নাটোর অফিস॥
নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের ঢুষপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে মতবিরোধের কারণে রোববার থেকে পাঁচ দিন স্কুল বন্ধ রয়েছে। অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে দিচ্ছেন না। এতে করে এলাকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ক্ষতি হওয়ার আশংকা করছেন স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তারা।
সংিশ্লষ্ট সুত্রে জানা গেছে, আফজালুর রহমান নামে অষ্টম শ্রেণি পাস একজনকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন অভিভাবকরা। একজন অভিভাবক এই কমিটি বাতিল চেয়ে গত বুধবার রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।
গত বুধবার দুপুরে ঢুষপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলতে দেখা যায়। শুধু শিক্ষার্থীই নয়, কোনো শিক্ষকও বিদ্যালয়ে ছিলেন না। বিদ্যালয় পাহারা দিচ্ছিলেন অফিস সহকারী রুহুল কুদ্দুস। কিছুক্ষণ পর প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন বিদ্যালয়ে এলে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে এই বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি করতে একটি সভা হয়। এরপর অভিভাবক সদস্যদের সম্মতিক্রমে আফজালুর রহমানের নাম পাঠানো হলে তিনি বিদ্যালয়ের কমিটির সভাপতি হন। ওই এলাকার মাহাবুব আলম নামে এক ব্যক্তিও সভাপতি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর নাম বাদ পড়ায় এলাকার অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে স্কুলে শিক্ষার্থী পাঠানো বন্ধ করে দেন।
শিক্ষার্থী শূন্য শ্রেণিকক্ষ। প্রধান শিক্ষক জানান, স্কুলটি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। শিক্ষার্থী রয়েছে দুই শতাধিক। এর মধ্যে নিয়মিত ১৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী স্কুলে আসত। কমিটি গঠন নিয়ে মতবিরোধে পাঁচ দিন ধরে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরাতে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাচ্ছেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য আব্দুস সাত্তার, আশরাফুল ইসলাম, মোশরাফ হোসেন, রঞ্জিত সরকারসহ বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, প্রধান শিক্ষক নিজের সুবিধা হাসিল করতেই উচ্চশিক্ষিত লোককে বাদ দিয়ে একজন অষ্টম শ্রেণি পাস লোককে স্কুল কমিটির সভাপতি করেছেন। এ কমিটি বাতিল ও দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষককে অপসারণের দাবিতে পাঁচ গ্রামের মানুষ একত্র হয়েছেন। দাবি পূরণ না হলে তাঁরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন না।
কমিটি থেকে বাদ পড়া মাহাবুব আলম বলেন, এই কমিটি বতিলের জন্য গত বুধবার রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন নিজেও ঠিকমতো স্কুলে আসেন না। তিনি কাউকে না জানিয়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়ার কথা বলে গোপনে অভিভাবকদের থেকে কাগজে স্বাক্ষর করে একজন অযোগ্য লোককে সভাপতি করেছেন।
তবে প্রধান শিক্ষক তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কমিটির সভাপতি আফজালুর রহমান বলেন, আড়বাব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি তিনি। স্কুলের সভাপতি হওয়ার জন্য এমপি ডিও লেটার দিলে তিনি সভাপতি হয়েছেন। এজন্য ওই এলাকার কিছু লোক ষড়যন্ত্র করে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে দিচ্ছেন না।
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিউলী আহমেদ বলেন, স্কুলে কমিটি নিয়ে সমস্যা ছিল, মোটামুটি সমাধান হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা আবার স্কুলে আসবে। তবে কমিটি অনুমোদন দেয় বোর্ড। কমিটি বাতিল সময়ের ব্যাপার। অভিভাবকরা যদি স্কুলে শিক্ষার্থীদের না পাঠান তাহলে তাদের লেখাপড়ার ক্ষতি হবে। শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরাতে শিক্ষকদের তাঁরা বাড়ি বাড়ি পাঠিয়েছেন। তাঁরা অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপরও যদি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা না আসে তখন বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা সুলতানা বলেন, বিষয়টি শুনেছেন। কমিটি নিয়ে যেসব সমস্যা আছে, তা নীতিমালা অনুযায়ী সমাধান করা হবে। কিন্তু এর সঙ্গে স্কুলে শিক্ষার্থীদের আসতে না দেওয়া কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষার্থীরা যাতে স্কুলে আসে এবং বিদ্যালয়ের সব শিক্ষকও যথাসময় উপস্থিত থাকেন, তার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসহ বিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।