নাটোর অফিস ॥
নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের সম্ভাব্য প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন নামে একজনকে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার এই অপহরনের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ করা হয়েছে দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাই সহ তিনজনকে কালো মাইক্রেতে করে অপহরন করে নিয়ে যাওয়া হয়। এই অপহরনের জন্য অপর প্রার্থী আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেলসহ তার সমর্থক সিংড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সি এই অপহরণের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন।
দেলোয়ারের পরিবার ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, দেলোয়ার সোমবার সকালে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য নাটোর স্টেশন এলাকার একটি কম্পিউটারের দোকানে যান। এ সময় তার বড় ভাই ও কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক এবং কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সি ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দেওয়ার জন্য বের হন। তারা কোড নম্বর জানার জন্য নাটোর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে গেলে কয়েকজন যুবক তাদের পথরোধ করেন কালো রংয়ের মাইক্রোবাসে করে। একপর্যায়ে তাঁদের জোর করে ওই মাইক্রোবাসে করে তারা তাদের তুলে নিয়ে যান।
তবে এই ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সি। তিনি এই জানান,তাদের কেউ অপহরণ করেনি। এই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি ও দেলোয়ারের বড় ভাই কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক নাটোরে যান তার ভাইকে নির্বাচন না করার জন্য। নাটোর শংকর গোবিন্দ আধুনিক স্টেডিয়ামের সামনে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মোহন আলীসহ কয়েকজনের সাথে দেখা হয়। তাদের সাথে চকরামপুর পচুর হোটেল এলাকায় যাই। অবশ্য আমাদের সাথে দেলোয়ার হোসেন পাশা ছিলনা। সে কোথায় ছিল সেটাও জানতামনা। পরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি হাসান ইমাম আমাদের কাছে গেলে তার গাড়িতে করে আমি ও দেলোয়ারের বড় ভাই সিংড়াতে ফিরে আসি। আমাদের দুজনকে অপহরণের কোন ঘটনায় ঘটেনি। তবে দেলোয়ার কোথায় ছিল আমরা জানতাম না। পরে লোকমুকে শোনার পর আমরা দুজন সিংড়া শহরের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশের সাথে দেখা হয়।
এদিকে অপহরণের বিষয় জানতে অভিযুক্ত উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারন সম্পাদক মোহন আলীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
তবে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি হাসান ইমাম জানান, অপহরণের কোন ঘটনায় ঘটেনি বা সংগঠনের কেউ এমন মিথ্যা অপহরনের সাথে জড়িত নন।
অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী লুফুল হাবিব রুবেলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,এধরনের অপহরন ঘটনার সাথে তিনি বা তার কোন সমর্থক কোন ভাবেই জড়িত নয়। ঈদুল ফিতরের আগে তিনি মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। এর পর থেকে তিনি নির্বাচনী গণসংযোগে ব্যস্ত রয়েছেন। সোমবার রাত্রি ৮ টার দিকে প্রচারনা শেষে বাড়ি ফিরে এই মিথ্যা অপহরনের খবর জানতে পারেন। এ খবর শোনার পর থেকে দেলোয়ারের পরিবার সহ দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করি। এসময় কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সি তাকে জানিয়েছেন একটি দৈনিকে প্রকাশিত অপহরনের খবর মিথ্যা। দেলোয়ারের ভাই সহ তাকে অপহরণের খবর ভিত্তিহীন ও মিথ্যচার।
সিংড়া থানার ওসি আবুল কালাম জানান, ঘটনাটি সদর থানা এলাকায় হওয়ায় সেখানকার পুলিশের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন। পরে তারা নিজ এলাকা থেকে সিংড়া শহরে আসার পথে পুলিশের সাথে দেখা হয়।
এদিকে দেলোয়ার হোসেন পাশার বড় ভাই কলম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এমদাদুল হক জানান, তার ভাই দেলোয়ারকে আহত অবস্থায় সন্ধ্যায় একটি গাড়িতে করে তাদের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যায় কতিপয় যুবক। বেধড়ক মারপিট করার কারনে গুরুতর আহত হয়েছে দেলোয়ার। আহত অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার ভাইকে অপহরণ বিষয়ে কোন কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
সিংড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, তিনি লোক মারফত ঘটনা শুনেছেন। অতি উৎসাহি কেউ হয়ত ঘটনার সাথে জড়িত। তবে এর সত্যতা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, ঘটনাটি জানার পর জড়িতদের সনাক্ত করা সহ গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের কয়েকটি দলকে নির্দেশ দেয়া হয়। পরে আহত অবস্থায় দেলোয়ারকে তার বাড়িতে রেখে যাওয়া হয়।
জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঞা জানান, তিনি ঘটনাটি শোনার পর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছেন। তদন্ত করে এ ঘটনার সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
জেলা রির্টানিং অফিসার আব্দুল লতিফ শেখ জানান,অনলঅইনের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়েছে। ২২ এপ্রিল মনোনয়ন পত্র বাছাই করা হবে। মনোনয়ন পত্র জমাদান নিয়ে কোন সমস্যা হবেনা।