নাটোর অফিস॥
প্রতিষ্ঠার পর থেকে নাটোরের লালপুর উপজেলার অর্জুনপুর-বরমহাটি (এবি) ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছে একটি মাদ্রাসা ভবনের কক্ষে। গত ২০ বছর ধরে মাদ্রাসা কক্ষেই চলছে পরিষদের কার্যক্রম। লালপুর উপজেলায় রয়েছে দশটি ইউনিয়ন পরিষদ ও একটি পৌরসভা। এর মধ্যে ৮টি ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার নিজস্ব আধুনিক ভবন থাকলেও অর্জুনপুর-বরমহাটি (এবি) ইউনিয়ন পরিষদের জমি নিয়ে দুই পক্ষের হাইকোর্টে মামলা থাকায় ২০ বছরেও নিজস্ব ভবন হয়নি। ফলে মাদ্রাসাতেই চলছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। অপরদিকে ৭নং ওয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের জমি সংকটের কারনে ৫০ বছরেও নির্মিত হয়নি ইউনিয়ন পরিষদের আধুনিক অবকাঠামো। ফলে জরাজীর্ণ ভবনেই চলছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। এদিকে ভবন না থাকায় সরকারী বিভিন্ন সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিরম্বনায় পড়তে হয় ইউনিয়নের বাসিন্দারে। সরকারী সুবিধা ও সেবা গ্রহনের জন্য দ্রুত ভবন নির্মানের দাবি জানিয়েছেন ইউনিয়ন দুইটির বাসিন্দারা।
বুধবার সরেজমিনে অর্জুনপুর-বরমহাটি (এবি) ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা আঙ্গারী পাড়া কাওমি মাদ্রাসার তিনটি কক্ষে চলছে ইউনিয়ন পরিষদের দাপ্তরিক কার্যক্রম। পাশের দুইটি কক্ষে চলছে কওমি মাদ্রাসার শিশুদের পাঠ দান। কথা হয় ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফার সঙ্গে। তিনি জানান, পরিষদের ভবন না থাকায় তাদের এই একটি কক্ষে তথ্যসেবা কেন্দ্রের সঙ্গে বসে কাজ করতে হচ্ছে। পাশের দুইটি রুমে চলছে কওমি মাদ্রাসার শিশুদের পাঠ দান। এতে করে নানা সমস্যায় পড়তে হয়।
মাদ্রাসা সুপার ওমর ফারুক বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেনী পর্যন্ত পাঠদান চলে। ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। দুটি কক্ষে পাঠ দানে সমস্যা হয়। তার পরেও ইউনিয়ন পরিষদের জন্য তিনটি কক্ষ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনেক সময় ছেলে মেয়ের পড়ার সময় সমস্যা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা আরিফা বেগম তিনি জানান, কাউন্সিলের কোন ভবন নেই। জন্মনিবন্ধন, পরিচয়পত্র, ভিজিডির চাল, ভিজিএফের চাল ও অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে তাদের মাদ্রাসায় আসতে হয়। একটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দাবি তাদের। ’
ইউনিয়নটির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার বলেন, অর্জুনপুর-বরমহাটি (এবি) ইউনিয়নটি সাবেক গোপালপুর ইউনিয়ন। ইউনিয়নের ৯টি ওয়াডে প্রায় ১৩ হাজার ভোটার রয়েছে।ইউনিয়নের পরিষদ ভবনের জন্য জমি নিয়ে দুই পক্ষের হাইকোর্টে মামলা থাকায় ভবন নির্মান সম্ভব হয় নি। ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিষ্টার পর থেকেই এই মাদ্রাসায় অস্থায়ী কার্যালয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে।
এবিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা আসলাম জানান, ২০০৩ সালে অর্জুনপুর-বরমহাটি (এবি) ইউনিয়ন পরিষদটি স্থাপিত হয়। এই ইউনিয়ন পরিষদের নামে তিন স্থানে জমি রেজিস্টি থাকায় হাইকোর্টে মামলা চলছিলো। যার জন্য এতো দিনেও নিজস্ব কোন ভবন না থাকায় মাদ্রাসাতেই অস্থায়ী ভাবে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছে। কক্ষ সংকটের কারনে পরিষদের দাপ্তরিক কার্যক্রম করতে অনেক সমস্যা হয় তাদের। তবে এখন আর মামলা নেই। পরিষদের নিজস্ব ভবন নির্মানের কাগজপত্র ইউএনওর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
ওয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদটি উপজেলার প্রবেশ দ্বার ধরা হয়। এই ইউনিয়নের ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৯ হাজার। শুধু মাত্র জমি সংকটের কারনে ৫০ বছরেও নির্মিত হয়নি ইউনিয়ন পরিষদের আধুনিক অবকাঠামো। ফলে জরাজীর্ণ ভবনেই চলছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। সরকারী বিভিন্ন সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিরম্বনায় পড়তে হয় ইউনিয়নের বাসিন্দারে। ওয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, ইউনিয়ন পরিষদের আধুনিক ভবন নির্মানের জন্য ২১ শতাংশ জমির প্রয়োজন কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের নামে জমি আছে ১১ শতাংশ। তাই এতো দিনেও ইউনিয়ন পরিষদের আধুনিক ভবন নির্মান হয় নি। তবে এবার আধুনকি ভবন নির্মানের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নির্মানের প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা সুলতানা জানান, দুই ইউনিয়ন পরিষদের যে সমস্যা ছিলো তা নিরসন করে গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে নতুন করে আধুনিক ভবন নির্মানের জন্য প্রস্তাবনা জেলায় পাঠানো হয়েছে। ফাইল জেলা থেকে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়ছে। অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে দুই ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নির্মান কাজ শুরু হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।