নাটোর অফিস॥
নাটোরের সিংড়ায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে স্বামী ফরহাদ হোসেনকে মৃত্যুদন্ডসহ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং নলডাঙ্গায় অপহরনের পর মুক্তিপনের জন্য স্কুল ছাত্র শিশু হত্যার ঘটনায় মোঃ রানা (২৫) নামে এক যুবককে যাবজীবন ও ফরহাদ হোসন (১৭) ও টিপু সুলতান (১০) নামে দুই নাবালককে বিভিন্ন মেয়াদে আটকাদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিজ্ঞ বিচারক (জেলা জজ) মুহাম্মদ আব্দুর রহিম পৃথক দু’টি মামলায় এই রায় ঘোষনা করেছেন। দন্ডপ্রাপ্ত মোঃ রানা নলডাঙ্গা উপজেলার গাঙ্গইল ধোপাপুকুর গ্রামের রেজাউলের ছেলে,টিপু সুলতান একই উপজেলার ধনকড়া গ্রামের নজরুলের ছেলে এবং ফরহাদ হোসেন পশ্চিম সোনাপাতিল গ্রামের কালামের ছেলে।
আদালতের স্পেশাল পিপি আনিসুর রহমান জানান,সিংড়া উপজেলার মুন্সি বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ফরহাদ হোসেন মন্ডলের সাথে একই উপজেলার বনকুড়ি গ্রামের নুর ইসলামের মেয়ে ফাতেমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতে থাকে স্বামী ফরহাদ হোসেন মন্ডল। ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর রাতে বাপের বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা এনে দেয়ার জন্য ফাতেমাকে মারপিট করতে থাকে স্বামী ফরহাদ হোসেন মন্ডল। ওই রাতে স্ত্রী ফাতেমাকে পিটিয়ে মেরে ফেলার পর স্বামী ফরহাদ আলী গা ঢাকা দেয়। পরদিন সকালে মেয়ের মৃত্যু খবর পেয়ে ফাতেমার পিতা নুর ইসলাম মেয়ের শ্বশুর বােিড়ত আসেন এবং মেয়েকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। এঘটনায় নুর ইসলাম বাদি হয়ে সিংড়া থানায় ফরহাদ হোসেন মন্ডলে,তার পিতা হামিদ আলী,মা ফরিদা ও ছোটভাই ফজলালকে আসামী করে সিংড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পর আদালত ফরহাদের মা-বাবা ও ছোট ভাইকে অব্যহতি দেন। পরে মামলাটি বিচারের জন্য আদালতে প্রেরিত হলে স্বাক্ষ্য প্রমান শেষে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিজ্ঞ বিচারক (জেলা জজ) মুহাম্মদ আব্দুর রহিম বুধবার এক রায়ে পলাতক ফরহাদ আলীকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। এছাড়া ৩০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন।
২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ব্রক্ষ্মপুর গ্রামের অনিক নামে সপ্তম শ্রেণীর ওই ছাত্র বিকেলে তার ছোট ভাই অপুর সাথে বল খেলছিল। এক পর্যায়ে ওই দিন বিকেল ৫টার দিকে বাড়ির একটি মোবাইল ফোন (০১৭৭৪-২৩৮৪৯৭) নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু রাতেও ফিরে না আসায় খোজাখুজি করে কোথাও পাওয়া যায়না। পরদিন ওই মোবাইলে অনিকের মায়ের সাথে কথা বলে মুক্তিপণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। বিষয়টি নলডাঙ্গা পুলিশকে জানানো হলে পুলিশও অনিকের খোঁজে মাঠে নামে। কিন্তু কোথাও অনিককে পাওয়া যায়না। কদিন পর ১৮ নভেম্বর বাড়ির অদুরে একটি মাঠ থেকে অনিকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ অনিকের মৃতদেহ উদ্ধার সহ ঘটনার সাথে জড়িত রনামফরহাদ ও টিপু সুলতানকে গ্রেফতার করে। এঘটনায় অনিকের নানা জফির উদ্দিন প্রামানিক বাদি হয়ে নলডাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করার পর মামলাটি বিচারের জন্য অত্র আদালতে প্রেরিত হলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিজ্ঞ বিচারক (জেলা জজ) মুহাম্মদ আব্দুর রহিম বুধবার এক রায়ে যুবক রানাকে ৩০২/৩৪ ধারা ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত/২০০৩) এর ৮ ধারায় যাবজ্জীন কারাদন্ড এবং দুটিতেই ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। এছাড়া পেনাল কোড এর ২০১ ধারায় আরো ৩ বছরের কারাদন্ড সহ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় রানাকে। অপরদিকে নাবালক হওয়ায় অভিযুক্ত ফরহাদকে ১০ বছর ও টিপুকে ৩ বছরের আটকাদেশ প্রদান করেন বিচারক।