নাটোর অফিস॥
নাটোরের বড়াইগ্রাম সরকারি অনার্স কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও অর্থ আতœসাতের অভিযোগ করেছেন কলেজের সাধারণ শিক্ষকেরা। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো আবেদনে বলা হয়েছে, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হবিবর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, আর্থিক দূর্নীতি, চাঁদা দাবী, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও অর্থ আতœসাত,শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণ সহ অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারি বিধি মোতাবেক একাডেমিক কাউন্সিলে কলেজ পরিচালানার জন্য সভা করে যাতবতীয় রেজুলেশন অনুমোদনের মাধ্যমে সকল কার্যাবলী পরিচালনার বিধান থাকলেও একাডেমিক কাউন্সিলকে পাশ কাটিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পছন্দের কতিপয় শিক্ষক দিয়ে পরীক্ষাসহ সকল প্রকার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। একাডেমিক কাউন্সিলের কোনরূপ সভা না করেই অনিয়ম ও বিধিবর্হিভূতভাবে রেজুলেশন লিখে তাতে শিক্ষকদের নানা কৌশলে স্বাক্ষর নেন এবংপরবর্তীতে ফ্লুইড ব্যবহার ও ঘষা মাজা করে সিদ্ধান্ত সমূহ পরিবর্তন করেন। কথায় কথায় তিনি শিক্ষক কর্মচারীদের চাকুরী খেয়ে ফেলবেন বলে হুমকি দেন। তিনি নিজেকে কলেজের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এবং তার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত বলে শিক্ষকদের জানিয়ে দেন। কেউ তারকাছে কোনসমস্যাঅভিযোগনিয়ে গেলেতিনিতাদের নানাভাবেঅপমান ও তিরস্কার করেকক্ষ থেকে বেরকরে দেন। গত ডিসেম্বসেকলেজেরশিক্ষককর্মচারীদের বেতনবরাদ্দের পর উপজেলাহিসাবরক্ষণঅফিসের সাথে যোগসাজসেতারপছন্দের কতিপয়জুনিয়র নন এমপিওশিক্ষকদের মাধ্যমেসকলশিক্ষক-কর্মচারীদেরপাঁচ থেকে এগারোহাজারটাকাকরেচাঁদাদিতেবাধ্য করেন। তার এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে প্রায় ১০ জনশিক্ষকের বেতন ভাতা আটকে রেখে তাদের মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। শিক্ষক কর্মচারীদের উৎসবভাতা, বকেয়া বেতন ও শ্রান্তি বিনোদন ভাতা সহ ছুটি মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে তিনি প্রতিবারই শিক্ষক কর্মচারীদের নিকট হতে ঘুষ নেন। এ সকল কাজে তিনি তার অনুগত ও পছন্দের নন এমপিও জুনিয়র শিক্ষকদের প্রাধান্য দিয়েএবং সিনিয়র শিক্ষকদের উপেক্ষা করে তাদের বেতন ভাতা ও শ্রান্তিবিনোদনের ছুটি মঞ্জুর করেছেন। অধ্যক্ষের অন্যায়ের প্রতিবাদকারী পূর্বে এমপিওভুক্ত সিনিয়র প্রায় ২৫ জন শিক্ষকের বৈধ পাওনা শ্রান্তিবিনোদন ছুটি মঞ্জুর করতে গরিমসিও নানা রকম টালবাহান করছেন বলেও শিক্ষকরা আবেদনে উল্লেখ করেছেন। কোন ক্রয় কমিটি না করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজেই দ্রব্যাদি ক্রয় করার পর অনুগত শিক্ষক দিয়ে একটি পকেট কমিটি করে বিলভাউচার তৈরী করেন। প্রতিটি ক্রয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কমিশন হিসেবে আতœসাত করেন। সরকারিবিধি মোতাবেক সকল ক্রয়ের একটি নির্দিষ্ট পরিমান ভ্যাট প্রদান করার বিধান থাকলেওএখন পর্যন্ত এই কলেজ থেকে কোন প্রকার ভ্যাট পরিশোধ করা হয়নি। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর কোন প্রকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে তিনি সরাসরি তার ভাতিজী জামাই ও একজন নাতিকে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ দেন। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের জুনিয়র প্রভাষক মোঃশহীদুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের আপন ভায়রা ভাই হওয়ায় শহীদুল ইসলাম কতিপয় পছন্দের জুনিয়র শিক্ষকদের দিয়ে নানাভাবে সিনিয়র শিক্ষকদের অপমান অপদস্ত করেন। কেউ এর প্রতিবাদ করলে তাদের নানাভাবে হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। গত নভেম্বর মাসে তিনি নিজের দায়িত্ব গ্রহণ ও স্থানীয় এমপিকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি সংবর্ধনা প্রদান করেএকাডেমিক কাউন্সিলের কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই কলেজ থেকে তিনলাখ ৭৫হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন। অনুগতদের খুশি রাখতে কলেজে প্রতিদিন দুপুরে তার অনুগত ও পছন্দের শিক্ষকদের জন্য অফিস কক্ষে রান্না করে বিশাল ভুড়িভোজের আয়োজন করেন। কলেজের ইংরেজী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, পরিসংখ্যান ও দর্শন বিষয়ের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব বিধিবর্হিভূতভাবে জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে না দিয়ে তিনি তার পছন্দ মতো অনুগতজুনিয়র শিক্ষককে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব দিয়েছেন। প্রতিবাদ করলে তিনি জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সাথে চরম অসৌজন্যমূক আচরন করেন। প্রায় ৩ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানে কোন রশিদ না দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং-এরমাধ্যমে ২০২৪ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীদের বোর্ড ফি, কেন্দ্র ফি বাবদ তিনহাজার ও কলেজ পাওনার নামে আরো দুই হাজার টাকা করে আদায় করছেন। সরকারিবিধির তোয়াক্কা না করে ভর্তির ক্ষেত্রে একাদশ শ্রেণিতে আড়াই হাজার, ডিগ্রী (পাস) কোর্সে সাড়ে চার হাজার এবং অনার্স শ্রেণিতে চার হাজার ৬৪০টাকা করে আদায় করলেও পরবর্তীতে সরকারি বিধি মোতাবেক ভর্তিতে আদায়কৃত অর্থের একটাক্ষুদ্র অংশ রশিদ কেটে আয় দেখিয়ে ব্যাংকের সাধরণ তহবিলে জমা করেন। অবশিষ্ট টাকা ভারপ্রাপ্তঅধ্যক্ষ আতœসাতকরেন বলে শিক্ষকরাঅভিযোগকরেছেন।
বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নেকবর হোসেন বলেন শিক্ষকদের নিকট থেকে টাকা নেয়াসহ অধ্যক্ষের বিষয়ে করা সকল অভিযোগ শতভাগ সত্য। শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূক আচরন তার নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। ভর্তি থেকে শুরু করে ফর্মপূরণ সকল ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক অনিয়ম আছে।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রেজাউল করিম বলেন,অধ্যক্ষ তার ভায়রা শহীদুল ইসলামকে সাথে নিয়ে কলেজের সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। সিনিয়ার শিক্ষকদের আত্মসম্মান নিয়ে চাকরি করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। অধ্যক্ষকে টাকা না দেয়ার জন্য শ্রান্তি বিনোদনের টাকা পায়নি ২০জন শিক্ষক।
পরিসংখ্যানের আজিমুদ্দিন বলেন, আমি নিজেই ভিকটিম, কি বলব বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলেছি।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হবিবর রহমান তার বিরুদ্ধে করা শিক্ষকদের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ গুলোঅ সত্য ও অনৈতিক। তিনি কোন অনিয়ম করেননা। তার সমবয়সি শিক্ষকরা অধ্যক্ষ হতে না পারায় মনোকষ্টের কারণে এ সব অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, তিনি কাউকে চাকুরী নয়, দৈনিক মুজুরী ভিত্তিত্বে মাষ্টার রোলে নাতি ও ভাতিজী জামাইকে নিয়োগ দিয়েছেন।