নাটোর অফিস ॥
নাটোরে সদর হাসপাতাল থেকে নার্সের ছদ্মবেশে চুরি করে নিয়ে যাওয়া কন্যা শিশুকে কুষ্টিয়া থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই সাথে চুরির সাথে জড়িত নার্স বেশী মোছাঃ কাজলী (৩০) নামে সেই নারী এবং শিশুর ক্রেতা কাজলী খাতুন (৪২) নামে অপর এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মাত্র ৮ হাজার টাকায় ওই নবজাতককে বিক্রি করা হয় অপর কাজরী খাতুনের কাছে। ২ হাজার টাকা বাঁকি রেখে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান শনিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান। গ্রেফতারকৃত আব্দুল কাদেরে মেয়ে নার্সের ছদ্মবেশী মোছাঃ কাজলী বর্তমানে স্বামী আরিফুল ইসলাম ও সন্তান নিয়ে নাটোর শহরের চকবৈদ্যনাথ এলাকায় বসবাস করেন। তাদের স্থায়ী ঠিকানা হলো কুষ্টিয়া জেলার পোড়াদহ থানার বাঁশতলা এলাকায়। শিশুর ক্রেতা কাজলী খাতুন কষ্টিয়া সদর থানার খাজানগর এলাকার মোঃ সাইফুল ইসলামের স্ত্রী। ক্রেতা কাজলী খাতুন নিসন্তান। ৯ বছর আগে বিয়ে হলেও তার কোন সন্তান হয়নি।
শনিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিং এ পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান জানান, শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাটোর সদর হাসপাতালে নবজাতক শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে বসে ছিল শিশুটির দাদী। এ সময় নার্সের পোশাকে ছদ্মবেশ ধারন করে মোছঃ কাজলী নামের ওই নারী শিশুটিকে ডাক্তারের কাছে নেয়ার কথা বলে নিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় পরেও সে ফিরে না এলে শিশুর পরিবার খোঁজাখুজি শুরু করে। বিষয়টি হাসপাতাল কতৃপক্ষকে জানালে হাসপাতাল প্রশাসন পুলিশকে জানায়। পরে নবজাতকের পিতা মাহাফুজুর রহমান বাদি হয়ে শুক্রবার রাতে নাটোর থানায় একটি লিখিত এজাহার দাখিল করেন। ওই এজাহার দায়েরের পর মামলা রেকর্ডভুক্ত করা হয়। মামলা রুজুর সাথে সাথে নাটোর সদর থানার চৌকস অফিসার ও ফোর্সের সমন্বয়ে একাধিক টিম গঠন করা হয়। পরে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জানতে পারে শিশু কন্যাকে নিয়ে কুষ্টিায় অপেক্ষা করছে ওই নারী। পরে কুষ্টিয়া পুলিশের সহযোগীতায় খাজানগর এলাকার একটি বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে মুল অভিযুক্ত কাজলী বেগম এবং ক্রেতা কাজলী খাতুনকে গ্রেফতার সহ শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশের অক্লান্ত পরিশ্রমে চুরি হওয়ার ২০ ঘন্টার মধ্যে নবজাতক কে উদ্ধার করে তার মায়ের কোল ফিরিয়ে দেয়া হয়।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, প্রাথমিকভাবে এটা একটা সংঘবদ্ধ চোর চক্রের কাজ বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনার সাথে যদি অন্য কেউ জড়িত থাকে তাদের খুজে বের করে আইনের আওতায় নেয়া হবে। দুই কাজলীর বাড়িও একই জেলায় হওয়ায় তারা কোন চক্রের সাথে জড়িত কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন,বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে জানা যায়,ক্রেতা কাজলী খাতুন নিঃসšতান । বিয়ে হওয়ার প্রায় ৯ বছরেও তার কোন সন্তান হয়নি। এব্যাপারে আরো অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালের কেউ এর সাথে জড়িত কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িত থাকার প্রমান মিললে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে সদ্য ভুমিষ্ট শিশু কন্যাকে হারিয়ে নবজাতকের মা-বাবা সহ সবাই পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলেন। সবার দোয়ায় ও পুলিশের তৎপরতায় তারা তাদের হারানো মানিককে ফিরে পেয়েছেন। এতে তারা অনেক খুশি। সেই সাথে অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দাবীও করেন তারা। শিশু কন্যার পিতা মাহফুজুর রহমান পলাশের এবং মা হাসনা হেনা বলেন, জেলা পুলিশের আন্তরিকতার আমাদের সন্তানকে আমরা ফিরে পেয়েছি। পুলিশ তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে উদ্ধারে চেষ্টা করেছেন। সেজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানায় জেলা পুলিশকে।
উল্লখ্য ,গত শুক্রবার (৯ জুন) দুপুর সাড়ে ১১ টার দিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড থেকে নলডাঙ্গা উপজেলার খাজুরা মহিষডাঙ্গা গ্রামের মাহফুজুর রহমান পলাশের নবজাতক শিশু কন্যা চুরি হয়। নার্সের পরিচয় দিয়ে মুখোশধারী (মাস্ক পরিহিত)এক নারী দাদি খাউরুন নাহারের কোলে থাকা শিশুটিকে ডাক্তার দেখানোর নাম করে চুরি করে নিয়ে যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সকাল ১১টা ২০ মিনিটের সময় সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে মাহফুজুর রহমান পলাশের স্ত্রী হাসনা হেনা শিশুটির জন্ম দেন। জন্ম নেয়া শিশুটি দুর্বল হওয়ায় তাকে গাইনি ওয়ার্ড থেকে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল