নাটোর অফিস ॥
নাটোরে ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন আলী কুপিয়ে হাতের কব্জি কর্তনসহ ৫জনকে জখম করার ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান সহ ৩০ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরো ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার রাত ১২টার দিকে আহত যুবলীগ নেতা মিঠুনের ছোট ভাই স্বপ্ন বাদশা বাদি হয়ে নাটোর সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাটোর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাজ্জাদ হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে এ ঘটনায় ওবায়দুল,নাসির,রুমন,আশরাফ ও মহসিন নামে অভিযুক্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও মামলা সুত্রে জানাযায়, গত রোববার রাতে শহরের বলারিপাড়া এলাকায় পৌর ৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন আলীকে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী এলোপাথারী কুপিয়ে আহত করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা মিঠুনের ডান হাতের কব্জি কেটে ফেলে। তাকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত হয় মিঠুনের সমর্থক আরও ৪ জন। আহত যুবলীগ নেতা মিঠুন আলী বর্তমানে ঢাকার লালমাটিয়ায় সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় মিঠুনের ছোট ভাই স্বপ্ন বাদশা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান সহ বেশ কয়েকজন জেলা আওয়ামীলীগ নেতার নাম রয়েছে। এরপর পুলিশ শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এজাহারবুক্ত ৫ আসামীকে গ্রেফতার করেছে।
মামলায় অন্যরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা আলী বাবলু (৬০), নাটোর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাক আলী মুকুল (৫২), জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নান্নু শেখ (৫০), মোঃ সোহাগ (২৭ মোঃ আশরাফ (৫০), (০৭) রিপন (২৮), সাব্বির (২৮), মাহতাব (২৭), তোতা (১৬), আলম (৪৫), সাইফুল (৪০), নাহিদ (৪৫), জীবন (৩২), শরীফ (৩৫), শুভ (২২), তরিকুল (২৮), আশা (৩২), ঈমন (২৭), জিহাদ (২৭), অনন্য (২৮), সিজু (২৭) সাব্বির (২৯), হাসান (৩০), জনি (৩৫), ওবায়দুল সরদার (৪০), রুমন (২৬), মহসিন (৩১), নাসির (২৭) এবং সেন্টু। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এই মামলা দায়ের আগে সোমবার(২৪ জুলাই) বিকেলে এ ঘটনার প্রতিবাদ এবং দোষীদের গ্রেফতার ও তাদের শাস্তির দাবীতে জেলা যুবলীগের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। জেলা যুবলীগের সভাপতি বাশিরর রহমান খান চৌধুরী এহিয়ার নেতৃত্বে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য,এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামীগ নেতা নান্নু শেখ এবং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন আলীর সাথে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধে গত ১৬ এপ্রিল যুবলীগ নেতা মিঠুনসহ তার সমর্থকরা সাবেক কাউন্সিলর নান্নু শেখকে কুপিয়ে জখম করে। এরপর থেকেই এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। রোববার রাত ১০ টার দিকে মিঠুনসহ তার সমর্থকরা বলারীপাড়া এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় রাজার পুকুর পাড়ে মুখোশ পড়া অবস্থা ২০/২৫ জন যুবক মিঠুনের ওপর হামলা করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার হাতের কব্জি কেটে দেয়। এ সময় মিঠুনকে বাঁচাতে গেলে মিঠুন সমর্থক আরমান আলী,বকুল মিয়,জাহেদুল ও আব্দুল্লাহ রাব্বিকে সহ ৪জনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। আহত মিঠুন আলী বর্তমানে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে চিকিঃসাধীন রয়েছেন।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং হয়রানি করার সহ আওয়ামীলীগের ঐক্যবদ্ধ পথচলাকে বাধাগ্রস্থ করতে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে মামলা রেকর্ডভুক্ত করার আগে পুলিশের পাক তদন্ত করা উচিত ছিল। কিন্তু তারা তা করেননি। কেননা আমি সহ দলের অনেক নেতা কমীদের অনেকেই ঘটনার সময় দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করছিলাম। যাদের হয়ে পুলিশ জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতা-কর্মীদের নামে মামলা রেকর্ড করেছে তা উদ্দেশ্যমুলক। কেননা ইতিপুর্বে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নান্নু শেখকে কুমিয়ে জখম করার ঘটনার পর মিঠুন আলী সহ যুবলীগের কয়েকজনকে বহিস্কার করা হয়েছে। জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতাদের হয়রানির করতেই পুলিশ মামলা রেকর্ড করেছে বলে শরিফুল ইসলাম রমজান।
সদর থানার ওসি নাছিম আহমেদ বলেন,উপ-পরিদর্শক সাজ্জাদ হোসেনকে মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।