নাটোর অফিস॥
নাটোরের লালপুর উপজেলার কৃতি সন্তার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মমতাজ উদ্দিন ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এবার একুশে পদক পাচ্ছেন (মরণোত্তর)। আজ (১২ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মমতাজ উদ্দিনসহ ১৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও দুইটি প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক প্রদানের কথা জানানো হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে একুশে পদকের জন্য মনোনীত বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ মমতাজ উদ্দিন ইয়াকুল প্রামানিক ও মাতা আবেজান বেগমের দ্বিতীয় পুত্র। ১৯৪৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর লালপুর উপজেলার আব্দুলপুরের মিলকিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। লালপুর উপজেলার করিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে চকনাজিরপুর হাই মাদ্রাসা (বর্তমনে হাই স্কুল) থেকে এসএসসি, নাটোর নবাব সিরাজ উদ দৌলা সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঈশ্বরদী ডিগ্রী কলেজ থেকে ১৯৭০ সালে ডিগ্রী পাশ করেন। ৬০এর দশকে তিনি ছয় দফা আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। তখন থেকেই তিনি ছাত্র রাজনৈতি শুরু করেন। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। লালপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ও লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্র্তীতে ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি সালামপুর হাইস্কুলে শিক্ষাকতা করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন জননন্দিত নেতা ছিলেন। নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৮৬ সালে নাটোর-১ লালপুর বাগাতিপাড়া আসনে তৃতীয় জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালের ৬ জুন লালপুরের গোপালপুর উপজেলার গোপালপুর-আব্দুলপুর সড়কের নেঙ্গপাড়া নামক স্থানে দুবৃর্ত্তরা মমতাজ উদ্দিনের পথ রোধ করে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। তাঁর মৃত্যুর পরে তার সহধর্মিনী শেফালী মমতাজ সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালে তার সহোদর ভাই এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ নাটোর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনেনীত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক পুত্র এবং এক কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। তার ছেলে আলহাজ শামীম আহমেদ সাগর বর্তমান লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
শুধু মুক্তিযোদ্ধেই নয়, লালপুরে রাজনৈতিক এবং শিক্ষার প্রসারে অনন্য ভূমিকা রেখে শহীদ মমতাজ উদ্দিন দিনে দিনে এই অঞ্চলের বর্ষিয়ান ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতা হিসেবে পরিচিত রয়েছে।
এর মধ্যে ‘ভাষা আন্দোলন’ ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে খালেদা মনযুর- ই-খুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কেএম. শামসুল হক (মরণোত্তর),হাজী মো. মজিবর রহমান, ‘শিল্পকলা’য় পদক পাচ্ছেন মাসুম আলী খান, শিমুল ইউসুফ, মনোরঞ্জন ঘোষাল, গাজী আব্দুল হাকিম, ফজল এ খোদা (মরণোত্তর), জয়ন্ত চট্রোপাধ্যায়, নওয়াজীশ আলী খান, কনক চাঁপা চাকমা, সাংবাদিকতায় পদক পাচ্ছেন শাহ আলমগীর (মরণোত্তর), গবেষনায় পদক পাচ্ছেন মো. আব্দুল মজিদ, শিক্ষায় পদক পাচ্ছেন প্রফেসার ড. মযহারুল ইসলাম (মরণোত্তর), সমাজসেবায় মো. সাইদুল হক, রাজনীতি তে পদক পাচ্ছেন এ্যাড. মঞ্জুরুল ইসলাম (মরণোত্তর), আকতার উদ্দিন মিয়া (মরণোত্তর), ভাষা ও সাহিত্যে পদক পাচ্ছেন ড. মনিরুজ্জামান, প্রতিষ্টান ক্যাটাগরীতে শিক্ষায় বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও সমাজসেবায় পদক পাচ্ছেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
নীতিমালা অনুযায়ী, নির্বাচিত প্রত্যেককে এককালীন নগদ ৪ লাখ টাকাসহ ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে চালু করা একুশে পদক সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ভাষাসৈনিক, ভাষাবিদ, গবেষক, সাংবাদিক, সমাজসেবক, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৬ সাল থেকে একুশে পদক দেয়া হচ্ছে।