নাটোর অফিস॥
নাটোরের লালপুরে প্রায় ১১ মাস আগে নিহত সাড়ে তিন বছরের শিশু ইরিন সুলতানা ঈশা হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে লালপুর থানার পুলিশ। এ ঘটনায় চার দিনে আগে তিনজনের নামে আদালতে চার্জশীট জমা দিয়েছে পুলিশ। এই মামলায় শোভা খাতুন নামের একজন আসামী জামিনে মুক্ত রয়েছেন। অপর দুইজন আসামী নিহত ঈশার বাবা মো. ইলিয়াস আলী ও মোছা. শেফালী বেগম পলাতক রয়েছেন। হত্যার কারন হিসেবে পুলিশ জানায় পিতার অনৈতিক কার্যকলাপের সময় বিরক্ত করায় শিশু ঈশা কে থাপ্পর ও গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পিতা ইলিয়াস হোসেন।
গত বছরের ১৫ মার্চ উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের সাধুপাড়া গ্রামের একটি পানিশূণ্য ডোবা থেকে শিশু ইরিন সুলতানা ঈশার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ঈশা ওই গ্রামের মো. ইলিয়াস হোসেনের মেয়ে। ওই দিন রাতে নিহতের বাবা বাদি হয়ে লালপুর থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করলে পুলিশ তদন্ত শুরু করে ঘটনার দিন আটক মোছা. শোভা খাতুন কে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হীরেন্দ্রনাথ প্রামানিক ও এসআই মোল্লা সোহেল মাহমুদ বলেন, ঘটনার দিন গত বছরের ১৫ মার্চ ইলিয়াস আলী মেয়ে ইরিন সুলতানা ঈশার সঙ্গে নাস্তা করে মেয়ে ঈশাকে কোলে নিয়ে তার বাড়ি থেকে বের হয়ে পাশের শোভা খাতুনের বাড়িতে যান। মেয়েকে শোভা খাতুনের বাড়ির বারান্দায় সিড়ির উপর দাঁড় করিয়ে তারা শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টাকালে মেয়ে ঈশা বাবাকে ধরে টানাটানি শুরু করে। এ সময় ইলিয়াস আলী উত্তেজিত হয়ে ঈশাকে থাপ্পর মারেন। ঈশা মাটিতে পড়ে কান্নার চেষ্টা করলে ইলিয়াস আলী শোভা খাতুনের শরীরের উপর বসে থাকা অবস্থায় মেয়ের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করে। মামলার বাদি (তদন্তেপ্রাপ্ত অভিযুক্ত আসামী) নিহতের বাবা মো. ইলিয়াস আলী (৩১) এর সঙ্গে ও মামলার অপর আসামী প্রতিবেশী মো. নূর উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. শোভা খাতুন (৩৫) এর অনৈতিক সম্পর্ক ছিলো। তারা পরস্পর চাচী ও ভাতিজা। অর্থাৎ মোছা. শোভা খাতুনেরর আপন চাচাতো ভাসুরের ছেলে ইলিয়াস। শোভা খাতুনের স্বামী কিডনী অপারেশন করে দুর্বল হয়ে যান। শোভা খাতুন তার শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য এক পর্যায়ে ইলিয়াস আলীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
এরপর ইলিয়াস আলী মেয়ে ঈশার মৃতদেহ কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী মো. ইসলাম আলী মোল্লার স্ত্রী মোছা. শেফালী বেগমের (৪৮) এর বাড়ির সামনে বেলকোনির সিঁড়ির উপর ফেলে রাখেন। ওই সময় শেফালী বেগম বের হয়ে দেখেন বাড়ির মুরগি ঈশার মাথায় ঠোকর দিলেও কোন সাড়া দিচ্ছে না। তখন তিনি এগিয়ে গিয়ে ঈশাকে মৃত অবস্থায় দেখে মৃতদেহ বাড়ির বাইরে টয়লেটের মধ্যে রেখে দেন। কিছুক্ষণ পর ঈশার মা তার মেয়েকে ডাকাডাকি ও খোঁজাখুজি করলে শেফালী বেগম ভয় পেয়ে মৃতদেহ বস্তায় ভরে বসতবাড়ির পশ্চিম পার্শ্বে সামান্য পানি থাকা ডোবার মধ্যে ফেলে দেন।
এরপর ঈশার মা মোছা. আখি খাতুন (২৫) অনেক খোঁজাখুজি করে মেয়েকে না পেয়ে স্বামী ইলিয়াস আলীকে মোবাইলে জানান। ইলিয়াস আলী বাড়িতে এসে ঘটনার বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্থানীয় মসজিদের মাইকে প্রচারনা চালান ও সাধারন ডায়রী করার জন্য থানায় আসেন। এ দিকে প্রতিবেশী কয়েকজন জমিতে বিষ দেওয়ার জন্য আমবাগানে যাওয়ার সময় ডোবায় বস্তায় মৃত দেহ দেখতে পেয়ে থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল করে মৃত্যু সঠিক কারণ নির্নয়ে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, মামলায় স্বাক্ষ্যপ্রমানের ভিত্তিতে গত জানুয়ারি মাসের ৩১ তারিখে বিজ্ঞআদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। মামলার তিনজন আসামীর মধ্যে ঘটনার দিন আটক মোছা. শোভা খাতুন বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন। অপর দুই আসামি ঈশার বাবা মো. ইলিয়াস আলী ও মোছা. শেফালী বেগম পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।