নাটোর অফিস.
মাদার তেরেসা বলেছিলেন, সৃষ্টিকর্তা দারিদ্রতা তৈরি করে দেন না, বরং আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করি না বলেই দারিদ্রতা সৃষ্টি হয়। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি প্রতি মাসে প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় হত দরিদ্র মানুষ খুঁজে বের করে ইচ্ছে পূরণ করেন ডা.মোঃ আমিরুল ইসলাম সাগর। গত দুই বছরে ২৪ জন অসহায় হত দরিদ্র মানুষের ইচ্ছে পূরণ করেছেন তিনি। আমিরুল ইসলাম সাগর নাটোরের গুরুদসপুর উপজেলার নাজিরপুর বাজারের বাসিন্দা আলহাজ্ব মোঃ আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে। তিনি হাজেরা ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন।
জানা যায়, ২০২০ সালের ( ৬ সেপ্টেম্বর) ১১ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে “ইচ্ছে পূরণ” নামের একটি টিম গঠন করেন। ইচ্ছে পূরণ টিমের সদস্যদের কাজ উপজেলাব্যাপী গরীব অসহায় হতদরিদ্র মানুষ খুঁজে বের করা। হত দরিদ্র মানুষদের খুঁজে বের করে তাদের ছোট ছোট ইচ্ছে পূরণ করেন সাগর। ইচ্ছে পূরণের প্রথম পর্ব শুরু হয় উপজেলার নাজিরপুর বৃন্দাবনপুর গ্রামের হত দরিদ্র বৃদ্ধ দম্পতিদের দিয়ে। ইচ্ছে পূরণ টিমের সদস্যরা ওই বৃদ্ধ দম্পতির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ভাঙ্গা একটি ছুপড়ী ঘরে তারা দুই জন বসবাস করেন। তারপর আবার মেয়ে জামাইয়ের বাড়ি। মেয়ে জামাইও অনেক দরিদ্র। এক বেলা খেয়ে এক বেলা না খেয়ে জীবন যাপন করছিলেন তারা। বয়সের ভারে শতবছর বয়সী বৃদ্ধ বাছেদ আলী আর তার স্ত্রী রুপজান বেওয়া হাটা চলাও ঠিক মত করতে পারতো না। চোঁখে দেখতে পেতো না ঠিক মত। তাদের এই দুর্দশার কথা ইচ্ছে পূরণ টিমের সদস্যরা সাগর কে জানায়। তারপর সেই বৃদ্ধ দম্পতির বাড়িতে গিয়ে তাদের ছোট ছোট যে ইচ্ছে গুলো ছিলো তার পূরণ করে দেন। এখন ওই বৃদ্ধ দম্পতি অনেক ভাল রয়েছে। নিয়মিত খোঁজ খবর নেন সাগর।
উপজেলা পৌর সদরের শিশু আলিফ। সংসারে অভাব অনটনের কারনে বাবাকে সহযোগিতা করতে ফেরি করে বিক্রি শুরু করে বাদাম। শিশু আলিফের বাদাম বিক্রি চোঁখে পড়ে সাগরের। তখন তার সাথে কথা বলে তাকে স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তিনি। এছাড়াও স্কুলে যাতায়াতের জন্য নতুন একটি সাইকেল কিনে দেয় তাকে। মশিন্দা ইউনিয়নের এক বৃদ্ধ মা অর্থের অভাবে দীর্ঘ তিন বছর চোঁখে দেখতে পারতো না। বাড়ি থেকে তাকে ডেকে নিয়ে এসে বিনামুল্যে অপারেশন করিয়ে দিয়েছেন। এখন পৃথীবির আলো দেখতে পেয়ে খুঁশি ওই বৃদ্ধ নারী। ঠিক এমন ভাবেই গত দুই বছরে প্রতি মাসে একটি করে মানুষের ছোট ছোট ইচ্ছে পূরণ করেছেন সাগর। যার মধ্যে রয়েছে, অসুস্থ্যতা, অর্থের অভাবে স্কুলে যেতে না পারা, বিবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া, সাংসারিক অস্বচ্ছলতাসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্থ্য হত দরিদ্র মানুষদের সহযোগিতা করেছেন তিনি।
ইচ্ছে পূরণ টিমের সদস্য শাহরিয়ার স্বদেশ জানান, আমিরুল ইসলাম সাগরের দিক নির্দেশনায় আমরা প্রথে প্রান্তরে অসহায় মানুষ খুঁজে বেড়াই। প্রকৃত অসহায় মানুষদের খুঁজে বের করে তাদের বিস্তারিত পরিচালকের কাছে জমা দেওয়া হয়। তারপর মাসের এক তারিখে তাদের বাসায় গিয়ে সাধ্য মত তাদেরকে সহযোগিতা করা হয়।
ডা.মো. আমিরুল ইসলাম সাগর জানান, তিনি তার বাবা আলহাজ্ব মো.আনোয়ার হোসেনের আদর্শে আদর্শিত। তার দেখানো পথেই তিনি চলছেন। তারা বাবা প্রতিটি সময় অসহায় হত দরিদ্র মানুষের পাশে দাড়াতেন। তার ভাইও সরকারী মেডিকেলের ডাক্তার। বাবা ভাই সকলেই মানুষের কল্যাণে কাজ করে এবং সহযোগিতা করে। সেই লক্ষ্যেই আমি চিন্তা করি বেশি না পারি অন্তত প্রতি মাসে একজন করে মানুষকে সহযোগিতা করে তার জীবন চিত্র বদলে দিতে। আমার এই ধারা অব্যাহত থাকবে।