নাটোর অফিস ॥
নাটোরে আবারো সাদা মাইক্রেবাসে করে অপহরণের ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া গেছে। গতাকল শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) মুখোশধারীরা এক ব্যাক্তিকে সাদা মাইক্রোতে তুলে নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শি সুত্রে জানা গেছে। এবার খোদ নাটোর শহরের ব্যস্ততম এলাকা থেকে মুখোশধারীরা সাদা মাইক্রোতে করে তুলে নিয়ে যায়। অবশ্য ওই ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে তদন্ত শুরু করে। তবে পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের বড়াগাছা এলাকার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজ মসজিদের সামনে থেকে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিকে একটি মাইক্রোতে তুলে নিয়ে যায় মুখোশধারীরা। শুক্রবার শহরের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তবে দুই একটি চায়ের দোকান খোলা ছিল। তবে ওই অপহরণ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এবং পুলিশের উপস্থিতি দেখে ঝামেলা এড়াতে সেই চায়ের দোকানগুলোও বন্ধ করে বাড়ি চলে যান দোকানীরা। সরকারী কলেজ মসজিদের সামনে থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির অপহরণ ঘটনা সহ গত দুই মাসে নাটোরে ১০ টি গুপ্ত হামলাসহ ১ টি গুলিবর্ষনের ঘটনা ঘটে । এসব ঘটনা নিয়ে বেশ কয়েক মামলা হলেও কোন গ্রেফতার নেই।
বিশেষ সুত্রে নবাব সিরাজ-উদ দৌলা সরাকলী কলেজ মসজিদের সামনে থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে মাইক্রেবাসে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার খবর জানতে পেরে এই প্রতিবেদক সহ অনেকেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে ফোন করেন। ফোন রিসিভ না করায় সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়না। বিষয়টি জানতে পুলিশের পেইজে ঘটনাটি জানতে চাওয়ার পর পুলিশ তৎপর হয়। সাদা পোশাকের পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অনুসন্ধান সহ তদন্ত শুরু করে। কিন্তু পুলিশ তাৎক্ষনিক কোন তথ্য জানাতে পারেনি ।
স্থানীয়দের একজন জানান, সন্ধ্যায় সাদা রংয়ের একটি মাইক্রোবাস এসে নবাব সিরাজ উদ দৌলা কলেজ মসজিদের সামনে দাঁড়ায়। এসময় মুখোশধারীরা ২/৩ জন মাইক্রো থেকে নেমে এক ব্যক্তিতে মাইক্রোতে তুলে নিয়ে চলে যায়। তুলে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে চিনতে পারেননি।
নাটোর গোয়েন্দা পুলিশের ( ডিএসবি) কর্মকর্তা এসআই আশরুফুল ইসলাম জানান, এই খবর পাওয়ার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অনুসন্ধান করে। তবে ঘটনার সত্যতা খুজে পাওয়া যায়নি। তবে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।
এদিকে শনিবার ডিএসবি ওসি কাজী জালাল উদ্দিন পুলিশের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে পোষ্ট দিয়ে জানান, বড়গাছা বউবাজার এলাকার ইয়াসিন কসাইয়ের কিশোর ছেলে মোঃ নিয়াদ শুক্রবার রাত্রি আনুমানিক ৭ টার দিকে
এনএস সরকারী কলেজের মসজিদের সামনে দিয়ে নিজ বাসার দিকে যাচ্ছিল। এসময় একটি মোটরসাইকেলে দুইজন আরোহী তাকে অতিক্রম করে একটু সামনে গিয়ে থেমে যায়। তারা নিয়াদের কাছে গিয়ে বলে যে, তুই কি আমাকে কি বলেছিস? নিয়াদ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে চরথাপ্পর মারতে শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে পার্শ্ববর্তী মাঠে জোরপূর্বক নিয়ে গিয়ে তাকে কিল ঘুষি মারে। পরে তারা মোটর সাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে নিয়াদকে নিজ বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে যায়। এবিষয়ে নিয়াদকে জিজ্ঞাসাবাদে সে ওই ঘটনার কথা জানায়। তবে তাকে কারা মেরেছে বা কেন মেরেছে সে কথা বলতে পারে নাই নিয়াদ এবং কাউকে চিনতেও পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে কোন না কোন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে পুর্বের দ্বন্দ্ব ছিল। বর্তমান নিয়াদ তার বাসায় রয়েছে। কিশোর নিয়াদের সাথে পুর্বের কোন শত্রুতার কারণে এবং নিজেদের মধ্যে কোন বিষয়ে মনোমালিন্যের কারণে ঘটনাটি ঘটতে পারে মর্মে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বলে ওই হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য , চলতি বছরের অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয় গুপ্ত হামলা। এসব হামলার শিকার হয়েছেন ১১ জন। হামলার শিকার হওয়া সকলেই বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী। নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় ঘটে এমন হামলার প্রথম ঘটনা। এসব হামলার মধ্যে ৬ জন নলডাঙ্গায়, ৩ জন সদর উপজেলায় এবং ১ জন করে লালপুর ও সিংড়া উপজেলায়। নলডাঙ্গায় গুপ্ত হামলার শিকার হন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ফজলুর রহমান, খাজুরা ইউনিয়নের জামায়াতের আমীর মোশারফ হোসেন, জামায়াত নেতা নুশরাত, জামায়াত নেতা আলাউদ্দিন আলাল,যুবদল নেতা সজিব হোসেন, উপজেলায় উপজেলা মৎস্যজীবি দলের সভাপতি আবু রায়হান , সদর উপজেলার মাঝদিঘা নুরানী হফেজি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সাইদুল ইসলাম,বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম (গুলিবিদ্ধ) ও শুক্রবারে অপহৃত অজ্ঞাত ব্যক্তি এবং সিংড়া উপজেলা ছাতারদিঘী ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী হাফেজ আব্দুর রাজ্জাক ও লালপুর উপজেলায় লালপুরে ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাসুদ রানা।
জেলা পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম এসব ঘটনার বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, এসব হামলার প্রতিটি ঘটনা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।