নাটোর অফিস ॥
চারিদিকে ফসলি জমি। জমিতে বোরো সহ বিভিন্ন ফসল শোভা পাচ্ছে। এই ফসলি জমির মাঝখানে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘এল’ প্যাটাণের্র লম্বা টিনের ছাউনির তৈরি ঘর। মাদ্রাসার ঘরগুলি ইটের তৈরি। টিনের দোচালা ঘর। ঘরটি বাগাতিপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসা। মাদ্রাসার মোট কক্ষ ৮টি । এর মধ্যে একটি অফিস কক্ষ। এসব কক্ষের মধ্যে দরজাও রয়েছে ৮ টি। জানালা প্রায় সম পরিমান । সেগুলো এখন ভেঙ্গে গেছে। ৩টি দরজায় তালা ঝুলতে দেখা যায়। এর মধ্যে একটি দরজার এক পাল্লাতে তালা ঝোলানো। অপর পাল্লা ভাঙ্গা। অন্য দরজাগুলো ভিতর থেকে লাগানো। দীর্ঘদিন ধরে তালা ঝুলে থাকায় তালাগুলিতে জং ধরেছে। ব্রেঞ্চ ও টেবিলগুলো ভাঙ্গা। সেগুলোতে ধুলায় পরিপুর্ন। ক্লাস রুমের মধ্যে ধানের খড় স্তুপাকারে রাখা। এমন পরিবেশ বজায় থাকলেও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী দেখিয়ে বছরের শুরুতে বই বিতরণ সহ উপবৃত্তির অর্থ উত্তোলন করা হয়। এমন অভিযোগ মাদ্রাসা সুপার মোঃ আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে।
এই মহিলা দাখিল মাদ্রাসাটি ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। অভিযোগ পাওয়া যায়, গত প্রায় ৫ বছর ধরে মাদ্রাসায় কোন ছাত্রী নেই। এমন কি শিক্ষক শুন্য রয়েছে। যারা এই প্রতিষ্ঠানে কাগজে কলমে এখনও কর্মরত রয়েছেন তারাও আর প্রতিষ্ঠানে আসেননা। প্রতিষ্ঠান প্রধান মোঃ আব্দুর রউফ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলায় অফিস সহকারি সহ ২ জনকে চাকরীচ্যুত করা হয়।
অফিস সহকারি মোস্তাফিজুর রহমান মিঠু ইতিপুর্বে ওই প্রতিষ্ঠান প্রধান আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের ভুয়া তালিকা করে উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করে আত্মাসাতের অভিযোগ তোলেন । এজন্য একাধিক সিম কার্ড ব্যবহার করেন তিনি। এছাড়া ভুয়া পরীক্ষার্থীর তালিকা করে প্রতিষ্ঠান চালু দেখানো হলেও কেউ পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। এছাড়া এসব ছাত্রীদের তালিকা দেখিয়ে নতুন বছরের বই উত্তেলনও করেন তিনি। জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানি হলে অভিভাবকদের অনেকেই তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেন। মতিউর রহমান নামে এক অভিভাবক গত বছর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে অভিযোগ করেছেন, বাগাতিপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসায় ২০২১ সালের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য ১৫ জনের তালিকা রেজিষ্টেশন করানো হয়। কিন্তু কেউ পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। পরীক্ষার ফরম পুরনের ২ মাসের মধ্যে ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী ওই ১৫ শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে যায়। এছাড়া ২০২২ সালেও ৮ জনের নাম দেয়া হয় পরীক্ষার্থী হিসেবে। কিন্তু তারাও কেউ পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ওই তালিকাও ভুয়া ছিল। সুপার মোঃ আব্দুর রউফের বাল্য বিয়ের বিষয়টি তিনি জানার পরও কোন পদক্ষেপ নেননি এবং পরীক্ষীর অভিভাবকদের বাধা দেননি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে মোঃ আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, মোঃ আব্দুর রউফ একাই ছাত্র একং প্রতিষ্ঠান প্রধান। ভুয়া তালিকা করে বইসহ উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন। বিষয়টি প্রমান পাওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তা। তবে এখন কেউ ওই প্রতিষ্ঠানে যায়না। সুপার মোঃ আব্দুর রউফও নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে যাননা। তিনি বর্তমানে গালিমপুর কৃষ্ণপুর মসজিদের ইমামতি করেন।
সরেজমিন ওই প্রতিষ্ঠান এলাকায় গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে মাদ্রাসা সুপার মোঃ আব্দুর রউফের সেল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবী করে উল্টো তার প্রতিবেশীদের নামে অভিযোগ করে বলেন, তারাই মিথ্যা প্রচারনা করে মাদ্রাসাটি বন্ধের ষড়যন্ত্র করছেন। এর মধ্যে অভিযোগকারী অফিস সহকারী মোস্তাফিজুর রহমান মিঠুর বিরুদ্ধে তিনি আঙ্গুল তোলেন। এই প্রতিবেদক তার সাথে দেখা করার ইচ্ছা পোষন করলে তিনি সময় নেই এবং পরে সাক্ষাত করার কথা বলে নামাজের অজুহাত দেখিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেন। তবে মোবাইল সংযোগ বন্ধ করার আগে তিনি তার প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ জানাবেন বলে বলেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আহাদ আলী জানান, বাগাতিপাড়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোঃ আব্দুর রউফের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কিছু অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ওই মাদ্রাসায় এখন শিক্ষার পরিবেশ নাই। বস্তুত মাদ্রাসায় এখন কোন ছাত্রী নেই। মাদ্রাসাটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। জালিয়াতি করে ছাত্রীদের তালিকা করে বই বিতরণ সহ উপবৃত্তির অর্থ আত্মসাথের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা সরকার বলেন, কর্মস্থলে সম্প্রতি যোগদান করায় বিষয়টি সম্পর্কে তার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে এবিষয়ে জানার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।