নাটোর অফিস ॥
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ও সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের সামনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় দুই গ্রুপ। সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানের অনুসারীদের মধ্যে শ্লোগান ও পাল্টা শ্লোগান দেয়া নিয়ে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে শহরের কান্দিভিটা এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে স্মার্ট কর্ণার উদ্বোধন শেষে সভামঞ্চে বক্তব্য শুরুর সময় এই দুই নেতার অনুসারী আওয়ামী লীগ কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় অর্ধশতাধিক চেয়ার ভাংচুর সহ উভয় পক্ষের মধ্যে চেয়ার ছুড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। তবে সংঘর্ষে বড় ধরনের কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত নেতৃবৃন্দের দিকে চেয়ার ছুড়ে মারতে দেখা যায়। সভা চলাকালীন সময়ে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান গ্রুপের সমর্থকরা তাদের নেতাদের নামে বিভিন্ন শ্লোগান দেওয়া শুরু করে। এ সময় সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল সমর্থকরা শ্লোগান দেয়া শুরু করলে উত্তেজনা দেখা দেয়। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও একে অপরকে চেয়ার ছুড়ে মারতে থাকে। এই সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারকে লক্ষ্য করে চেয়ার ছুড়ে মারা হয়। অনুষ্ঠানস্থলে জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস, নাটোর-২(সদর আসনের) সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল,নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য রতœা আহমেদ, সাবক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, জেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান,
নাটোর পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলি, বনপাড়া পৌর মেয়র জাকির হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দের সামনেই উশৃঙ্খল কর্মীরা কবির বিন আনোয়ারকে লক্ষ্য করে চেয়ার ছুঁড়ে মারেন। পরিস্থিতি অনুকুলে না থাকায় কবির বিন আনোয়ার মঞ্চ এলাকা ছেড়ে কার্যালয়ের বারান্দায় নিরাপদ দুরত্বে অবস্থানে সরে যান। কবির বিন আনোয়ার কার্যালয় ছেড়ে বের হতে লাগলে তাকে শিমুল অনুসারীরা অবরুদ্ধ করে রাখে।কবির বিন আনোয়ার অবরুদ্ধ হওয়ার খবরে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুঞাঁ ও পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান। পরে তাদের হস্তক্ষেপে আবারো সভা শুরু হয়। সভায় পুলিশ মোতায়েন থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেন পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান। বর্তমানে এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
রমজান সমর্থকদের অভিযোগ , দলীয় কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান করা সদর আসনের সংসদ সদস্য শিমুলের বেশ কিছু সমর্থক বিএনপি কর্মী আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে ঢুকে বাঁশ ও লাঠি হাতে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। কবির বিন আনোয়ার কার্যালয় ছেড়ে বের হতে লাগলে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে তারা। এসময় এমপি শিমুল নিজেই ছুটে এসেও তার কর্মীদের নিবৃত করতে ব্যর্থ হন। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
জেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান এমপি শিমুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের সভা জেনেও বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন এমপি শিমুল। শৃঙ্খলার স্বার্থে আমরা শুরুতে এর প্রতিবাদ করিনি। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে শিমুল বিএনপির সন্ত্রাসীদের নিয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছেন। যারা হামলা চালিয়েছে তারা কেউ আওয়ামী লীগের কর্মী না। এমপি শিমুল জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য। তার কাছে এ ঘটনার কৈফিয়ত তলব করা হবে।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, তার কোন কর্মী সংঘর্ষে জড়ায়নি। বরং জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সম্পাদক চেয়ারে বসা নিয়ে উপস্থিত কর্মীদের মারপিট করেছে। যারা চেয়ার আর লাঠি ছুঁড়েছে নেতাকর্মীদের উপর তাদের গায়ে হাত তুলে আমি নিজে থামিয়েছি। তারপর সভা পুনরায় শুরু ও সমাপ্ত হয়। আমি ভূমিকা না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে যেতো। তিনি আরো বলেন,জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান নেতৃত্বরা সব ঘটনার জন্য আমাকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করেই তাদের দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন। তাদের চারপাশে এখন শুধু বিএনপি -জামায়াত শিবির অবস্থান করে। শিমুলের জনপ্রিয়তায় তারা ভিত বলেই সব সময় মিথ্যাচার করে।
আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ও সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, আওয়ামী লীগের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের কোন স্থান নেই। কেউ চেইন অব কমান্ড না মেনে চললে এমনটা ভাবার কারন নেই সে আওয়ামী লীগে অতি প্রয়োজনীয়। এখন নিজেদের মধ্যে বিরোধে না জড়িয়ে ঐক্যবদ্ধ হবার সময়। শেখ হাসিনার জন্য কাজ করতে হবে প্রতিটি নেতাকর্মীকে।
নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, আওয়ামীলীগের মতবিনিময় সভায় দরীয় কর্মীদের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে কাজ করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আরো পুলিশ পাঠানো হয়। পরে শান্তিপুর্নভাবে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে পরিবেশ শান্ত রয়েছে।