নাটোর অফিস ॥
ভাল বেতনের চাকরী সহ বিয়ের প্রলোভন দিয়ে নাটোর থেকে এক গৃহবধুকে অপহরনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে সাতক্ষিরার সীমান্ত এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব। এসময় অপহরণকারী দলের সদস্য অপহরণের মুল হোতা শাজাহান আলী(৩০) ও তার সহযোগী মোঃ কবির হোসেনকে (৩৮) গ্রেফতার করা হয়। রোববার (১০সেপ্টেম্বর) অপহরন মামলা দায়েরের পর র্যাব-৫ নাটোর ক্যাম্পের একদল সদস্য র্যাব-৬ যশোহর ক্যাম্পের সহয়তায় সাতক্ষিরার কালারোয়া উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী সোনাবাড়িয়া এলাকা থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে র্যাব সদস্যরা। মঙ্গলবার র্যাব-৫ নাটোর ক্যাম্পের এর একটি প্রেস রিলিজের মাধ্যমে কোম্পাণী অধিনায়ক মেজর আশিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, অপহরণ চক্রের মুল হোতা গ্রেফতারকৃত শাজাহান যশোহরের মনিরামপুর উপজেলার মশ্বিমনগর এলাকার সোবাহান আলীর ছেলে এবং মোঃ কবির হোসেন একই উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের মোঃ আব্দুল কাদেরের ছেলে।
সিপিসি-২, র্যাব-৫ এর নাটোর ক্যাম্প থেকে মঙ্গলবার (১২) সেপ্টেম্বর পাঠানো প্রেস রিলিজে জানানো হয়েছে, মামলার ভিকটিম একজন বিবাহিত নারী। ৭ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে ভিকটিমের সাথে নাটোর সদর থানাধীন জনৈক ওয়াসিম আকরাম এর বিয়ে হয়। গত ২ মাস আগে ভিকটিমের সাথে অপহরণ চক্রের মূলহোতা মোঃ শাহজাহান এর সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার পর থেকেই শাহজাহান ভিকটিমকে ভাল বেতনে চাকুরীসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখাতো। শাহজাহান ভিকটিমকে বিভিন্ন প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে ভিকটিমের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কৌশলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচার করার উদ্দেশ্যে গত ৯ সেপ্টেম্বর দেড়টার দিকে মামলার ভিকটিম বাজার যাওয়ার জন্য বাড়ী হতে বের হলে তাকে অপরহণ করা হয়। এসময় ভিকটিমকে অপহ ণের পর একটি সিএনজিতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় বিয়ের প্রলোভন দেয়া হয় ভিকটিমকে। পরদিকে ভিকটিমের স্বামী ওয়াসিম আকরাম (২৮) বাদী হয়ে নাটোর সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। অপহরণের ওই মামলা দায়েরের পর থেকেই র্যাব -৫এর সদস্যরা ভিকটিমকে উদ্ধার এবং আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে। র্যাব ৫ এর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আসামী এবং ভিকটিমের অবস্থান যশোহরে সনাক্ত করে র্যাব-৫। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের অবস্থান পর র্যাব-৫ এর পক্ষ থেকে র্যাব-৬, যশোর ক্যাম্পকে অবহিত করা হয়। পরবর্তীতে র্যাব-৫ ও র্যাব-৬ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল বিশেষ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সাতক্ষীরা জেলার কলোরোয়া থানাধীন সীমান্তবর্তী সোনাবাড়িয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধারসহ অপহরণ চক্রের মুলহোতা মোঃ শাহজাহান ও মোঃ কবির হোসেন কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।ভিকটিমের অপহরণ মামলা রুজুর ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভিকটিমকে উদ্ধারসহ অপহরণ চক্রের ২ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব।
র্যাব-৫ নাটোর ক্যাম্পের কোম্পাণী অধিনায়ক মেজর আশিকুর রহমান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেগ্রেফতারকৃত অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা মোঃ শাহজাহান জানায়, সে ছোট থাকা অবস্থায় তার মা তাকে নিয়ে ভারতে চলে যায়। পরবর্তীতে গত ছয় বছর আগে সে আবারো বাংলাদেশে আসে এবং যশোহরের মনিরামপুরের তার বাবা সোবহান আলীর কাছে থাকে। মূলত সে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মেয়েদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে এবং সেই মেয়েদের ভারতে পাচার করে মোটা অংকের টাকা আয় করে থাকে। এই কাজে তাকে তার বোন জামাই (সহযোগী আসামী) মোঃ কবির হোসেন সহ আরো অনেকেই সহযোগীতা করে থাকে বলেও জানা যায় সে। এছাড়া গ্রেফতারকৃত অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা মোঃ শাহজাহান এর ভারত এবং বাংলাদেশ দুই দেশেরই নাগরিকত্ব থাকায় আইনশৃংখলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে উক্ত কাজ করা সহজ ছিল। পরে গ্রেফতারকৃত ওই দুইজহজনকে মঙ্গলবার নাটোর সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
নাটোর থানার ওসি নাছিম আহমেদ জানান অভিযানে র্যাবের সাথে নাটোর জেলা পুলিশও অভিযানে অংশ নিয়েছিল। র্যাব-৬ এর সহায়তায় ভিকটিমকে উদ্ধার সহ দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়।