নাটোর অফিস॥
নাটোরের বড়াইগ্রামে অফিস কক্ষে ঢুকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুর রউফকে কিল-চড় ও থাপ্পর মেরে লাঞ্ছিত করা সহ অফিসের
আসাবাবপত্র ভাংচুর করা হয়েছে। স্থানীয় নাটোর-৪ আসনের উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও দ্বাদ্শ সংসদে নৌকার প্রার্থী ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারীর অনুসারী রুবেল বালি, সাংসদের ভাগিনা জহির উদ্দিন, শামসুদ্দিন, জামাল উদ্দিন, বাহাউদ্দিন নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ জন যুবক বড়াইগ্রাম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আব্দুর রউফকে লাঞ্ছিত করে। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে অফিস চত্বরের সিসিটিভির ধারনকৃত ফুটেজ দেখে ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করা হচ্ছে। একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রউফ বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) ছিল উপজেলা থেকে এমপিও আবেদন ছেরে দেওয়া শেষ দিন। আমি অফিসে বসে দাপ্তরিক কাজ করছিলাম। এমন সময় ১৫-১৬ জন যুবক হঠাৎ আমার রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি তাদের আগমনের কারন জানতে চাইলে রুবেল বালি নামে একজন এসে আমার ডান হাত ধরে “ বলতে থাকে এই হাতটা নেওয়ার হুমুক আছে, এই হাত নিয়ে এমপিকে দিতে হবে।” অপরজন বলে মেশিন বের কর, একে শেষ করে দে”। বলে আমাকে চেয়ার থেকে তুলে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করে এবং অফিসের টেবিল-চেয়ার তছনছ করে। এসময় আরও ১৫-২০ জন বাহিরে দরজা আটকে থাকে। ফলে অন্য কেউ আমার রুমে প্রবেশ করতে পারছিলেন না। আমি প্রাণ ভায়ে হিতাহিত জ্ঞান শুন্য হয়ে পরি।
উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার মনিরুজ্জামান বলেন, আমি নিচতলায় বসি। স্যারকে (মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার) রুমে আটকে লাঞ্চিত করা হচ্ছে যুব উন্নয়ন অফিসের অফিস সহায়ক করিমের মাধ্যমে এমন খবর পেয়ে দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে ধাক্কা দেই। এসময় একজন বের হয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে সজরে ধাক্কা দিতে দিতে সরিয়ে দেয়। পরে মোবাইল ফোনে বিষয়টি ইউএনও স্যারকে জানাই।
খবর পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বোরহান উদ্দিন মিঠু, বনপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম, এসআই শরিফুল ইসলাম, আব্দুল বারেক, ডিএসবি’র এসআই মিনার আলী ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এদিকে উপজেলার সকল কর্মকর্তা ইউএনওর রুমে বসে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করেন। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আতাউর রহমান, বনপাড়া পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন ইউএনও দপ্তরে যান। তারাও ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান।
এসময় উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমীর হামজা রানা, কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে অফিসে এসে কর্মকর্তারা হামলার স্বীকার হলে তো এখানে কাজ করার পরিবেশ থাকবে না। কোন অফিসার কাজ করতে পারবে না।
বড়াইগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ শফিউল আযম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনা তদন্তে এসআই শরীফুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়্ াহয়েছে। অপরদিকে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইউএনও আবু রাসেল বলেন, সিসি টিভি ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত করা হচ্ছে। সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, এ বিষয়ে মাধ্যমিক অফিসার আব্দুর রউফ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করবেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) আতাউর রহমান বলেন, বড়াইগ্রাম উপজেলায় এই প্রথম এমন ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটলো। উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত সাংসদ নিয়োগ বানিজ্য করতেই তার প্রত্যক্ষ মদদে এমনটা ঘটলো।
জানতে চাইলে সংসদ সদস্য ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই অবগত নই। আমার নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ অপকর্ম করলে আমি কেন এর দায়ভার নেবো। অপরাধী যেই হোক আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।