নাটোর অফিস॥
নাটোরের বড়াইগ্রামে চাষিরা সরিষা আবাদে দিনকে দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এবার অনুকূল আবহাওয়ায় ফলন বাম্পার হয়েছে। সরিষার বাজার দরও ভালো। ফলে বাড়তি ফসল হিসেবে বড়াইগ্রামের চাষিরা গত বছরের তুলনায় এবার আরও বেশি সরিষা চাষ করেছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ক্রমান্বয়ে উপজেলায় সরিষা চাষ ও ফলন দুই-ই বেড়েছে। উপজেলায় এবার ১ হাজার ৭৫৩ হেক্টরে সরিষার চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে সরিষা ফলন হয়েছে অন্তত দেড় মেট্রিক টন। গত বছর উপজেলায় সরিষার চাষ হয়েছিল ৮শত ৯৮ হেক্টরে। সরিষা ফলেছিল প্রতি হেক্টরে সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন। আগের বছর চাষ হয়েছিল ৩ হাজার ৮০ হেক্টরে। উপজেলায় গত চার বছরে হেক্টর প্রতি গড়ে সরিষা ফলেছিল ১ দশমিক ২০ মেট্রিক টন।
উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা শামিম রেজা বলেন, সরিষা আবাদের উপযুক্ত তাপমাত্রা ২২ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার সরিষার মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়।
বিভিন্ন হাটবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি মণ সরিষা বাজারে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৫শত টাকা পর্যন্ত। গত বছরে একই পরিমাণ সরিষার বাজার দর ছিল ২ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত।গোপালপুর ইউনিয়নের গড়মাটি গ্রামের চাষি আতিকুল ইসলাম খান বলেন, আগে এক একর জমিতে পাঁচ বছর ধরে চাষ করে সরিষা পাইছি ৫ থেকে ৬ মন। এই বছর চাষ করছি ৩ একর জমিতে। ফলন পাইছি প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ৯ মন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, অনুকূল আবহাওয়া ও ভালো মানের বীজ সরবরাহ থাকায় উপজেলায় সরিষার ফলন বেড়েছে। সরিষার দুটি জাত বারি সরিষা ১৪ ও ১৫ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। এই সরিষার মান ও ফলন অনেক ভালো। পাঁচ কেজি বারি সরিষায় তেল হয় পৌনে চার থেকে চার কেজি পর্যন্ত একই পরিমাণ স্থানীয় জাতের সরিষায় তেল হয় সর্বোচ্চ সোয়া তিন কেজি।
সূত্রটি আরও জানায়, সরিষা চাষে লাভ অনেক বেশি। অন্য ফসলের তুলনায় সরিষায় সেচ, নিড়ানি, মাড়াই ও বীজ খরচও অনেক কম। রোগবালাইয়েরও তেমন আক্রমণ নেই। সরিষা জমিতে দেওয়া টিএসপি সারের ৭৫ ভাগ গ্রহণ করে। বাকিটা জমিতেই থেকে যায়। ফলে সরিষা আবাদের পর জমির উর্বরা শক্তি বেশি থাকায় পরবর্তী ফসল আবাদে চাষ ও সার খরচ অনেক কম লাগে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, কৃষি কর্মকতা হিসেবে যোগদান করার পর থেকে তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির কাজ করছি। কৃষি মন্ত্ররী মহাদয়ের তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ও আমাদনী নির্ভশীলতা কমানোর ঘোষনার পর উপজেলার এক কর্ম পরিকল্পনা তৈরী করি। সেই আলোকে ব্লক ভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগের বছরের তুলনায় ৮ শত ৫৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ বেশী হয়। যার উৎপাদিত ফসল এক হাজার দুই শত ৮২ মেট্রেকটন। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় সারে ৮ কোটি টাকা।