নাটোর অফিস ॥
শহিদুল ইসলাম মিয়া নামে বগুড়ার বলাইল গ্রামের এক গরু ব্যাবসায়ীকে হত্যা এবং নুর আলম,রেজাউল করিম,আব্দুস সালাম ও ইউনুস আলী সহ ওই ৫ ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে জখম করে সাড়ে ১৪ লাখ টাকা ডাকাতি করে তাদের নাটোরের বড়াইগ্রামে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ৯ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঈদুল আজহার আগের রাতে ঢাকার আফতাব নগর এলাকা থেকে ট্রাক যোগে ফেরার পথে মহাসড়কে সংঘঠিত ক্লুলেস এই খুনসহ ডাকাতির ঘটনার ৪ দিনের মধ্যে রহস্য উদঘাটন সহ জড়িত ৯ ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে নাটোর জেলা পুলিশ। শনিবার রাতে নাটোর জেলার লালপুর,বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ডাকাতির কাজে ব্যাবহৃত একটি ট্রাক জব্দ ও প্রায় ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার রাতে গ্রেফতারের পর রোববার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে নাটোরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানান পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান গ্রেফতারকৃত ৯ ডাকাত হলো-নাটোরের লালপুর উপজেলার কদমচিলান গ্রামের মৃত মহরমের ছেলে ইনদাদুল (২৭), গুরুদাসপুর উপজেলার চকদিঘরী গুচ্ছগ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলেমোঃ রসুল (৩২), বড়াইগ্রাম উপজেলার মানিকপুর এলাকার আবু হানিফের ছেলে মোঃ আরিফ (২৫), একই গ্রামের আঃ মান্নানের ছেলে মোঃ মিঠুন (২৮),ময়েজের ছেলে শাহআলম (২৪) ,মৃত আঃ কুদ্দুসের ছেলে মোঃ রুবেল (৩২),একই উপজেলার গোপালপুর মধ্যপাড়া গ্রামের লুৎফরের ছেলে ট্রাক চালক মোঃ সোহাগ (২৫) ও তার ভাই সুজন (৩০) এবং দারিয়াপাড়া গ্রামের সেকেন্দারের ছেলে মোঃ রেজাউল (৩৫)।
পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বলাইল গ্রামের গরু ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম মিয়া, নুর আলম,আব্দুস সালাম ও ইউনুছ আলী ১৫টি ষাঁড় গরু নিয়ে ঢাকার আফতাব নগরের মেরুল বাড্ডার পশুর হাটে যায়। ঈদের আগের রাতে গরু বিক্রি করে ঢাকার আফতাব নগর থেকে বগুড়ায় বাড়ি ফেরার জন্য একটি ট্রাকে ওঠেন ওই ৫ ব্যবসায়ী। ট্রাকে ওঠার পর পরই যাত্রী বেশে ট্রাকে থাকা কয়েকজনকে দেখিয়ে হেলপার বলেন তারাও গরু ব্যবসায়ী রংপুরে যাবেন। এরপর শহিদুলদের কাছে থেকে জনপ্রতি ৫০০ টাকা ভাড়া নিয়ে যায় হেলপার। ট্রাকটি চান্দুরা এলাকায় আসার পর পরই ট্রাকে থাকা অজ্ঞাতনামা লোকেরা নিজেদেরকে ডাকাত বলে পরিচয় দিয়ে শহিদুল সহ তাদের চার ব্যবসায়ীকে আক্রমণ করে মারপিট করে তাদের কাছে থাকা গরু বিক্রির টাকা না দিলে খুন করার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে ডাকাতদল তাদের কাছে থেকে থাকা গরু বিক্রির টাকা জোর করে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। টাকা দিতে না চাইলে ডাকাতদলের সদস্যরা তাদের ঝাপটে ধরে এবং গামছা ও লুঙ্গি দিয়ে তাদের দু-হাত, দু-পা বেঁধে ফেলে ও মুখে ক্রসটেপ দিয়ে আটকিয়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতারি মারপিট করে। এসময় শহিদুল সহ ওই চার ব্যবসায়ীর কাছে থেকে ১৪,১২,৮০০ (চৌদ্দ লক্ষ বার হাজার আটশত) টাকা এবং ৪টি টি মোবাইল ফোন জোর করে কেড়ে নেয়। ব্যাপক নির্যাতন সহ ক্রসটেপ দিয়ে মুখ বাধা থাকায় শহিদুল কোন এক সময় শ্বাসরোধে মারা যায়। ডাকাতদল শহিদুল ইসলাম এর মৃতদেহ সুবিধা জনক স্থানে ফেলতে না পেরে তার মৃতদেহ নিয়ে এক রাত একদিন ন ট্রাকে করে ঘুরতে থাকে। গত ২৮ জুন অনুমান রাত ৯টার দিকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের মান্নান নগর এলাকার হান্ডিয়াল ব্রীজের অনুমান ১০০ গজ দুরে চলন্ত ট্রাক থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় আহত আব্দুস সালামকে ফেলে দেয়। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাটিকুমরুল মহাসড়কের আগ্রান ফিলিং স্টেশন এর পশ্চিমে ৮ নং ব্রীজের নিকট পাকা রাস্তার উত্তরপার্শ্বের হাত পা বাঁধা অবস্থা শহিদুলের মৃতদেহ এবং ভিকটিম মোঃ নূর আলম, মোঃ রেজাউল করিম, মোঃ ইউনুছ আলীকে ফেলে ট্রাক নিয়ে ডাকাতদল পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ সহ আহতদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে। পরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশের কয়েকটি টিম জেলার লালপুর,বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুরে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে। এ সময় ডাকাতির কাজে ব্যাবহৃত ট্রাক ও নগদ প্রায় ৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ সুপার।