নাটোর: চারবছর পূর্ণ হল নাটোরের বড়াইগ্রাম ট্রাজেডির। দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ এ সড়ক দূর্ঘটনার দিনটিও নীরবেই চলে গেল এবার। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি , সুধীসমাজ- কেউই স্মরণ করলেন না দিনটিকে। চলতি বছরের ২৫শে আগস্ট একই উপজেলার কিদমচিলানেও সড়ক দূর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত হলেও বড় এ দূর্ঘটনার চার বছর পূর্তিতে কারে নজর ছিল না।
২০১৪ সালের এই দিন বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের রেজুর মোড় এলাকায় নাটোরের ইতিহাসে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হয়। এই হতাহতদের মধ্যে গুরুদাসপুর উপজেলার সিধুলী গ্রামের ১৬ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে একই পরিবারের ৭ ভাইয়ের ৬জন নিহত এবং একজন আহত হন। সিধুলী গ্রামের সেই ১৬ বিধবা সকলেই রসুন কাটা ও খলসুন বানানোসহ দিন মজুরি করে জীবন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয়দের মতে, দিনটিকে দূর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির অংশ হিসেবে পালন করা যেত প্রশাসন উদ্যোগ নিলে। কারন দেশের অন্যতম দূর্ঘটনাপ্রবণ এ মহাসড়কে ক্রমবর্ধমান সড়ক দূর্ঘটনা কোনভােবই হ্রাস করা যাচ্ছে না।
এদিকে রেজুর মোড়ের ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনার চার বছরেও হতাহতদের পরিবারগুলো ঘুরে দাাঁড়াতে পারেনি। নিহতদের পরিবারগুলোকে সরকারীভাবে ১ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হলেও অনেকেই ওই টাকা নিহত স্বামীর রেখে যাওয়া ধার পরিশোধ করেছেন। তবে সিধুলী গ্রামের ১৬ বিধবার মধ্যে ৭ জনকে বিধবা ভাতার কার্ড দেওয়া হয়েছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে।
এলাকাবাসী সহ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো জানায়, নিহতরা প্রায় সকলেই ছিল দরিদ্র পরিবারের। কেউ কেই এক চিলতে জমি চাষ করে কোনভাবে জীবন কাটাতেন। অধিকাংশই ছিলেন দিনমজুর। রেজুর মোড়ের দুর্ঘটনা তাদের সুখের সংসার তছনছ করে দেয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মাষ্টার জানান, ঘটনার পর পর সিধুলী গ্রামের নিহত ১৬ পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১ লাখ টাকা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। এছাড়া ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ ৭ টি বিধবা ভাতার কার্ড ৭ বিধবাকে দেওয়া হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন তার মেয়াদের মধ্যে অবশিষ্ট ৯ জনকে বিধবা ভাতার কার্ড বিতরন করা সহ সহায়তা করা হবে। তবে তিন বছরে নিহত পরিবারের অনেকেই ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বলে তিনি স্বীকার করেন।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী অহিদুল হক জানান, ভয়াবহ ও দূর্ঘটনার প্রথম দু্ই বছর স্থানীয় সাংবাদিকদের উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয়েছে। গত বছরও স্থানীয়দের উদ্যোগে অল্প পরিসরে দিনটি পালন করা হলেও এবছর কোন আয়োজনই করা হয়নি প্রশাসন বা কোন সাংঠনিভাবে।
বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ প্রশাসনিকভাবে দিবসটি পালনে কোন আয়োজন না করার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সদ্যসমাপ্ত শারদীয় দূর্গাপূজার কারণে বিষয়টি নিয়ে ভাবা হয়নি।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ গোলামুর রহমান জানান, তিনি সদ্য যোগদান করায় বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না। তবে খোঁজ করার আশ্বাস দিয়েছে তিনি।