নাটোর অফিস॥
নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস,তার ছেলে আসিফ আব্দুল্লাহ বিন কুদ্দুস শোভন ও কন্যা অ্যাডভোকেট কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি এবারে নাটোর জেলা আওয়ামীলীলীগের কার্যকরি কমিটির সদস্যসহ নেতৃত্ব পেয়েছেন তারা। সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস হয়েছেন সভাপতি,ছেলে আসিফ আব্দুল্লাহ বিন কুদ্দুস শোভন পেয়েছেন তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদকের এবং কন্যা অ্যাডভোকেট কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি কার্যকরি কমিটির সদস্য পদ পেয়েছেন। এছাড়া নবগঠিত কমিটির সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানের ভাতিজা ব্যারিষ্টার মো: মিরাজ সরদারকে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ভায়রা ভাই আলমগীর হোসেনকে করা হয়েছে উপ-দপ্তর সম্পাদক। ৭৫ সদস্যের নবগঠিত এই কমিটির ১৫ জনই নতুন মুখ। জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য অনুমোদিত কমিটিতে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পদবঞ্ছিতদের। বিগত সময়ে দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকা এবং জেলা শহরের বাইরে অবস্থানকারীদের প্রাধান্য দিয়ে গঠিত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটিতে আতœীয়করণও করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের পদ বঞ্ছিতরা। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভূক্তির দাবী জানানো হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ১১টায় স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় এই দাবীতে পদ বঞ্ছিতদের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনের উদ্যোক্তা নাটোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিগত জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুর রহমান মাসুম বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য অনুমোদিত কমিটিতে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়নি। বিগত সময়ে দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকা এবং জেলা শহরের বাইরে অবস্থানকারীদের প্রাধান্য দিয়ে গঠিত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কমিটিতে আতœীয়করণও করা হয়েছে। সামনের আন্দোলন-সংগ্রামে এই কমিটি ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, কমিটিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আসিফ আব্দুল্লাহ বিন কুদ্দুস শোভনকে তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এবং মেয়ে কুহেলী কুদ্দুস মুক্তিকে সদস্য করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক মোঃ শরিফুল ইসলাম রমজানের ভাতিজা মিরাজ সরদারকে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ভায়রা আলমগীর হোসেনকে উপ দপ্তর সম্পাদক করা হয়েছে। দপ্তর সম্পাদক আসলাম উদ্দিন মাস্টার বিগত সময়ে বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক। অপর সাংগঠনিক সম্পাদক ঢাকাতে দালালীতে নিয়োজিত এমরান সোনার কখনোই এলাকাতে থাকেননি। কমিটির সদস্য পদে স্থান করে নেওয়া সংসদ সদস্য মোঃ শহিদুল ইসলাম বকুলের ভাই অহিদুল ইসলাম গকুল নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট করেছেন।
ঘোষিত কমিটিতে স্থান পাওয়া সহ সভাপতিসহ অন্তত ১৫ ব্যক্তি বিগত সময়ে কখনো আওয়ামী লীগের কোন দায়িত্ব পালন করেননি, কখনো ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দেননি। এসব ব্যক্তিরা আগামীতে দলের নীতি নির্ধারণে কিভাবে ভূমিকা রাখবেন বা আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহন করবেন ?
সংবাদ সম্মেলনে নতুন ঘোষিত কমিটিতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতৃবৃন্দকে অন্তর্ভূক্তির দাবী জানিয়ে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মাজেদুর রহমান চাঁদ, অধ্যাপক শামসুল ইসলাম ও নাসিমা বানু লেখা, নাটোর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপ প্রচার সম্পাদক মোঃ আলী আকবর, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপ দপ্তর সম্পাদক প্রভাষক আকরামুল ইসলাম এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ওমর শরীফ চৌহান।
উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাক্ষরিত ৭৫ সদস্যের নাটোর জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়।জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ভিত্তিহীন,বানোয়াট ও মিথ্যাচার দাবি করে বলেন,যারা ইতিপুর্বে দলীয় কর্মকান্ডে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছে তারাই জেলা আওয়ামীলীগে জায়গা করে নিয়েছে। জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে ও মেয়ে দুজনেই নিজেদের যোগ্যতায় ধাপে ধাপে উঠে এসেছেন। কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি কেন্দ্রিয় যুব মহিলী লীগের সাবে যুগ্ম সাধারন সম্পাদক ও সাবেক সহ সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি ছাত্রলীগ করেছেন। তিনি ধাপে ধাপে উপরে উঠে এসেছেন। তিনি দলের একজন ত্যাগী নেত্রী। তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হয়েছেন তার নিজস্ব যোগ্যতায়। ছেলে আসিফ আব্দুল্লাহ বিন কুদ্দুস শোভন দলের কোন পদ পদবিতে না থাকলেও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হয়ে সকল কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনিও ধাপে ধাপে উপরে উঠে এসেছেন এবং যোগ্যতায় জেলা অওয়ামীলীগে জায়গা করে নিয়েছেন। ইতিপুর্বের জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের তিন ভাই,ভাবী,ভগ্নিপতি সহ তার পরিবারের ১১ জন জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হয়েছিলেন। এবার জেলা আওয়ামীলীগ থেকে হাইব্রিড বা জামায়াত-বিএনপির প্রেতাত্মামুক্ত করা হয়েছে। দলের সকল কাজে পদ পদবি ছাড়াই অংশ নিয়ে যোগ্যতার প্রমান রাখা যায়।
জেলা আওয়ামীলীগের অধুনা বিলুপ্ত কমিটির সাধারন সম্পাদক নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা আসনের) সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল অভিযোগ করে বলেন,নবগঠিত কমিটির সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান জাসদ ও জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সংপৃক্ত ছিলেন। তিনি নিজের পরিবারের সদস্যদের দলের পদে অসীন করেছেন। যারা কখনই রাজনীতি করেননি। এমনকি জয়বাংলা বলতে দেখেননি কেউ। নতুন কমিটিতে ভায়রা ভাই ও ভাতিজাকে পদ দিয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে ঢুকিয়েছেন। এছাড়া বিএনপি সমর্থক হিসেবে পরিচিত তার বন্ধু আসলাম উদ্দিনকে দপ্তর সম্পাদক পদ দিয়েছেন।যিনি একটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকও বটে। নিজে দুনর্িিতর আশ্রয় নিয়ে অন্যের ঘাড়ে দায় চাপাতে পটু এই শরিফুল ইসলাম রমজান। ষড়যন্ত্র করে তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে চলেছেন। বিগত কমিটিতে আমার বড় ভাইকে সদস্য করা হয়। এছাড়া অন্য যারা জেলা আওয়ামীলীলীগের সদস্য হয়েছিলেন তারা যোগ্যতার ভিত্তিতেই দলে স্থান করে নিয়ে ছিলেন। যোগ্যতা দিয়ে নতুনরা জায়গা করে নিবে সেটা সবাই সাদরে গ্রহণ করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। তবে যারা কোনদিন জয়বাংলা বলেননি বা আওয়ামীলীগের কোন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেননা তাদের দিয়ে কমিটি গঠন করার বিষয়টি মেনে নেয়া কঠিন। বিষয়টি দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।