নাটোর অফিস॥
নাটোরের স্কুল ছাত্র মাহদি-বিন-ফেরদাউসসহ বাংলাদেশের ৫ ক্ষুদে বিজ্ঞানী বিশ্ব মঞ্চ জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। বাংলাদেশের এই ক্ষুদে ৫ বিজ্ঞানী নাসা কনরেড চ্যালেঞ্জ এ বিশ্বের ৫০ দেশের প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে শীর্ষ দশে থেকে চুরান্ত পর্বে লড়বে। আমেরিকার টেকসাসের হোস্টন স্পেস সেন্টারের ভেনুতে বিজ্ঞানের এই বিশ্ব মঞ্চ জয়ের জন্য প্রস্তুতি চালাচ্ছেন তারা। তবে এই আনন্দের খবরের সাথে কপালে চিন্তার ভাজ এসব ক্ষুদে বিজ্ঞানী ও তার পরিবারের। সরকারী বা বেসরকারী কোন সহযোগিতা নেই তাদের। তাই ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের পরিবারের সদস্যরা তাদের সন্তানদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকারী পৃষ্ঠপোষকার আবেদন জানিয়েছেন।
এসব ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের দেয়া তথ্যে জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে আমেরিকার কনরাড ফাউন্ডেশন ১৮ বছরের কম বয়েসী তরুন উদ্দোক্তা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। এবার বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয় ‘নট এ বোরিং টিম’। সাতটি কমপোন্টেন্ট এর সমন্বয়ে গড়া ‘স্মার্ট রোড সেইফটি বিস্ট’ প্রজেক্ট নিয়ে নাটোর সরকারী বালক বিদ্যালয়ের ছাত্র মাহাদী-বিন-ফেরদাউসসহ তাদের ৫ জনের দল জয়ী হয় প্রথম তিন ধাপে। এরা হলেন নাটোরের সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র মাহদি -বিন ফেরদাউস, রাজশাহীর রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র নুর আহমেদ,চাঁপাই নবাবগঞ্জের হরিমোহন সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র ত্ব-শীন ইলাহী, নওগাঁর নজিপুর সরকারী মডেল হাই স্কুলের দশম ¤্রণেীর ছাত্র নাদিম সাহরিয়ার এবং নরসিংদীর লরেটো স্কুলের ‘এ’ লেভেলের শিক্ষার্থী মো. সঞ্জীব হোসেন। আগামী ২২ এপ্রিল টেক্সাসের হোস্টন স্পেস সেন্টারে চুড়ান্ত লড়াইয়ে তারা অংশ নিবে। ওই লড়াইয়ে ডাক পেয়ে খুশি ও আনন্দের সাথে চিন্তার রেখা দেখা দিয়েছে এসব তরুনদের কপালে। এসব ক্ষুদে বা তরুণ বিজ্ঞানীদের বাবা-মা সহ পরিবারের সদস্যর মাঝেও চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠছে। সন্তানদের এই বিশ্ব জয় যাত্রায় কিভাবে সহায়তা করবেন তারা। তাই রাষ্ট্রের পৃষ্টোপোষকতা প্রত্যাশা করছেন ক্ষুদে বিজ্ঞানী সহ তাদের পরিবার।
নাটোরের ক্ষুদে বিজ্ঞানী মাহাদি বিন ফেরদাউস জানান, বিভিন্ন সময় বিজ্ঞান প্রতিযোগীতায় অংশ নিতে গিয়ে একে অপরের সাথে পরিচয় হয়। এরপর সখ্যতা হলে তারা ‘নট এ বোরিং টিম. নামে এট দল গঠন করেন। পরে তারা নাসার উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা‘ নাসা কনরেড চ্যালেঞ্জ‘ এ অংশ নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে ১০ম স্থান অর্জন করে। প্রতিযোগীতায় বিশ্বের ৫০ দেশের প্রায় তিন হাজার চার হাজার প্রতিযোগীকে পিছনে ফেলে তারা দশম স্থান অর্জ করেছে। মাহদি জানায়, ‘নাসা কনরাড চ্যালেঞ্জ’কে খুদে উদ্যোক্তাদের বিশ্বসেরা মঞ্চ বলা হয়ে থাকে। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সের যে কেউ এতে অংশ নিতে পারেন। মোট ৪ ধাপে প্রতিযোগিতাটি সম্পন্ন হয়। প্রতিযোগিতায় প্রতিটি দলকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর কাজ করতে হয়। একটা ফিল্ডের সমস্যা সমাধান করতে হয়। তারপর সেটার মডেল বানাতে হয়। সমাধানটা বাস্তব জীবনে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতে হয়। উদ্ভাবন করার পর প্রজেক্টটিকে প্রোডাক্টে রূপান্তর করে তার একটি বিজনেস মডেল রেডি করতে হয়। মাহদি আরো জানান, স্কুলে যাতায়াতের পথে নিত্য সড়ক দুর্ঘটনা দেখেছেন। সেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে নতুন কিছু উদ্ভাবনে তারা কাজ করছেন। তারা সকলে ‘স্মার্ট রোড সেইফটি বিস্ট’ নামের প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন। ওই প্রতিযোগীতায় তারা ডাক পাওয়ায় সকলেই খুশি ও আনন্দে রয়েছেন। তবে বয়স অল্প এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের কারনে ভিসা প্রস্তুতসহ যাতাযায়ত খরচ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা ডানা বেধেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে যথা সম্ভব সহযোগীতা করা হলেও তা দিয়ে প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এমন সংশয় প্রকাশ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ত্বসীন এলাহি, রাজশাহীর নুর আহমেদ ও নওগাঁর নাদিম সাহারিয়ার। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার প্রত্যাশা করছেন তারা সকলেই। তাদের স্বপ্ন যেন দুঃস্বপ্নে পরিনত না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টরা হাত বাড়িয়ে দিবেন বলে মনে করছেন।
মাহদি বিন ফেরদাউসের পিতা নাটোরের কারিগরি স্কুলের শিক্ষক ফেরদাউস নেওয়াজ বলেন, ছেলেদের এই সাফল্যে তারা খুবই উল্লসিত ও আনন্দিত হয়েছেন। কিন্তু এই শিশুরা কিভাবে আমেরিকায় যাবে এবং এদের ভিসার ব্যবস্থা ও নিরাপত্তাসহ যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়ে শংকায় রয়েছেন তারা। তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ সকলের সহায়তা কামনা করেছেন।
নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুঞা জানান,তিনি বিষয়টি জানার পর আইসিটি মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে শিশুদের পরিবারকে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সহযোগীতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।