নাটোর অফিস ॥
মাদক কারবারীর অভিযোগ তুলে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বাদল উদ্দিন নামে এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে মারপিট করার অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে। বাগাতিপাড়া মডেল থানায় কর্মরত ওই দুই পুলিশ কনস্টেবল হলেন সজিব খান ও কনস্টেবল মো. আসাদুজ্জামান। এসময় পুলিশের একজন সোর্সসের বিরুদ্ধেও শিক্ষককে মারপিট করার সময় শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার বিকেলে এই মারধরের ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ কনস্টেবলদের দাবি তারা শিক্ষককে মারেনি তবে ওই সোর্স তাকে মেরেছে। এই ঘটনার পর ওই দুই পুলিশ কনস্টেবলকে থানা থেকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
লাঞ্চিত শিক্ষক বাদল উদ্দিন বলেন, রোববার বিকেলে স্কুল ছুটির পর তিনি মোটরসাইকেলে নাটোর শহরের বাসায় ফিরছিলেন। পথে বিকাল অনুমানিক সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার রহিমানপুর ও জিগরীর মধ্যবর্তী ক্ষিদ্র মালঞ্চি এলাকায় বাগাতিপাড়া মডেল থানা পুলিশের দুই সদস্য কনস্টেবল সজিব আলী ও আসাদুজ্জামান এবং পুলিশের স্থানীয় একজন সোর্স বিদ্যুৎ আমার পথরোধ করে। এরপর কনস্টেবল সজিব আমার হাতে হাতকড়া পরায়। এসময় বিদ্যুৎ নামের পুলিশের ওই সোর্স রড দিয়ে বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। আমি দৌড়ে পাশের একটি মাদ্রাসায় আশ্রয় নিলে এক মাদ্রাসার শিক্ষকের সামনে গিয়ে পুলিশের দুই সদস্য আমাকে বলে তোর কাছে মাদক আছে। পরে তারা তল্লাশি করার নামে আমার শরীর তল্লাশী করে । এক পর্যায়ে পুলিশের কাছে থাকা কাগজের পুরিয়া দেখিয়ে বলে এর কাছে হিরোইন পাওয়া গেছে। এরপর আমাকে হাতকড়া পরিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। কিছুদূর যেতেই গাড়ি থামিয়ে বলে কিছু টাকা দিলে তারা আমাকে ছেড়ে দিবে। এসময় স্থানীয় এক শিক্ষক আমাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসেন এবং তার অনুরোধে আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে তাদের বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠাতে বলে। পরে কন্সটেবল সজিবের মোবাইল ফোন থেকে বেশ কয়েকবার টাকার জন্য ফোন করে তারা কিন্তু আমি টাকা দেয়নি। এরপর স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমি নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি হই।
কনস্টেবল আসাদুজ্জামান জানান, সোর্সের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে ওই শিক্ষকের কাছে মাদক রয়েছে। সেই তথ্য মতে ক্ষিদ্র মালঞ্চি এলাকায় গিয়ে শিক্ষককে সার্চ করতে চাইলে তিনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যান। এসময় বিদ্যুৎ হঠাৎ করে এসে ওই শিক্ষককে মারতে থাকে। আমরা তাকে ঠেকানোর চেষ্টা করি।
কনস্টেবল সজিব আলী জানান, ঘটনার দিন আমি বিহারকোল মোড়ে অবস্থান করছিলাম। এসময় আসাদুজ্জামান ভাই আমাকে ফোন করে বলেন সোর্সের মাধ্যমে খবর পেলাম একজনের কাছে মাদক আছে সেখানে যেতে হবে। তারপর আমরা দুজনে ক্ষিদ্র মালঞ্চি যাই। সে সময় শিক্ষক বাদলকে দাঁড় করিয়ে সার্চ করতে চাইলে তিনি আসাদুজ্জামান ভাইকে ধাক্কা দেন। পরে হঠাৎ করে পুলিশের সোর্স বিদ্যুৎ সেখানে এসে ওই শিক্ষকের ওপর চড়াও হয়ে মারতে শুরু করে। যা আমরা দুজনে মিলে তাকে নিবৃত করি। পরে ওই শিক্ষকককে পুনরায় সার্চ করলে সে নিজেই তার পেছনের বাম পকেট থেকে দুই পুরিয়া হেরোইন ফেলে দেয়। পরে তাকে হাতকড়া লাগিয়ে থানায় আনার সময় স্থানীয় শিক্ষকদের সুপারিশে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিক্ষক আবু তালেব জানান, আমি আমার জান্নাতুল মাওয়া মহিলা মাদ্রাসার সামনের মাচায় বসে ছিলাম। হঠাৎ একজন দৌড়ে আসলেন সাথে পুলিশরাও আসলেন। পরে তাকে চেক করে কি যেন পেলেন। তবে আমার সামনে মাদকের পুরিয়া পাওয়ার মত এমন কোন ঘটনা ঘটেনি।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি নান্নু খান জানান, এ ঘটনায় ওই দুই পুলিশ কনস্টেবলকে সোমবার দুপুরে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে এবং পরবর্তী ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাদের পেশাদারিত্বের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই। আইন প্রয়োগের যতটুকু ক্ষেত্র রয়েছে তার বাইরে যাওয়ারও কোন সুযোগ নাই। দুই পুলিশ সদস্য তাদের দায়িত্বের বাইরে গিয়ে যদি কোনো কর্মকন্ড করে থাকেন তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এই তদন্ত চলাকালর তারা যেন কোনো প্রভাব ফেলতে না পারে সেকারনে তাদের ক্লোজড করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, কোনো ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠান নেবে না। এখন পর্যন্ত স্কুল শিক্ষক লিখিত অভিযোগ করেনি। তবুও আমরা আমাদের বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।