নাটোর অফিস ॥
১০ দফা দাবিতে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক সমিতির ডাকা নাটোরসহ রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ায় সাধারন যাত্রিদের দুভোর্গ সহ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে। যাত্রিবাহি বাস ছাড়াও পণ্যবাহি যানবাহনও চলাচল করছেনা। সকালের দিকে শহরের হরিশপুর এলাকায় কিছু শ্রমিক ইজিবাইক সহ সিএনজি থ্রিহুইলার গাড়ি আটকে ফিরে যেতে বাধ্য করে। পরে নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে ইজিবাইক সহ হালকা যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে শহরতলির কয়েকটি এলাকা ছাড়া জেলার বাহিরে ইজিবাইক সহ সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
জেলা পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক শরিফুল ইসলাম কালিয়া বলেন, এধরনের কোন ঘটনায় ঘটেনি। ইজিবাইকসহ সব ধরনের হালকা যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে রাজশাহীতে ৩ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশের আগে এই পরিবহন ধর্মর্ঘট আহ্বান করায় সাধারন যাত্রিরাও পড়েছেন বিপাকে। অনেকেই ভোগান্তিসহ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সকালে বাস স্ট্যান্ডে এসে অনেকেই বাস ধর্মঘটের খবর জানতে পারেন। এসময় কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বেশী টাকা ব্যয় করে সিএনজি বা ইজিবাইকসহ হালকা যানবাহনে গন্তব্যে যেতে হয়। রাজশাহী ও যশোরগামী দুই যাত্রি নাটোর বাসস্ট্যান্ডে এসে বাস ধর্মঘটের কথা জানতে পারেন। রাজশাহীতে রোগী নিয়ে যেতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই যাত্রি। এছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে কর্মস্থলে যেতে বেশী টাকা দিয়ে ইজি বাইকে যেতে হয়েছে এক যাত্রিকে। ঢাকায় চিকিৎসাধীর রোগী সহ সেখানে অবস্থানরত সজনদের খাবার নিয়ে যাওয়ার জন্য বাস স্ট্যান্ডে এসে বাস না পেয়ে মোটা টাকা গুনতে হয়েছে ওই যাত্রিকে। তাদের ভোগান্তির জন্য বাস মালিক সমিতি সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দুষলেন ওই যাত্রি। তবে যাত্রিদের অনেকেই বিএনপির সমাবেশে লোক সমাগম ঠেকাতেই সরকারের ইশারায় এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ও উত্তরবঙ্গ মোটর মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান বলেন, তারা কারো সমাবেশ ঠেকাতে এই ধর্মঘটের ডাক দেননি। সরকার এখনই তাদের দাবি মেনে নিলে ধর্মঘটও থাকবেনা। বাস চালিয়ে যে অর্থ পাওয়া যায় তা দিয়ে যন্ত্রাংশ কেনা যায়না তহবিলে হাত দিতে হয়। জ্বালানী তেল সহ সব যন্ত্রাংশের দাম আকাশ চুম্বি। ফলে বাসের আয় দিয়ে চালকের বেতন দেয়া যায়না। এছাড়া ট্যাক্টের বিষয়টিও ভোগাচ্ছে বাস ও ট্রাক মালিকদের। করোনার সময়ে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও ট্যাক্স গুনতে হচ্ছে। তিনি বলেন ধর্মঘট ডাকলে যাত্রিদের দুর্ভোগ হবে। যাত্রিদের সাথে বাস মালিক বা শ্রমিকদের কোন শত্রুতা নেই। তাদের কেউনা কেউ বাস মালিক শ্রমিকদের সজন। করোনা কালীন ট্যাক্স মওকুফ ও জ্বালানী তেল এবং যন্ত্রাংশের মুল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবী বাস্তবায়নের জন্য এই ধর্মঘট। এই ধর্মঘট পালনে কোন জায়গায় জোরজবরদস্তি করা হচ্ছেনা। যানবাহন শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি করছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান জানান, নাটোরের কোথায় কোন অপ্রিতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। শান্তিপুর্ন পরিবেশ বজায় রাখতে জেলার গুরুত্বপুর্ন এলাকায় আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সর্তক অবস্থায় রয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন,এই সরকারের কোন লজ্জা শরম নেই। ইতিপুর্বে তারা দেখেছে তাদের ইন্ধনে এসব ধর্মঘট দিয়ে সফল হতে পারেনি। সব সমাবেশে জনতার ঢল নেমেছিল। আমরা ভেবেছিলাম সেই উপলদ্ধি থেকে রাজশাহীর সমাবেশের আগে কোন ধর্মঘট ডাকবেনা তারা। এই ধর্মঘট দিয়েও রাজশাহী সমাবেশে জনতার ঢল ঠেকাতে পারবেনা। কয়েক লাখ মানুষ রাজশাহীর সমাবেশে আসার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। এমনিতেই রাজশাহী হচ্ছে বিএনপির ঘাটি। এই সরকারের পতন ঘটাতে মানুষ এখন বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ। সরকারের এসব নির্যাতন -নিপিড়ণ বিএনপিকে আরও মজবুত করছে। ধর্মঘটের ডাক দিলেও রাজশাহীর সমাবেশ হবে স্মরনকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ।