নাটোর অফিস॥
নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের ওবাইদুল হক সৌদি আরব গিয়েছিলেন প্রতিবেশি যুবকদের যেতে দেখে। আর্থিক অস্বচ্ছলতা নয়, এ গ্রামের অনেকেই দেশটিতে গিয়ে ভাগ্য বদলে ফেললেও ভাগ্য যেনো সহায় হলো না ওবাইদুলের জীবনে। সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের যে কারখানায় দিনে কাজ করতেন ওবাইদুল, রাতে সেখানেই পুড়ে অঙ্গার হলেন তিনি। ৩৪ বছরেই ওবায়দুলের জীবনপ্রদীপ নিভে যায়। শনিবার ভোরের আলো ফোটার পর চাঁদপুর গ্রামে পৌছে ওবাইদুলের মৃত্যুর খবর।মুহুর্তের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে গ্রামে।
তবে নিহতদের তালিকার মধ্যে ওবাইদুলের নাম ও পাসপোর্ট নম্বর নেই।
নিহতের বোন নাদিরা ,নাসিমা, হাসি ও মোর্শেদা বলেন, সবার ছোট ভাই ওবাইদুল ছিল তাদের ১১ ভাই বোন ও ভাবিদের চোখের মনি। সকলেই তাকে আদর করতো। শুধু টাকা কামানোর জন্য সে সৌদি আরবে গিয়েছিল চারবছর আগে। চারমাস পর দেশে ফিরে আসার কথা ছিল তার। কদিন আগে তার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য মেয়ে খোজা হচ্ছিল। এখন তাকে শেষবারের মত গোসল করানোর সুযোগও হবে না । লাশ আসার সম্ভাবনা খুব কম। তার মুখ দেখারও সম্ভাবনা নাই। নিহতের তালিকার তার নাম নাই। সৌদিতে এলাকার অনেকেই কাজ করেন। তারা আজ শনিবার সকালে ভাইয়ে লাশের ছবি পাঠালে তারা সনাক্ত করেছেন ওই লাশ তাদের চোখের মনি ওবাইদুলের। ওখানে এলাকার যারা আছে তারা চেষ্টা করছেন ভাইয়ের নাম তালিকায় তোলার জন্য।
এদিকে, ওবাইদুলের পরিবার চান না তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে।সৌদিতেই তাকে সমাহিত করার কথা বলেছে পরিবার।
নিহত ওবাইদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ছেলের একটি ফ্রেমে বাঁধানো ছবি কোলে নিয়ে নিঃস্পলক চোখে চেয়ে আছেন শোকাতুর মা রাহেলা বিবি।পাশে বসা বড় ভাই মজনু আর নার্গিস।তারা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না আদরের ভাই আর নেই পৃথিবীতে। গতকাল শুক্রবার জ্মুার নামাজে যাবার আগে ভিডিও কলে কথা বলেন মায়ের সাথে। নামাজ শেষে দুপুরে কি খাবেন তা বলেছিলেন মায়ের কাছে। সন্ধ্যার পর দাম্মামের আরেকটি কারখানায় কর্মরত মামাতো ভাই ইয়াদুল ফোন করে জানান ওবাইদুলের কারখানায় অগ্নিকান্ডের কথা।পরে রাতভর তারা যোগাযোগের চেষ্টা করে ছেলের সাথে।আজ ভোরে ইয়াদুল জানান ওবাইদুলের মৃত্যুর কথা।ছেলের শোকে বাকরুদ্ধ মা রাহেলা বেগম বলেন, আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে পবিত্র দেশে।আমি চাই তাকে সেখানেই সমাহিত করা হোক। ছেলে জীবিত থাকতে একাধিকবার বলেছে দেশটা এতো সুন্দর ও পবিত্র তাই সে সেখানেই থাকতে চায়।
খাজুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন,ওবাইদুলের পরিবার জানিয়েছে তারা চান ছেলের মৃতদেহ সৌদি আরবেই সমাহিত করা হোক।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোজিনা আক্তার বলেন, ওবাইদুলের মৃত্যু দুঃখজনক।তার মরদেহ দেশে আনার জন্য কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হবে।এরই অংশ হিসেবে একটি ফর্ম পাঠানো হয়েছে পরিবারের নিকট। সেটি হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।তবে আমরা জেনেছি তার পরিবার চায় সৌদিতেই সমাহিত হোক। আমরা এ ব্যাপারে পরিবারের সাথে শীঘ্রই কথা বলে পদক্ষেপ নেব।