নবীউর রহমান পিপলু: নাটোরের উত্তরা গণভবনের মৃতপ্রায় বিরল প্রজাতির হৈমন্তি ফুল এখন সুগন্ধ ছড়াচ্ছে। দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির রানী মহলে (যা বর্তমানের উত্তরা গণভবন) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী বিরল প্রজাতির এই হৈমন্তি ফুল গাছ নিজের হাতে লাগিয়েছিলেন। গাছটি পরিচর্যার অভাবে মৃত প্রায় অবস্থায় পড়ে ছিল কয়েক বছর।
সম্প্রতি গণভবনটি গণপুর্ত বিভাগের কাছে থেকে জেলা প্রশাসন সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেওয়ার পর মৃত প্রায় হৈমন্তি ফুলের গাছটি নজরে পড়ে। উদ্ভিজ বিশেষজ্ঞ সহ কৃষিবিদদের মাধ্যমে গাছটি পরিচর্যা করে বাঁচিয়ে তোলা হয়। বিরল প্রজাতির এই হৈমন্তি ফুলের গন্ধ এখন নয়নাভিরাম এই উত্তরা গণভবন সহ আশে পাশের এলাকায় সুগন্ধ ছড়াচ্ছে।
শনিবার নাটোর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘নাটোর ভিশন’সহ বেশ কয়েকটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনকালে তুলে ধরা হয়েছে ইতিহাসখ্যাত নাটোরের উত্তরা গণভবনের ইতিহাস- ঐতিহ্য।
প্রায় ৩০০ বছরের ঐতিহাসিক এই রাজ প্রাসাদটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় প্রতিদিন শতশত দর্শনার্থী এখানে ভীড় করছেন। এখানকার নয়নাভিরাম বাগান,প্রাচীন স্থাপত্য শৈলী,সুদৃশ্য লেক,ভাস্কর্যসহ অন্যন্য স্থাপনা পর্যটক আকৃষ্ট হচ্ছে। দেশ বিদেশের বিরল ও দুস্প্রাপ্য প্রজাতির ফুল,ফল,ভেষজ ও শোভবর্ধনকারী গাছের সমৃদ্ধ মজুদ রয়েছে এখানে। রয়েছে ২০০ বছরের পুরাতন ঘড়িটি। যা এখনও সময় দিয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসন এই ভবনের দায়িত্ব নেওয়ার পর উদ্ধারকরা হয় এই রাজ পরিবারের সদস্য রাজকুমারী ইন্দুপ্রভা দেবীর অপ্রকাশিত সাহিত্যকর্ম। রাজকুমারীর আত্মজীবনী ও ব্যক্তিগত ডায়েরী থেকে বেড়িয়ে আছে রাজপরিবার ও অন্দর মহলের অনেক অজানা গল্প। রাজকুমারীর লেখা প্রেমের চিঠি আলোড়ন তোলে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে নাটোর ট্রেজারি থেকে পাওয়া যায় একটি আলোকচিত্র। যা ছিল রূপার ফ্রেমে রাজসিক ঢংয়ে বাঁধাই করা ইন্দু প্রভার ছবি। পাওয়া যায় তার লেখা ২৮৫ টি প্রেম পত্র। এসব বিরল ও দুস্প্রাপ্য পান্ডুলিপি পাওয়ার পর আরো অনেক কিছুর সন্ধানে নেমে পড়ে জেলা প্রশাসন। খোঁজ মেলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজের হাতে লাগানো হৈমন্তি গাছের। পরিচর্যার অভাবে গাছটি তখন মৃত প্রায়। অনেক চেষ্টার পর গাছটিকে বাঁচিয়ে তোলা হয়। এই হৈমন্তি এখন রানী মহলে ছড়িয়ে যাচ্ছে সুমিষ্ট সুবাস।
বর্তমানে প্রাসাদটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্বাবধানে এবং জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বাধীন উত্তরা গণভবন সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক ড.মো: রাজ্জাকুল ইসলাম জানান,এই দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের ইতিহাস ও তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও সাহিত্য কর্ম নিয়ে স্থাপন করা সংগ্রহশালা পর্যটকদের আগ্রহ বেড়েছে। সেই পেক্ষাপটেই নাটোরের জেলা প্রশাসন রাজপরিবারের ইতিহাস সম্বলিত বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে নতুন নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে ।