নাটোর॥ নাটোরের বাগাতিপাড়ায় গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে এক ভন্ড কবিরাজ একই পরিবারের ডিগ্রী পড়–য়া এক মেয়ে ও মানসিক প্রতিবন্ধী অপর মেয়েকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে এদের একজনকে বিয়ের নাটক করে আর প্রতিবন্ধী আরেকজনকে শ্বাসকষ্টের চিকিৎসার নামে নাটক করে ধর্ষণ করে ওই কবিরাজ। পিতৃহারা ওই দুই মেয়েকে ধর্ষণের বর্ণনা দিয়েছেন তাদেরই মা।
শনিবার প্রতিবাদী এলাকাবাসী ভন্ডামীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওই কবিরাজ ও তার সহযোগীকে আটক করে পিটুনী দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। ঘটনার সময় অকপটে নিজের ভন্ডামী শিকার করেছে ভন্ড কবিরাজ নাটোরের লালপুর উপজেলার বড়বড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ইয়ার উদ্দিন মোল্লার ছেলে নজরুল ইসলাম ওরফে নজরুল ফকির (৫০) ও তার সহযোগী একই উপজেলার আব্দুলপুর পশ্চিমপাড়ার আরশেদ আলীর ছেলে আব্দুস সালাম (৩৭)।
নির্যাতিত পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে সহযোগী আব্দুস সালাম প্রথম তার প্রতিবন্ধী ফুপাত বোনের শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কবিরাজ নজরুলকে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড়ে ফুপুর বাড়িতে নিয়ে আসে। সে সময় টোটকা চিকিৎসা দেওয়ার ফাঁকে কু-দৃষ্টি পড়ে ওই প্রতিবন্ধীর মেজো বোন ডিগ্রী পড়ুয়া মেধাবী ছাত্রীর ওপর। এরপরই গুপ্তধনের ফাঁদ পাতে নজরুল। সে প্রতিবন্ধী ওই নারীর পরিবারকে জানায়, তাদের ঘরের মেঝেতে মাটির নিচে দুইশ’ কোটি টাকা মূল্যের গুপ্তধন রয়েছে। ওই সম্পদ শুধুমাত্র নজরুল ফকিরই উদ্ধার করে দিতে পারবে। পরিবারটিতে এমন বিশ্বাস তৈরি করে কবিরাজ। এরপর ওই মেঝেতে তৈরি করে আসন। সেখানে ধ্যানের ভান করে নিয়মিত তপস্যার নাটক চালিয়ে যেতে থাকে কবিরাজ নজরুল। ধ্যানের সময় গভীর রাতে জ্বালিয়ে রাখা হত আগরবাতি, মোমবাতি। আর প্রতিবন্ধী নারীর পুরো পরিবারের সদস্যদের বসিয়ে রাখা হত আসনের সামনে। সেখানে তৈরি হত তাবিজ। সেই তাবিজ দিয়েই চলত শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা। এভাবে চলে বছর খানেক। সুযোগ বুঝেই শর্ত আরোপ করে কবিরাজ। ডিগ্রী পড়ুয়া সেই মেয়েকে তার (কবিরাজ) সাথে বিয়ে দিলেই কেবল পেতে পারে গুপ্তধণ। এমন আরও কৌশল অবলম্বন করে মাকে বাধ্য করে বাবা হারা মেয়েকে নাটক করে বিয়ে করে সেই কবিরাজ। এদিকে বিয়ের মাস দুয়েক পর কবিরাজের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে প্রতিবন্ধী মেয়েটির ওপর। শ্বাসকষ্টের চিকিৎসার নামে কবিরাজের সাথে রাত যাপনে বাধ্য করে মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে। শনিবার পরিবারের সবাই জানতে পারে তাকে উপর্যপুরি ধর্ষণের ভয়ানক ঘটনা। সাংবাদিকদের কাছে এসব ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মা। অন্যদিকে এসব ভন্ডামীর ঘটনার খবর লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে।
শনিবার চিকিৎসার নামে আসনে বসার খবর টের পেয়ে এলাকাবাসী বাড়িটি ঘিরে ফেলে। এলাকাবাসীরা তাকে মাটি খুঁড়ে গুপ্তধণ বের করতে বলে। তখন ভন্ড কবিরাজ নজরুল নিজেই তার পাতা আসনের সামনে ঘরের মেঝেতে মাটি খুঁড়তে থাকে। কবর সমান মাটি খুঁড়েও কোন গুপ্তধন না পেয়ে এলাকাবাসী তাকে উত্তম-মাধ্যম দিয়ে আটকে রাখে। জানতে পেরে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইয়াসিন আলী পুলিশে খবর দেয়। পরে বাগাতিপাড়া মডেল থানা পুলিশ খবর পেয়ে ভন্ড নজরুল ফকির ও তার সহযোগী আব্দুস সালামকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি আতাউর রহমান বলেছেন আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, এখনো কেউ মামলা করেনি। মামলা করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।