নাটোর অফিস ॥
নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনেরসংসদ সদস্য ও নাটোর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আব্দুল কুদ্দুস মারা গেছেন। আজ বুধবার সকাল ৭টা ২২ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। বিষয়টি নিশ্চিত করেন নাটোর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান।
অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে কুহেলি কুদ্দুস জানান, শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে সংসদ আব্দুল কুদ্দুসকে শনিবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় ঢাকায় নেয়া হয়। ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করার পর অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকায় তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিউতে) নেয়া হয়। শনিবার রাত থেকে সেখানেই রাখা হয়েছিল তাকে। সেখানেই আজ সকালে তার মৃত্যু হয়।
প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের পৈতৃক বাড়ি নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার চলনবিল অধ্যুষিত বিলসা গ্রামে। তিনি পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সপ্তম সংসদে তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি রাজশাহী কলেজের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন । এছাড়া তিনি বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আব্দুল কুদ্দুস মুক্তি যুদ্ধকালীন সময়ে ভারতে ট্রেনিং নিয়ে মুজিব বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার ও সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।
বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান বলেন, সোমবার সন্ধায় শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাঁকে নিজ বাসভবনে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট নিয়ে দ্রুত রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শ্বাসকষ্ট কন্ট্রোল করা কঠিন হচ্ছিলো এবং অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাচ্ছিলো। যার কারনে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই বুধবার সকালে তিনি শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মিয়াজী বলেন, মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক কন্যা ও এক ছেলে রেখে গেছেন। তিনি সাতবার এই আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনায়ন পেয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পাঁচবার সাংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সপ্তম জাতীয় সংসদে তিনি মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়া তিনি শিক্ষা মন্ত্রণলায় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে বর্তমান মেয়াদে নিযুক্ত ছিলেন।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এর মৃতূতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। শোক বিবৃতিতে জননেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মহান মুক্তিযুদ্ধে ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে তার অবদান শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
নাটোর -(সিংড়া) আসনের সংসদ সদস্য ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার শোক বার্তায় লিখেছেন নাটোর জেলা আওয়াামী লীগের সম্মানিত সভাপতি এবং গুরুদাসপুর বড়াইগ্রাম থেকে বার বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সফল প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউ)। উনার মৃত্যুতে নাটোর জেলা ও সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।আমি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।মহান আল্লহতালা তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।
এছাড়া শোক জানিয়েছেন নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল,নাটোর-২-(সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল,সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ, সাবেক ক্রিড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার।
এদিকে বর্ষিয়ান সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি কাজী গোলাম মোর্শদ। দুলু তার শোক বার্তায় বলেছেন,নাটোরের এই প্রবীণ রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে ৫ম সংসদে এক সাথে ছিলাম। তিনি বিরোধী দলের সংসদ সদস্য হলেও তার সাথে সুসম্পর্ক ছিল। বর্ষীয়ান এই সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের জীবনাবসনে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।