, ভুট্টা-৭ হেক্টর ক্ষতি হয়েছে। এতে ১৩ হাজার ৮৭০ জন কৃষক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ প্রাথমিক ভাবে নিরুপন করেছে।
লালপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, ঘুর্ণিঝড় রিমেরেল প্রভাবে লালপুরের কৃষিতে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে তা প্রাথমিক ভাবে তালিকা তৈরী করে সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের পুনর্বাসনে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সেটা এখনো জানায়নি।’
লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আখতার বলেন, ঘুর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবে লালপুরের বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি অফিসের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা হচ্ছে। আমরা কৃষি অফিসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সরকারী সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করবো।’ ক্ষতির শিকার কৃষকদের তালিকা তৈরী করে পরবতীতে তাদের পূর্নবাসনের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *