নাটোর অফিস ॥
নাটোরে তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে মাটি নেয়া হচ্ছে ইট ভাটায়। এক শ্রেণীর সুযোগ সন্ধানী মাটি ব্যবসায়ী জমির উপরিভাগের উর্বর এসব মাটি ইট ভাটায় নিতে কৌশল অবলম্বন করে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নেয়া হয়েছে। পতিত জমি চাষাাবাদের আওতায় আনতে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক নির্দেশকেও তোয়াক্কা করেনি মাটি খেকোরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাযায়, নাটোর সদর উপজেলার বাকসোর গ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্পের উপহারের ঘর এলাকায় মাটি ভরাটের প্রয়োজন দেখা দেয়। এসময় মেহেদী হাসান ও ছোট আবুল কালাম নামে দুই ব্যক্তি তাদের চুক্তি নেয়া একটি অসমাপ্ত পুকুর খননের অনুমতি নিয়ে আ¤্রয় প্রকল্পে প্রয়োজনীয় মাটি সরবরাহের কথা বলেন। গত প্রায় ১৫দিন আগে তারা উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি পাওয়ার পর পরই সদর উপজেলার পুরাতন বাকসোর গ্রামের জনৈক বাদেশের প্রায় ১০ বিঘা আয়তনের একটি ফসলি জমিতে এক্সেভেটর মেশিন (ভেকু) লাগিয়ে পুকুর খনন কাজ শুরু করে। ওই পুকুর থেকে উত্তোলনকৃত মাটি বিভিন্ন ইটভাটার সরবরাহ করার পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের নজর এড়াতে মাঝে মধ্যে দুই একটি ট্রাক্টরে করে নেয়া মাটি বাকসোর গ্রামের আশ্রয়ন প্রকল্পে সরবরাহ করা হয়। এদিকে ওই পুকুরের মাটি সংশ্লিষ্ট ইটভাটায় দ্রুত সরবরাহের জন্য বিপুল পরিমান ট্রাক্টর লাগানো হয়। প্রতিদিন গভীর রাত অবদি ওই সব ট্রাক্টরে করে মাটি টানার কাছে নিয়োজিত থাকে। এদিকে গত দুসপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দিনের আলো সহ রাতভর এলাকা দিয়ে শত শত মাটি বহনকারী ট্রাক্টর চলাচলের কারনে গ্রামের কাঁচা রাস্তার দু’ধারে জমি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ধুলা বালিতে গোটা গ্রামের পরিবেশ দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। গ্রামবাসীর অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মেলেনি। উপরন্তু মাটি কাটার সাথে যারা জড়িত তাদের চোখ রাঙ্গানির মুখে পড়তে হয়েছে।
আমির উদ্দিন নামে ষাটোর্ধ বয়সী এক কৃষক বলেন, রাতে তারা বাড়িতে ঘুমোতে পারেননা। শিশু সন্তানদের নিয়ে আতংকে দিন কাটে। এলাকা দিয়ে দিনে রাতে মাটি টানার নিয়োজিত পাঁচশর অধিক ট্রাক্টর চলাচল করে। এসব মাটি বহনকারী ট্রাক্টর চলাচলের কারনে রাস্তার ধারের বৈদ্যুতিক খুটি হেলে পড়ায় ঝুঁকিপুর্ন হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কয়েকজন জানান, সরকারি দলের লোকজন এই পুকুর কাটার সাথে জড়িত থাকায় তারা সাহস করে কিছু বলতে পারেননা। শত শত ট্রাক্টর চলাচল করায় গ্রামের রাস্তা দিয়ে এখন হাঁটা যায়না।
জমির মালিক বাদেশের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যোগাযোগ করতে না পারায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে পুকুর খনের সাথে জড়িত মেহেদী হাসান জানান,উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তিনি মাটি কাটছেন। সদর ভুমি কর্মকর্তা ও ইউএনও বিষয়টি জানেন বলে জানান তিনি। চুক্তি মোতাবেক বাকসোর আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকায় গতকাল শনিবার পর্যন্ত মাটি দেয়া শেষ হয়েছে। পুকুর খনন পুরোপুরি শেষ করতে না পারায় রোববার বিকেল পর্যন্ত মাটি কেটে বন্ধ করে দেয়া হবে। মাঝপথে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের চাহিদার কারনে ২/৩দিন মাটি কাটা বন্ধ ছিল। তাই পুকুরটি সুন্দর করে প্রস্তুত করা যায়নি। এছাড়া গণমাধ্যম কর্মীরাও মাঝে মধ্যে বিরক্ত করেছেন বলে জানান তিনি। গণমাধ্যম কর্মীদের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি লাইন কেটে দেন।
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক খন্দকার মিজানুর রহমান মিল্টন বলেন,কোন পুকুর খনন করে ইটভাটায় মানি সরবরাহের বিষয়টি তিনি জানেনা। যেহেতু এখনও জেলার অধিকাংশ ইটভাটায় আগুন দেয়া হয়নি সেজন্য মাটির প্রয়োজন নেই। আর ভাটা সমুহে যে পরিমান মাটি মজুদ আছে তা দিয়ে ২/৩ মাস এমনিতেই চলবে। যারা করছেন তারা কার অনুমতি নিয়ে করছেন। বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা দরকার।
সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) মোঃ জোবায়ের হাবিব জানান,ইতিপুর্বে যাদের মাধ্যমে মাটি সরবরাহ নেয়া হয়েছে,তাদেরই মাধ্যমেই বাকসোর আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য মাটি নেয়া হয়েছে। ইতিপুর্বে সেই মাটি সরবরাহ নেয়া শেষ হয়েছে। কোন ধরনের পুকুর খননের বিষয় সম্পর্কে তিনি অবগত নন। যদি কেউ করে থাকে তা এখনই বন্ধ করে দেয়া হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা খাতুন জানান’ কাউকে পুকুর খননের কোন অনুমতি দেয়া হয়নি। বাকসোর আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য কিছু মাটির প্রয়োজন হওয়ায় মাটি ব্যবসায়ীর কাছে তা চাওয়া হয়েছে এবং সেই মাটিও সরবরাহ নেয়া শেষ হয়েছে ৩/৪ দিন আগে। কেউ পুকুর খনন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, খবরটি পাওয়ার পরপরই সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) মোঃ জোবায়ের হাবিবকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে তা বন্ধ করা হয়েছে। কোন ফসলি জমি নষ্ট করতে দেয়া হবেনা।