নাটোর অফিস ॥
কক্সবাজার সৈকতে উদ্ধার হওয়া দুই জনের মৃতদেহ নাটোরের বড়াইগ্রামের দম্পত্তি আবুল কাশেম বকুল ও সাবিকুন্নাহার সুমার। তারা গত শনিবার কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে গিয়ে পাঁচ তারকা হোটেল সীগালে ওঠেন। পরদিন সকালে সাগরে গোসল করতে নেমে তারা ঢেউয়ে ভেসে যায়। পরে টুরিস্ট পুলিশের একটি দল লাবণী পয়েন্টে ভাসমান অবস্থায় তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। নিহতদের গ্রামের বাড়ি বড়াইগ্রামে চলছে শোকের মাতম।
শোকাহত নানির চোখের পানি মুছে দিয়ে শান্তনা দিচ্ছে কক্সবাজার সৈকতে মৃত্যু বরনকারী দম্পত্তির চার বছরের শিশু সন্তান ইয়াস আহমেদ। একসাথে বাবা-মার মৃত্যুতে গোটা পরিবার সহ এলাকাবাসী শোকাহত হলেও ওই অবুঝ শিশু কিছুই বুঝে ওঠেনি। এদিকে ছেলে ও পুত্রবধুকে হারিয়ে বুক চাপরিয়ে কেঁদে যাচ্ছেন মা হুসনেয়ারা। নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া পৌসভার দিয়ারপাড়া গ্রামের মরহুম বোরহান উদ্দিনের ছেলে আবুল কাশেম বকুল ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাকে হারিয়ে পরিবারের সদস্য সহ এলাকাবাসী শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন। ঢাকার একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানে চাকরীর সুবাদে শনিবার চট্রগ্রাম গিয়েছিলেন বকুল। আনাস আহমেদ সহ অপর দুই নাবালক সন্তান ১১ বছরের বুশরা খাতুন ও ৫ বছরের আনাস আব্দুল্লাহ নানীবাড়ি দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে বেড়াতে যাওয়ায় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার সুমাকে সাথে নিয়ে যান তিনি। পরে দুদিনের ছুটি কাটাতে স্ত্রীকে নিয়ে কক্সবাজার সৈকতে যান বকুল। কিন্তু সেই যাওয়াই তাদের কাল হয়েছে। বাড়িতে খবর আসে সমুদ্রে তলিয়ে গেয়ে তাদের দুজনার মৃত্যু হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যুতে এতিম হয়ে পড়ে নাবালক তিনটি শিশু। এমনকি বকুলের মৃত্যুতে গোটা পরিবার এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। প্রতিবেশীরা শান্তনা দিতে গিয়ে নিজেরাই চোখের পানি ফেলছেন। এতিম শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন তারা।
বড় মেয়ের নাম বুশরা, বয়স ১১। দ্বিতীয় সন্তান ছেলে আনাসের বয়স ৮ বছর। এবং ছোট ছেলে ইয়াসের বয়স ৫। অপেক্ষায় তারা, কখন আসবে তাদের মা-বাবা। মেয়ে বুশরা মা-বাবা জীবিত আসবে না বুঝলেও ছোট দুই ভাই জানে কক্সবাজার থেকে তাদের জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসবে মা-বাবা। বাড়ির কোনে রাখা দুইটি স্টিলের খাটিয়া দেখে আতœীয়-স্বজনেরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় কবরাস্থানে পাশাপাশি দুইটি কবর খোঁড়া হয়েছে। সেখানেই চিরকালের জন্য শুইয়ে রাখা হবে তাদের মা-বাবাকে।
নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া পৌর শহরের দিয়ারপাড়া এলাকার আবুল কাশেম বকুল (৪২) ও সাবিকুন নাহার সুমা (৩৪) রবিবার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজারের সমুদ্রে ডুবে মারা গেছে। বকুল দিয়ারপাড়া এলাকার মৃত বোরহানউদ্দিন আহমেদ এর ছেলে ও সুমা দিনাজপুর চিরিরবন্দরের সুলতান আলীর একমাত্র মেয়ে।
বকুলের শাশুড়ি নুরুন নাহার বলেন, রোববার সকাল নয়টার সময় আমার সাথে সর্বশেষ কথা হয়েছিল। তখন জানিয়েছিল সমুত্রে ঘুরতে জাবে। সেখান থেকে ফিলে এসে দুপুর দুইটার ট্রেনে ঢাকায় ফিরবে। পরে ফোন দিয়ে আর রিসিভ হয় না। পরে জানতে পারি তারা মারা গেছে। এই ছোট বাচ্চাদের এখন কি হবে। কে দেখবে।
তিনি আরো বলেন, ৬ মাস আগে বাবার মারা যায় সাবিনুর নাহার সুমার। বাসায় মন খারাপ করে থাকত। তাই দেখে জামাই মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিল কক্সবাজার।
তিনি আরো বলেন, ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে ¯œাতকত্তর শেষ করে নিউ সিটি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করে। ছেলে মেয়েদের কথা ভেবে ১৭ সালে চাকুরি ছেরে দেয়। এখন এই ছেলে মেয়েদের কে দেখবে।
নিহত বকুলের বড় ভাই আবু তাহের জানান, তার ভাই আবুল কাশেম বকুল একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন এবং স্বপরিবারে ঢাকার ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় থাকতেন। অফিসিয়াল ট্যুর হিসেবে স্ত্রীকে নিয়ে শনিবার কক্সবাজারে বেড়াতে যায় বকুল। তাদের তিন সন্তানকে নানীর কাছে রেখে যায় তারা। তিনি ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের উপ-পরিদর্শক চাঁন মিয়ার বরাত দিয়ে আরও জানান, রোববার সকালে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে গোসলে নামে তারা। সেখানে ঢেউয়ের সাথে স্ত্রী সুমাকে ডুবে যেতে দেখে বকুল বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে। পরে তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে সী-সেইফ লাইফ গার্ড এর কর্মীরা তাদের দু’জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
বনপাড়া পৌর মেয়র কেএম জাকির হোসেন জানান, নিহতরা সম্পর্কে তার খালাতো ভাই ও ভাই বউ। তাদের এই অকাল মৃত্যু বড়ই বেদনাদায়ক। তাদের এতিম তিন সন্তানের ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে পৌর মেয়র হিসেবে ও পাশাপাশি তাদের চাচা হিসেবে সবসময় পাশে থাকবেন বলে তিনি জানান। আজ সোমবার দুপুরের মধ্যে তাদের মৃতদেহ বড়াইগ্রামে আসার পর ধর্মীয় আচারে দাফন করা হবে। তাদের মৃতদেহ আনতে গতরাতেই কক্সবাজার গাড়ি পাঠানো হয়েছে।