নাটোর অফিস ॥
নাটোরের গুরুদাসপুরে জেল ফেরত ব্যক্তির তথ্যেই নিখোঁজের দুই বছর পর মফিজুল ইসলাম নামে এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। রোববার আদালতের নির্দেশে গুরুদাসপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মেহেদি হাসান শাকিলের উপস্থিতিতে উপজেলার চাঁচকৈড় এলাকার একটি মহিলা মাদরাসার সেফটিক ট্যাংকের পাশে পুতে রাখা ওই লাশ উত্তোলন করা হয়। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ )এটিএম মইনুল ইসলাম,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) শরিফুল ইসলাম, সহকারি পুলিশ সুপার (সিংড়া সার্কেল) আক্তারুজ্জামান, গুরুদাসপুর পৌর মেয়র শাহানাজ আলী,ওসি উজ্জল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে এই লাশ উত্তোলনের খবর জানতে পেরে শত শত উৎসুখ মানুষ ঘটনাস্থলে ভির করে। এর আগে খুনের ঘটনা প্রকাশ ও নিশ্চিত হওয়ার পর শনিবার থেকে মফিজুলের মৃতদেহ পুঁতে রাখা স্থান সহ সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘিরে রাখে পুলিশ। এছাড়া এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাব- ৫ এর একটি দল শনিবার সিরাজগঞ্জের গোলচত্বর এলাকা থেকে আশরাফুল ইসলাম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানাযায়, ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার খলিফাপাড়া মহল্লার মাফিজুল ইসলাম (২৫) নিখোঁজ ছিলেন। দু’বছর পর জানা যায় তাকে খুন করা হয়েছে। তার মৃতদেহ উপজেলার চাঁচকৈড় পুরানপাড়া এলাকার একটি বালিকা মাদ্রাসার সেপটিক ট্রাঙ্কের পাশে পুঁতে রাখা হয়। অন্য একটি মামলায় কারাগারে আটক আল হাবিব সরকার (৩৫) নামে এক আসামী জাকির মুন্সি (৪০) নামে তার এক হাজতী বন্ধুর কাছে মফিজুলকে খুন করার গল্প বলে। ওই হাজতী জামিনে ছাড়া পেয়ে মফিজুলকে খুন করার বিষয়টি নিহতের পরিবারকে জানালে তারা থানা পুলিশের আশ্রয় নেন। শুক্রবার রাতে নিহত মফিজুলের মা মাইনুর বেগম বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এঘটনায় মাদ্রাসার নৈশ প্রহরি আবু তাহের খলিফা(৫৫) তাঁর মেয়ে তানজিলা খাতুন (২৮) তাঁর স্বামী আল হাবিব সরকার (৩৫) ও তাঁদের আত্মীয় আশরাফুল ইসলাম (৪২) কে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ। পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত তানজিলা খাতুন ও তাঁর বাবা আবু তাহের খলিফাকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি পুলিশের স্বীকার করেন তারা। এ মামলায় আটক চারজনসহ আরো ৩ থেকে ৪জনকে সন্দেহভাজন আসামী করা হয়েছে। এর আগে এহত্যাকান্ড নিয়ে র্যাব ৫ এর নাটোর ক্যাম্পের পক্ষে পাঠানো প্রেস রিলিজ সুত্রে জানাগেছে, নিহত মাফিজুল ইসলাম ও তানজিলা খাতুন খলিফাপাড়া মহল্লার একটি বিস্কুট ফ্যাক্টরীতে চাকরি করার সুবাদে তাঁদের মধ্যে প্রেম ও প্রনয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এনিয়ে তানজিলা -আল হাবিব দম্পত্তির মাঝে কলহ দেখাদেয়। বিষয়টি নিয়ে তানজিলার বাবার কাছে অভিযোগ করেন জামাতা।
এঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে তানজিলার বাবা ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল কৌশলে মাফিজুলকে তার বাসায় ডেকে নেয়। গভীর রাতে সেখান থেকে আবু তাহের খলিফা তার কর্মস্থল চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসার ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে মফিজুল ইসলামকে হাত-পা বেঁধে ও মুখে কচটেপ দিয়ে আসামীরা হত্যা করে। পরে প্লষ্টিকের বস্তায় ভরে মাটিতে পুঁতে রাখে বলে আসামীদের বরাত দিয়ে জানায় র্যাব। এদিকে ছেলে নিখোঁজের ঘটনায় মাফিজুলের মা গুরুদাসপুর থানায় ২০২২ সালের ৭ মে একটি জিডি (নম্বর (২৮৪)জিডি করেন।
এদিকে হত্যাকান্ডের পর তানজিলা-হাবিব দম্পত্তির মধ্যে কলহ বেড়ে যায়। একারনে ২০২২ সালের মে মাসে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন তানজিলা। এই মামলায় নাটোর জেল হাজতে রয়েছেন আল হাবিব। দীর্ঘদিন কারাবাসের সুবাদে গুরুদাসপুরের খলিফাপাড়া মহল্লার জাকির মুন্সি নামে এক ব্যক্তির সাথে জেল হাজতেই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে আল হাবিবের। আলাপ চারিতায় আল হাবিব এই হত্যাকান্ডের বিষয়টি জানায় জাকির মুন্সিকে। এদিকে জাকির মুন্সি জামিনে মুক্তি পেয়ে নিহত মাফিজুল ইসলামের পরিবারকে ঘটনাটি খুলে বলে। বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশের আশ্রয় নেয় ওই পরিবার। থানা পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত তানজিলা খাতুন ও তাঁর বাবা আবু তাহের খলিফাকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি পুলিশের স্বীকার করেন তাঁরা।
পরে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধিসহ ছায়াতদন্ত শুরু করে। র্যাব-৫, নাটোর ক্যাম্প গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িত আসামী আশরাফুল ইসলামকে শনিবার সকালে আশরাফুল ইসলামেক সিরাগঞ্জের গোলচত্ত্বর এলাকা থেকে আটক করে র্যাব সদস্যরা। এদিকে হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন নিহতের মা মাইনুর বেগম।
গুরুদাসপুর থানার ওসি উজ্জল হোসেন জানান, আদালতের অনুমতিক্রমে মফিজুলের লাশ উত্তোলনের পর ময়না তদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।