নাটোর অফিস॥
নাটোরের গুরুদাসপুরের এক যুবক সস্তায় ডলার কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। দেড় লাখ টাকায় ডলার কিনে পেয়েছেন প্যাকেটে মোড়ানো ভিম সাবান। এ ঘটনায় যার মাধ্যমে ডলার কিনে ভিম সাবান পেয়েছিলেন তাকে ২২ ঘন্টা বাড়িতে আটক রাখার পর এক লাখ টাকায় রফা দফাও করেছেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামে। প্রতারণার শিকার যুবক ইমান আলী (২৭) ওই এলাকার দেলবার হোসেনের ছেলে।
জানা যায়, পাশ্ববর্তী বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া কাটাসকুল গ্রামের লোকমান হেকিমের ছেলে পিরোজ কবিরের সাথে চাকুরির সুবাদে পরিচয় হয় ইমান আলীর। গড়ে উঠে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। পিরোজ কবির বনপাড়া দিয়ার পাড়ার একজন ডিলারের আওতায় একটি বেসরকারী কোম্পানিতে চাকুরি করেন। ইমান আলীও একটি বেসরকারী কোম্পানিতে চাকুরি করেন। প্রায় ৬ মাসের সম্পর্কে দুজনের মধ্যে গড়ে উঠে সক্ষ্যতা। পরে পিরোজ কবিরের পরামর্শে গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাজশাহী বানেশ্বর এলাকায় যান ডলার কিনতে। বানেশ্বর এলাকায় একজন মধ্যবয়সী নারী ও দুই জন মধ্যবয়সী পুরুষ তাদের বাজারের একটি গলির মধ্যে নিয়ে যায়। প্যাকেটে ভর্তি সৌদি আরবের রিয়েল দেখান পিরোজ কবির ও ইমান আলীকে। দাম চেয়েছিলেন সাড়ে তিন লাখ টাকা। এক পর্যায়ে দেড় লাখ টাকায় তারাহুড়া করে প্যাকেটে মোড়ানো ডলার ক্রয় করে বাস যোগে নাটোরে রওনা হয়। মাঝ রাস্তায় এসে প্যাকেটের ডলার ঠিক আছে কিনা তা দেখার জন্য প্যাকেট খুলতেই বেরিয়ে আসে ভিম সাবান।
পরবর্তীতে পুনরায় বানেশ্বর এলাকায় গিয়ে তাদের নম্বরে ফোন দেয় এবং খোজাখুজি করতে থাকে। কাউকে না পেয়ে হতাশাগ্রস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে আসে দুই যুবক। বাড়িতে ফেরার পরে গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বনপাড়া এলাকা থেকে পিরোজ কবিরকে ইমানের বাড়িতে নিয়ে এসে ২২ ঘন্টা আটক রাখা হয়। আটক রেখে দেড় লাখ টাকা ফেরৎ চাওয়া হয় পিরোজ কবিরের কাছ থেকে। পরে শুক্রবার ( ৪ নভেম্বর) সন্ধায় দুই পরিবারের অভিভাবকদের সমঝোতার মাধ্যমে এক লাখ টাকায় ছেড়ে দেওয়া হয় পিরোজ কবিরকে।
তবে পিরোজ কবির প্রতারক চক্রের সাথে জড়িত নয় দাবি করে বলেন, প্রায় এক মাস পূর্বে বনপাড়া একটি হোটেলে খাবার খাওয়ার সময় একজন বৃদ্ধ ব্যক্তির সাথে আমার পরিচয় হয়। সেই বৃদ্ধ ব্যক্তি আমাকে সৌদি আরবের একটি রিয়েল দিয়ে বলে যে, বাবা দেখো তো এটা এখানে ভাঙ্গানো যাবে কিনা। তখন আমি তাকে বলি এখানে ডলার ভাঙ্গানো যায়না। তারপরে সে আমার কাছে ওই ডলার দিয়ে বলে তুমি রেখে দাও। কখনও ভাঙ্গাতে পারলে আমাকে বিকাশ কইরো। এ কথা বলে তার নম্বর দিয়ে চলে যায়। পরবর্তীতে আমি রাজশাহী গিয়ে ১২০০ টাকা দিয়ে ওই ডলার ভাঙ্গিয়ে আমার খরচ রেখে তার বিকাশে পাঠিয়ে দেই। কিছুদিন পরে একজন নারীর কাছে আরো অনেক গুলো ডলার আছে সেগুলো বিক্রি করবে বলে আমাকে জানায়। তারা মুর্খ মানুষ কোথায় কি করবে এ জন্য আমাকে বলেছে। আমি প্রলোভনে পরে টাকার যোগার করার চেষ্টা করি। কিন্তু টাকা যোগার করতে না পারায় ইমান আলীর সাথে বিষয়টি আলোচনা করি। পরে ইমান আলী দেড় লাখ টাকায় ওই ডলার কিনতে চায়। (৩ নভেম্বর) বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই বৃদ্ধ ব্যক্তির মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বানেশ্বর বাজারে যাই। তারা কয়েকটি সৌদি আরবের রিয়েল ডলার দেখায় এবং দাম চায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। দেড় লাখ টাকার বেশি দিয়ে আমরা ডলার কিনবো না বললে তারা কিছুক্ষন ভেবে চিন্তে আমাদের কথায় রাজি হয়। কথা চলতে চলতে তারাহুড়া করে আমাদেরকে প্যাকেটে মোড়ানো ডলারের ব্যাগ দিয়ে দেড় লাখ টাকা নিয়ে চলে যায়। মাঝ রাস্তায় এসে প্যাকেট খুলে দেখি ভিম সাবান। প্যাকেটে কোন ডলার নেই। প্রতারক চক্রের সদস্য সন্দেহে ইমান আলী ও তার লোকজন আমাকে তার বাড়িতে আটক রাখে। আমার বাড়িতে খবর দিলে শুক্রবার সন্ধায় এক লাখ টাকায় রফা দফা করে ছাড়া পাই। তবে প্রতারক চক্রের কারো নাম পরিচয় আমি জানিনা। তাদের মোবাইল নম্বর গুলোও ডিলিট করে দিয়েছি। লোভের কারণে ইমান আলী ও আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি।
এ বিষয়ে ইমান আলী জানান, পিরোজ কবিরের সাথে আমার ৬ মাসের সম্পর্ক। চাকুরির সুবাদে তার সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাই তাকে বিশ্বাস করেছিলাম। টাকার লোভে পড়ে এমন ফাঁদে পদক্ষেপ দিয়ে ভূল করেছি। সমঝোতার মাধ্যমে এক লাখ টাকায় পিরোজ কবিরকে ছেড়ে দিয়েছি। এমন ঘটনায় আইনের পরামর্শ বা সহযোগিতা কেন নিলেন না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যেহেতু ভূল করেছি তাই চাইনি যে এটা থানা পুলিশ জানুক। নিজেদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেছি।
গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আব্দুল মতিন জানান, এ সংক্রান্ত কোন তথ্য বা অভিযোগ তার কাছে আসেনি।