নাটোর অফিস॥
নাটোরের সিংড়ায় একের পর এক প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ট্যাব বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। এখন পর্যন্ত দুই প্রধান শিক্ষককে শোকজ করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। আর ওই দুই প্রতিষ্ঠান থেকে জব্দ করা হয়েছে বারটি ট্যাব। শোকজকৃত শিক্ষকরা হলেন হুলহুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারী ও পাঁচ পাখিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ। এদিকে মঙ্গলবার নতুন করে আবার অভিযোগ উঠেছে চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাপলা রাণী ও ওমিয়ো খাতুনের পরিবর্তে যথাক্রমে চার ও সাত রোল মৃদুলা খাতুন ও হ্নদয় মন্ডল নামের দুই শিক্ষার্থীকে ট্যাব দেয়া হয়েছে। আর এর সাথে জড়িত রয়েছেন বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মীর্জা রফিকুল ইসলাম ও ট্রেড শিক্ষক আবু জাফর। অভিযোগ রয়েছে তাদের নিকট আত্মীয় বলেই মেধা তালিকার নয়-ছয় করা হয়েছে।
এবিষয়ে নবম শ্রেণির এক রোল শিক্ষার্থী সুমাইয়া খাতুন বলেন, সে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ট্যাব পেয়েছেন। তবে দুই ও তিন রোল শাপলা রাণী ও ওমিয়ো খাতুনকে ট্যাব দেয়া হয়নি। এতে সহপাঠীদের মধ্যে সমালোচনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি উপজেলার ৫৩টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেণির সম্মিলিত মেধাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী মোট ৩১৮ জন শিক্ষার্থীর মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ট্যাব বিতরণ করা হয়। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে হুলহুলিয়া ও পাঁচ পাখিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেন সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকরা। বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে অভিযোগ পেয়ে ইউএনও মাহমুদা খাতুনের তত্ত্বাবধানে হুলহুলিয়া ও পাঁচ পাখিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বিতরণকৃত বারটি ট্যাব জব্দ করে পরিসংখ্যান কর্মকর্তার জিম্মায় রাখা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার নতুন করে আবার অভিযোগ উঠেছে চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাপলা রাণীর পরিবর্তে অন্য একজনকে ট্যাব দেয়া হয়েছে বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন ট্যাব বঞ্চিত ওই শিক্ষার্থী পিতা শ্রী রাজ কুমার চন্দ্র হালদার। তিনি বলেন, আমি একজন অতি দরিদ্র দিন মজুর। মাছ-শাক মেরে খাই। অনেক কষ্ট করে দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাই। কিন্তু আমার মেয়ের প্রাপ্য ট্যাব অন্যজনকে দেয়া হয়েছে, এটা শোনার পর অভিযোগ করেছি। তাছাড়া একই শ্রেণির ওমিয়ো খাতুনের পরিবর্তে অন্য একজকে ট্যাব দেওয়া হয়েছে বলেও লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। আর এনিয়ে শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় বইছে। আর লিখিত অভিযোগ করায় ট্যাব বঞ্চিত শিক্ষার্থীর পিতা শ্রী রাজ কুমার চন্দ্র হালদারকে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মীর্জা রফিকুল ইসলাম ও তার লোকজন।
এবিষয়ে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মীর্জা রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে ট্রেড শিক্ষক আবু জাফর হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এর আগে রোববার অভিযোগ উঠে হুলহুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ওসমান গণির পরিবর্তে সাত রোল লাইবা তৌফিক এবং দশম শ্রেণির পূর্বাসা আফরিন’র পরিবর্তে চার রোল মিথিলা আকতার মায়াকে ট্যাব দেওয়া হয়। পরে সমালোচনার মুখে বিদ্যালয়টি প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারী (১১ এপ্রিল) মঙ্গলবার দুপুরে ছয়টি ট্যাব মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ফেরত দেন। প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারী বলেন, তার অজান্তে তালিকাটি প্রতিষ্ঠানের একজন সহকারী শিক্ষক করেছেন। যাচাই-বাছাই না করে বিতরণ করাটা আসলে ভুল হয়েছে।
অপরদিকে পাঁচ পাখিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেণির তিন শিক্ষার্থীকে ট্যাব বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে সমালোচনায় পড়েন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ। বিদ্যালয়টি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ বলেন, আমি নতুন মানুষ। বিষয়টি বুঝতে পারিনি। ট্যাব গুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফেরত নিয়ে ইউএনও’র কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন।
উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয়ের পরিসংখ্যান তদন্তকারী সঞ্জয়রাম মানী বলেন, প্রতিষ্ঠান থেকে যেভাবে তালিকা দেয়া হয়েছে। আমরা সেভাবেই ট্যাবগুলো বিতরণ করেছি। কোন অনিয়ম হলে এর দায়ভার প্রধান শিক্ষককেই নিতে হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুর রহমান শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলার তিনটি প্রতিষ্ঠানে ট্যাব বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে আগামী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে শোকজের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একটি অভিযোগ হাতে পেয়েছি। সেটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা খাতুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ট্যাব বিতরণে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। তবে কেহ অনিয়ম করলে এক চুলও ছাড় দেয়া হবে না। যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যেসব প্রতিষ্ঠানে ট্যাব বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে ট্যাবগুলো জব্দ করা হচ্ছে। দ্রুতই প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে সেগুলো বিতরণও করা হবে বলে জানান তিনি।