সাহেদুল আলম রোকন॥
চলনবিল অধূষিত কৃষি প্রধান জেলা নাটোরে উঠতি বোরো ধানকে ঘিরে চাহিদা বেড়েছে স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত ধান মাড়াই কলের। চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে বেচাকেনা চলছে ধান মাড়াই কলের। স্থানীয় চাহিদা পুরণের পাশাপাশি বাইরের জেলাগুলোতেও কদর রয়েছে এখানে উৎপাদিত ধানমাড়াই কল। নাটোরে ধান মাড়াই কল তৈরী করে বেশ সুনামের সাথে ২০-২৫ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছেন প্রস্তুতকারকরা। তবে বর্তমানে বাবলা কাঠের দুষ্প্রাপ্যতা, শ্রমিক মজুরী বৃদ্ধি,ব্যাংক ঋণ পেতে হয়রানির কারনে পুঁজির অভাবে ব্যবসা সম্প্রসারণে বাধা গ্রস্থ হচ্ছে কৃষি উপকরণ ধান মাড়াই কল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ঢালাই লোহার চাকতি,বেয়ারিং ইত্যাদি দুই-তিনটি যন্ত্রাংশ বাহির থেকে সংগ্রহ করলেও কল তৈরীতে ব্যবহৃত বাকী সব উপাদান স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়। অনেক কৃষক নিজের ধান মাড়াইয়ের পাশাপাশি ভাড়া দিয়ে বাড়তি আয় করে থাকেন।
নাটোর জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেলায় মোট ২০-২৫টি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে ধান মাড়াই কল (থেসার) তৈরী হয়। তবে নাটোর জেলা শহরে ০৭ টি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে ধানমাড়াই কল প্রস্তুত করা হয়। চাহিদার সিংহভাগই পুরণ করা হয় এই সাতটি ওর্য়াকশপ থেকে। তবে উপজেলা পর্যায়ে কিছু সংখ্যক তৈরী করা হলেও সেখানে মেরামত করা হয় বেশী। এসব উৎপাদন ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি ধান উত্তোলন মৌসুমে প্রায় ৮০০-৯০০টি ধান মাড়াই কল বিক্রি হয়ে থাকে। চাহিদা এবং টেকসইগত সুনাম থাকলেও পুঁজির অভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারছেন না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিান ঘুরে দেখা যায়, কাঠ ও লোহা দুই ধরনের ফ্রেমে তৈরী ধানমাড়াই কল আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত। গ্রাহকদের পছন্দমত পা-দানীসহ কিংবা শ্যালো মেশিন ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরী করা হয় এই মাড়াই কলগুলো।
জি কে ইঞ্জিনিয়ারিং এর কর্মকর্তা গোবিন্দ কর্মকার জানান, তিনি ইঞ্জিনিয়ার নারায়ণ বাবুর কাছ থেকে কাজ শেখার পর ১৮-২০ বছর যাবৎ তিনি নিজেই ধানমাড়াই কল তৈরী ও বিক্রি করে আসছেন। তার সাথে সহযোগী হিসেবে আরো ৬-৭ জন কাজ করে থাকে। পুঁজির অভাবে তিনি তার এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বড় করতে পারছেন না। সহজে, স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ পেলে প্রতিষ্ঠানটি বড় করে আরো লোকের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারতেন।
অপর এক প্রতিষ্ঠান এ আর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের স্বত্তাধিকারী আশরাফুল ইসলাম জানান, এবারের বর্ষায় ব্যবসায় মন্দাভাব যাচ্ছে, ধানমাড়াই কল তৈরীতে ব্যবহৃত বাবলা কাঠের সংকট ও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রমিক মজুরী বৃদ্ধি পেয়েছে, তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করা ৪ জন কারিগরকে প্রতি মাসে দিতে হয় ৩৫ হাজার টাকা।পুঁজির অভাবে তারা উচ্চ সুদে স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এসব থেসার উৎপাদন করছেন। তবে এসব কৃষি পণ্য তৈরীর উপর স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ পেলে তাদের বড় উপকার হত।তাদের তৈরী এসব ধান মাড়াই কল জেলার বাইরে টাঙ্গাইল,নওগাঁ ও দিনাজপুরেও বিক্রি হয়ে থাকে।
মাধনগরের কৃষক আমিনুল জানান, ধানমাড়াই কল দিয়ে সহজে ধান মাড়াই করা যায়। এতে গরু কিংবা মহিষের প্রয়োজন পরে না। নির্দিষ্ট মজুরীর মাধ্যমে পায়ে ঠেলে কিংবা শ্যালো মেশিনের সাহায্যে আরো অল্প পরিশ্রমে ধান মাড়াই করা যায়।এখন কৃষকরা হয় অটোমেটিক থেসার মেশিন কিংবা তুলনামূলক কম দামের এই সব ধানমাড়াই কল কিনে ধান মাড়াই করে থাকে।
বড়াইগ্রাম থেকে আসা কৃষক নিজাম উদ্দিন জানান,দামী অটোমেটিক থেসার মেশিনে ধান মাড়াই করলে খড় নষ্ট হয়ে যায়।ওই খড় গরু মহিষ খেতে চায় না। তাই তিনি সাধ্যের মধ্যে থাকা পাঁচ হাজার টাকায় তিনি এই ধানমাড়াই কলটি কিনলেন। বাড়িতে থাকা শ্যালো মেশিন দিয়ে এটি চালাবেন। আগের তুলনায় এখন কম মজুরীতে ধান মাড়াই করতে পারবেন বলে খুশি তিনি।