নাটোর অফিস ॥
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় একই কলেজের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ৩ জন ও ১ জন সহযোগীসহ ৪ কিশোর-কিশোরীকে দশ বছর করে আটকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার দুপুরে নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম এই আদেশ দিয়েছেন। ভিকটিমসহ দন্ডিত সকলেই বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুর স্যাপার কলেজের শির্ক্ষাথী। দন্ডিতরা হলো লালপুর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মহরম আলীর ছেলে তুষার আলী (১৮),রাজশাহীর বাঘমারা উপজেলার শ্রীবর্তিপাড়া এলাকার ওবায়দুর রহমানের ছেলে ইমন হোসেন (১৭) ,নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার পুর্ব মাধনগর গ্রামের সালাম পিয়নের ছেলে তুষার ইমরান ও তাদের সহযোগী ভিকটিম ত্রর বান্ধবী লালপুর উপজেলার পুকুরপাড়া এলাকার এন্তাজের মেয়ে মোছাঃ মেঘলা খাতুন ওরফে ছাফিয়া।
আদালত সুত্রে জানা যায়, স্যাপার কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তুষার আলী একই কলেজের ছাত্রী (১৬) প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্যক্ত করত। কিন্তু নদীয়া তার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে আসছিল। ভিকটিম প্রতিদিন কলেজে আসার সময় তার বান্ধবী মোছাঃ মেঘলা খাতুন ওরফে ছাফিয়াকে সাথে নিয়ে আসতো। এরই এক পর্যায়ে ২০১৭ সালের ১২ জুলাই কলেজ ছুটির পর মোছাঃ মেঘলা খাতুন ওরফে ছাফিয়ার মাধ্যমে ভিকটিমকে বেড়ানোর নাম করে সিএনজিতে যাওয়ার সময় নেশা জাতীয় কিছু পান করায়। এত নদীয়া জ্ঞান হারায়। এসময় অচেতন ভিকটিমকে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে দন্ডিত তুষার, ইমন ও ইমরান তিন বন্ধু মিলে পালাক্রমে ধর্ষন করে। এসময় তাদের সহযোগী মেঘলা খাতুন ধর্ষনের ভিডিও ধারন করে। ঘটনাটি কাউকে জানালে ভিকটিম ত্রর ছোট ভাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেখায় এবং ওই ভিডিও ভাইরাল করার কথা বলে। পরবর্তীতে ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভিকটিমকে নিয়মিত ধর্ষণ করতে থাকে তারা। তাদের পাশবিক অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেলে ২০১৭ সালের ৬ আগষ্ট ভিকটিম হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এঅবস্থায় তাকে বগুড়ার সিএমএইচ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুস্থ হওয়ার পর ঘটনাটি তার বাবা-মাকে সব বলে দিলে তার মা রশিদা বেগম একই বছরের ২৪ আগষ্ট বাগাতিপাড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ওই চারজনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ চাজশীট দাখিল করলে আদালত সাক্ষ্য প্রমানের পর বুধবার অভিযুক্ত চারজনকে ১০ বছর করে আটক রাখার নির্দেশ দেন।
নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের স্পেশাল পিপি আনিছুল ইসলাম জানান, অভিযুক্তরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা শিশু হওয়ায় বিচারক এই আদেশ দিয়েছেন। অভিযুক্ত মোঃ তুষার আলী, মোঃ ইমন হোসেন @ রাকিবুল, মোঃ তুষার ইমরানকে নারী ও শিশু নির্যাতন দামান আইন, ২০০০ এর ৭/৯(৩) ধারায় আনা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হবে এবং আসামি মেঘলা খাতুনকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দামন আইন, ২০০০ এর ধারা ৭/৯(৩)/৩০ এর অধীনে আনা অভিযোগ এবং তদনুসারে, তাদের প্রত্যেককে ১০ (দশ) বছরের মেয়াদের জন্য আটক করা হয়েছে। অভিযুক্ত মোঃ তুষার আলী, মোঃ ইমন হোসেন @ রকিবুল, মোঃ তুষার ইমরান ও মেঘলা খাতুনকে এখন নাবালক হলে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অন্যথায় তাদের সংশ্লিষ্ট কারাগারে পাঠানো হবে।