নাটোর: আওয়ামী লীগের ‘কনফার্ম সিট’ নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নিজেদেরই রাখতে চায় দলটি। তাই এ আসনে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেতে চলেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস- দাবী তার সমর্থকদের। এমন খবরে গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রামে মিষ্টি বিতরণ করেছেন তার সমর্থকরা।
অপরদিকে কুদ্দুসকে মনোনয়ন না দেয়ার দাবীতে এখনও তৎপর এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চাওয়া কেউ কেউ। চুড়ান্ত দলীয় মনোনীত প্রার্থী ঘোষণারও আগ মুহূর্তে তারা নিজেরা আড়ালে থেকে নিজস্ব বলয়ের কর্মীদের দ্বারা মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করছেন। এ দাবীতে সম্প্রতি গুরুদাসপুরে ও বড়াইগ্রামে কাফন মিছিল করেছে কুদ্দুস বিরোধীরা।
তবে চলতি মাসের ১৭ তারিখের পর থেকে নিজেদের ভোটকেন্দ্রিক তৎপরতা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছেন হেভিওয়েট দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা ও ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী। একটি বিশেষ সূত্রমতে, স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধিদের মনোনয়ন দেয়া হবে না এমনটি জানার পর তারা নি®প্রভ হয়েছেন। এ দলে রয়েছেন রাবির সাবেক ছাত্রনেতা আহমদ আলী মোল্লাও।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে মনোনয়ন বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য ও নৌকা প্রতীকের বিরোধীতাসহ বেশ কিছু অভিন্ন অভিযোগ বছরজুড়েই তুলেছেন গুরুদাসপুর পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা ও বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান। তাই তাদের মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে অনেকটা শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা এ আসনের ভোটারদেরও। তবে তারা দুজনেই আশা করছেন, কর্মী ঘনিষ্ট ও তৃণমূল মানুষের প্রিয় ও পছন্দের হওয়ায় তারা মনোনয়ন পাবেন। যদি না পান তবে অঙ্গীকার করেছেন দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার। তবে দুজনই অভিন্নসুরে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, আব্দুল কুদ্দুস দল মনোনীত প্রার্থী হলে তারা কুদ্দুসের পক্ষে কাজ করলেও দুই উপজেলার বঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সচেতন ভোটাররা পাশে থাকবে না।
মনোনয়ন প্রত্যাশী গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা বলেন, ‘উপজেলায় দলের দায়িত্বশীল একটি পদে থেকে কখনই দলের গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করব না বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকা দেবেন, তার পক্ষেই কাজ করব।’
জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক, বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘দলের প্রতি আমার আনুগত্য রয়েছে। নেত্রীর নির্দেশ অমান্য করবো না।’
তবে দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী শংকিত যে, সাংসদ আব্দুল কুদ্দুস দলীয় মনোনয়ন পেলে তৃণমূলের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঠেকানো সম্ভব হবে না। তবে পৃথকভাবে দুজনেই আশ্বস্ত করেছেন, তারা দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন না।
অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী রাবির সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি আহম্মদ আলী মোল্লা বলেন,‘ গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রামের মানুষ সাংসদ কুদ্দুসের প্রতি এতোটাই বিতশ্রদ্ধ যে, তারা তার বিরুদ্ধে কাফনের কাপড় মাথায় দিয়ে মনোনয়ন না দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর মিনতি করছেন। আমি প্রত্যাশা করি প্রধানমন্ত্রী জনগণের ভাষা বুঝবেন।’
দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে নির্বাচন করবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে আহমদ আলী জানান, যে দলের জন্য তিনি রাজনীতি করেন, সে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে তিনি কিছু করবেন না।
দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এমন বক্তব্যে অনেকটাই নিশ্চিত যে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নৌকার মাঝি হতে চলেছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস।