নাটোর অফিস॥
১১ জন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে নাটোর শহরতলীর দত্তপাড়া হাটের পুরো জায়গা দখলে রাখার। ওই প্রভাবশালীদের দাপটের কারনে হাটে জায়গা না পেয়ে সাধারন কৃষক বাধ্য হয়ে প্রতিদিনই তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে নাটোর ঢাকা-মহাসড়ক ঘেঁেষ বসেন। এতে যে কোনও সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে । প্রভাবশালীরা শুধু হাটের দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি। সরকারি জায়গা লাখ লাখ টাকায় বেচাকেনাও করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দ্রুত হাটের জায়গা দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
জানা যায়, প্রতিদিন নাটোর-ঢাকা মহাসড়কে দ্রুতগতির শত শত যানবাহন চলাচল করে। এরই মাঝে সড়কের পাশে নিত্যপন্য কেনাবেচায় মগ্ন সবাই। সরকারী ১ নম্বর খাস খতিয়ান ভুক্ত হাটের নির্ধারিত ১২ শতক জায়গা দীর্ঘদিন ধরেই দখলে রেখেছে ১১জন দখলদার। তাই বসার জায়গা না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ব্যস্ত মহাসড়কের পাশেই নিজেদের উৎপাদিত কাঁচামাল নিয়ে বসতে হচ্ছে কৃষকদের।
স্থানীয় কৃষক রেজাউল করিম গাজী বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দৈনন্দিনের ক্রেতা বিক্রেতার কর্মযজ্ঞ চলে দত্তপাড়া হাটে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দখলকৃত স্থানে যে যার মতো গড়ে তুলেছে স্থায়ী স্থাপনা। কেউ কেউ হাটের জায়গায় স্থায়ী অবকাঠামো করে অযথাই ফেলে রেখেছেন। মাঝে মাঝে দেড় থেকে দুই লাখ টাকায় চলে দখলদারিত্ব কেনাবেচাও। কয়েকদিন আগেও আব্দুর রাজ্জাক নামে একজন দুই লাখ টাকায় আরেকজনের দখল কিনেছেন।
কাঁচামাল ব্যবসায়ী সেন্টু হোসেন জানান, হাটের নির্ধারিত জায়গায় হুসেন মিয়া, মোতালেব, শরৎ, নুর আলম পাকা দোকান করে দখল করে রেখেছে। এক একজনের একাধিক পাকা দোকান ঘর রয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকজন জায়গা দখল করে অযথাই পরিত্যাক্ত করে ফেলে রেখেছে। তারা নিজেও ব্যবসা করেন না। অন্যদেরও বসতে দেননা। দ্রুত প্রশাসন যদি এইসব জায়গা দখলমুক্ত করে দেন তাহলে সবাই সুন্দরভাবে পণ্য কেনাবেচা করতে পারবে।
বেলাল হোসেন নামে আরেকজন এলাকাবাসী জানান, হাটের নির্ধারিত ১২ শতক জায়গা অবৈধ কিছু দখলদার দখল করে রেখেছে। যার কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতাদের ব্যস্ত মহাসড়কের পাশে কেনাবেচা করতে হয়। সড়ক সম্প্রসারণ এবং নতুনভাবে দত্তপাড়া ব্রীজ হবার কারণে আরও দ্রুত গতিতে বাস ট্রাক চলে। ফলে যে কোনও সময় বড় ধরেনর দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। কয়েকদিন আগেও সড়ক দূর্ঘটনায় একজন মারা গেছে। আহত হয়েছে কয়েকজন। তাই মানুষের জীবনের নিরাপত্তায় দ্রুত বাজারের জায়গাটি দখলমুক্ত করা দরকার।
অবৈধ দখলদার হুসেন মিয়া জানান, বহুবছর ধরে আমরা হাটের জায়গায় ব্যবসা করে আসছি। এখন সরকার ভেঙ্গে দিলে আমাদের কিছুই করার নাই। কয়টা পাকা দোকান আছে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, তার মাত্র তিনটি পাকা দোকানঘর রয়েছে।
দখলদার মোতালেব মিয়া জানান, নিয়মিত এখানকার পজিশন কেনাবেচা হয়। তিনিও খেকার বাপের কাছ থেকে জায়গা কিনে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন।
আরেক দখলদার নূর আলম জানান, আজ থেকে ৫০ বছর আগে তার বাবা গণি শিকদার ছাদ ঢালাই করে তিন রুম বিশিষ্ট দোকানঘর করেছিল। বাবা মারা যাবার পর তিনি সারের ব্যবসা করছেন। সরকারি জায়গায় দোকান থাকলেও এর বৈধতা সম্পর্কে জানেন না বলে জানান তিনি।
দত্তপাড়া বাজার কমিটির সভাপতি আনিসুর রহমান জানান, দত্তপাড়া হাটের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি। এরপর প্রশাসন থেকে দখলকৃত স্থাপনার চিহ্নিত করে লাল দাগ দিয়েছে। এর কিছুদিন পর সকল অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ নোটিশও করেছে প্রশাসন। এখন আমাদের দাবী দ্রুত দখলদারদের উচ্ছেদ করা হোক।
জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, আমাদের দত্তপাড়ায় একটি হাট রয়েছে। সেখানে অবৈধভাবে কেউ কেউ হাটের জায়গা দখল করে রেখেছে। বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যারা স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে হাটের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে তাদের উচ্ছেদ করা হবে। সেই সাথে যারা সাধারণ ব্যবসায়ী তারা যাতে নিবিগ্নে ব্যবসা করতে পারেন সে ব্যাপারে আমরা প্রদক্ষেপ গ্রহন করেছি। হাট কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে অবৈধ দখলকারীদের বাণিজ্যিক অবকাঠামো সনাক্ত করেছেন জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে উচ্ছেদ নোটিশও দেয়া হয়েছে। নিজ থেকে তারা সরে না গেলে নিয়ম অনুযায়ী তাদের উচ্ছেদ করা হবে।